ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও গফরগাঁও উপজেলার কয়েকটি গ্রামে গত তিনদিনে খ্যাপা শিয়াল ও কুকুর অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষকে কামড়িয়ে আহত করেছে। ঘটনাগুলো ঘটেছে গত বুধবার থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে।
আহতরা বেশির ভাগই বৃদ্ধ, নারী ও শিশু। এদের মধ্যে অনেকই ময়মনসিংহ নগরের সূর্যকান্ত (এসকে) হাসপাতালে জলাতঙ্কের চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ও উচাখিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে হঠাৎ করে শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে গেছে।
গত তিনদিনে উজান চরনওপাড়া, যাদুয়ারচর, কুটেরচর, কান্দাপাড়া, মাইজপাড়া ও উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী মরিচারচর গ্রামের কমপক্ষে ২০জনকে শিয়ালে কামড়িয়ে আহত করেছে। ফলে ঐ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিয়ালের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই লাঠি হাতে চলাফেরা করছেন। বিশেষ করে রাতে শিশু ও বৃদ্ধরা ঘরবন্দী দিন কাটাচ্ছেন।
উজান চরনওপাড়া গ্রামের শফিউল আলম জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে শিয়াল তাকে কামড়িয়েছে। কুলসুম আক্তার (৪০) নামের এক নারী জানান, রাতে প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে শিয়াল তাকে কামড়ে আহত করেছে। কান্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গনি (৪০) জানান, স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিয়াল তার হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। এতে তিনি গুরুতর জখম হন। এ ছাড়া আবদুল খালেক (৫০), আলাল উদ্দিন (৪৫), তসলিমা খাতুন (৪০), ফজিলা আক্তার (২৮), আমেনা খাতুন (৪৩), হাজেরা খাতুন এবং আরও এক নারী শিয়ালের কামড়ে আহত হয়েছেন।
অপরদিকে জেলার গফরগাঁওয়ের কয়েকটি গ্রামে কুকুরের কামড়ে শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ কাচারীপাড়া, কান্দাপাড়া, মদিপাড়া, জিরাতিপাড়া, মড়লপাড়া, নতুনবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক না থাকায় আহত ব্যক্তিরা বিপাকে পড়েছেন।
আহত ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিনে দুইটি পাগলা কুকুরের কামড়ে চরমছলন্দ বাজার এলাকার বাবুল মিয়া (৩৫), ফারুক (১২), ইলিমা (১২), চরমছলন্দ কান্দাপাড়ার রিফাত (৩), মোখলেছ (৪), শেখ রাসেল (৩২), একতা বাজার এলাকার নাছিমা আক্তার (২৮), চরমছলন্দ মড়লপাড়ার তাওহীদ (৭), ছায়েম (৪), মরিয়ম (২), মঞ্জুরুল (৫৫), রবি (১৭), চরমছলন্দ মদিপাড়ার ঝর্না বেগম (৪৫), চরমছলন্দ কাচারীপাড়া রাজিয়া বেগম (৬০), তরিকুল ইসলাম (৪৮), মমিন (২৭) আহত হয়।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল হুদা খান জানান, শিয়ালের কামড়ে আহত হয়ে গত দুই দিনে অনেকেই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টির্যাবিস ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক) সরবরাহ না থাকায় আহত ব্যক্তিদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবু সায়েম জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ওইসব এলাকায় কয়েকটি শিয়াল কুকুর র্যাবিস রোগে (জলাতঙ্ক) আক্রান্ত। শিয়াল বা কুকুর এ রোগে আক্রান্ত হলে বিনা প্ররোচনায় মানুষজনকে কামড়াতে পারে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ সূর্যকান্ত (এসকে) হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. প্রজ্ঞানন্দ নাথ জানান, গত কয়েকদিনে এখান থেকে শিয়াল কুকুরে কামড়ানো অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।