রাজশাহীর বাঘার পদ্মায় ইলিশ ধরা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বৃহস্প্রতিবার মধ্যরাত থেকে। তারপর থেকে জেলেরা জাল নৌকা নিয়ে ইলিশ ধরতে ফের পদ্মা নদীতে শরু করেছে। ফলে জেলেদের মধ্যে প্রান চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
জানা যায়, ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে শরু করে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাঘার পদ্মা নদীতে ২৬ কিলোমিটার এলাকা ২২ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে এ সময় মাছ ধরা সংরক্ষণ, ক্রয়, বিক্রয় পরিবহন, বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ ছিল। ফলে দীর্ঘদিন মাছ ধরা থেকে জেলেরা বিরত ছিলেন।
চকরাজাপুর গ্রামের জেলে ওলিউর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর বর্তমানে পদ্মা নদীতে ছোট বড় দিয়ে অর্ধশতাধিক জেলে মাছ শিকার শুরু করছেন। বর্তমানে তিনি পদ্মা নদীর মধ্যে প্লেনপাড়া এলাকায় মাছ শিকার করছেন। তিনি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ২০ কেজি ইলিশ ধরেছেন। এ ছাড়া সবাই মিলে প্রায় ৪০০-৫০০ কেজি ইলিশ ধরেছেন।
বাঘা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ১ হাজার ৩০৭ জন জেলে রয়েছে। এরমধ্যে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৯৩৮ জন। পদ্মা নদীর আশপাশে চকরাজাপুর নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১২১ জন, মনিগ্রাম এলাকায় ৬০ জন, পাকুড়িয়ায় ৬০ জন, গড়গড়ি এলাকায় ৪০ জন ও বাঘা পৌর এলাকায় ৩০ জন। মোট ৮২৫ জন জেলেকে ২০ কেজি করে ভিজিএফ এর চাল ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে।
আলাইপুর গ্রামের জেলে জহুরুল ইসলাম, চকরাজাপুর গ্রামের আবদুর রব খাঁ, আফজাল হোসেন, মহিদুল ইসলাম বলেন, শিকারকৃত মাছের মধ্যে ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের মাছ ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫০-৪৫০ গ্রাম ওজনের মাছ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়েছে। এই মাছগুলো ফড়িয়াররা ক্রয় করে বিভিন্ন এলাকায় হাট-বাজারে ও গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে।
এদিকে ২২ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় ৪০টি অভিযান, ৯টি মোবাইল কোট, দুটি মামলা ও চশরাজাপুরের আবুল শেখ, তোফা শেখ, মুজির মোল্লা, আকবর ব্যাপারি, রাজ্জাক প্রামানিক, মজের মোল্লা, ৬ জেলের ২৪ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, চকরাজাপুর ইউনিয়নটি পুরোটা পদ্মা নদীর মধ্যে। এই ইউনিয়ন ১৫টি চর নিয়ে গঠিত। অধিকাংশ সময় তারা মাছ ধরে সংসার চালায়। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কষ্টে দিন গেলে সরকারী কিছুটা সহযোগিতা পেয়ে উপকৃত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞার পর মাছ ধরতে পেয়ে তাদের মধ্যে কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে।
বাঘা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করার দায়ে ২২ দিনে ৩৭ লক্ষ টাকা মূল্যের ১ লক্ষ ৬১ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ১৮ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত জালগুলো উপজেলার মীরগঞ্জ, আলাইপুর বিজিবি ক্যাম্প, গোকুলপর, আলাইপুর পদ্মা নদীর ঘাট এলাকায় জনসম্মুখে পুড়িয়ে দেয়া হয়। মাছগুলো স্থানীয় এতিমখানায় দেয়া হয়।