বাংলাদেশকে কোন দেশের প্রধান ভালোবাসে না, বাংলাদেশের মানুষকেও না। তবু বাংলাদেশ বাইডেন নির্বাচিত হলে উচ্ছাসে ফেটে পরে, নেচে ওঠে এই দেশের সরল মানুষগুলোর একটি অংশ। তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি ছাত্র-যুব-জনতার গত ২ দিনের উচ্ছাস থেকে। এত কিছুর পরও করোনার গত ৮ মাসে সকল দেশ বাংলাদেশকে করুণা দেখিয়ে অনুদান না দিয়ে কেবলই ঋণ দিয়েছে। যে ঋণের বোঝা যত দিন যাবে বাড়তেই থাকবে বরাবরের মত।
স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এসে সারাদেশে সরকারি অর্থ লুটপাট-ত্রাণের সহায়তার অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি চলছে ছাত্র সমাজকে মূর্খ করে রাখার ষড়যন্ত্র। সমসাময়িক গণমাধ্যমগুলো বলছে ধর্ষণ-নির্যাতন-খুন-গুম বাড়ছে। বলছে- কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে গত ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) দেশে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছে। এ সময় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ ৪২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে। এরমধ্যে করোনা ধাক্কার প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এসেছে ২৮৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার এসেছে। চিরসত্য এটাই যে, দেশের মানুষের জন্য নূন্যতম আন্তরিকতা না পেলেও দাতা দেশগুলোর কাছ থেকে কেবল আমাদের সরকার করোনা সংকটের চিত্র তুলে ধরে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ-সহায়তা নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৭২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বিদেশি ঋণ এসেছিল। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি এসেছে মহামারীকালের চার মাসের (মার্চ-জুন) মধ্যে। এই সময় এসেছে ৩৭৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। বাকি ৩৫০ কোটি ৩২ লাখ ডলার এসেছিল আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি)। গত জুনে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ-সহায়তা দিয়েছে দাতারা। এই সময় এক মাসে ১৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে সর্বোচ্চ ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের ঋণ এসেছিল ২০১৮ সালের জুনে। গত অর্থবছরের মার্চে ১০১ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ এসেছিল। এপ্রিল ও মে মাসে পায় যথাক্রমে ৩০ কোটি ৬২ লাখ ও ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে কমে ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে আসে। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর সেপ্টেম্বরে এসেছে ৮৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১৩০ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সংস্থাটি ৪০ কোটি ডলার দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক করোনা ভ্যাকসিন বাবদ বাংলাদেশের জন্য ৭ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে। করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত জুনে সরকারকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দিয়েছে ১৩২ কোটি ডলার। এরমধ্যে করোনা সংকট মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ৬০ কোটি ৩০ লাখ ডলার দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এডিবি। বাকি ঋণ-সহায়তা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জাইকা), এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) এবং অন্যান্য দেশ ও সংস্থা দিয়েছে।
ঋণের রাস্তা থেকে সরে আনতে হবে বাংলাদেশকে। স্বাবলম্বি হতে হবে বাংলাদেশকে। এমন প্রত্যয়-প্রত্যাশায় অগ্রসর হই আমি-আমরা। যারা নতুন প্রজন্মের প্রকৃত প্রতিনিধি দেশকে তারা ভালোবাসে বায়ান্নর সালাম-বরকত-রফিক জব্বারের মত; ভালোবাসে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর-হামিদুর-জাহাঙ্গীরের মত। যে কারণে নির্মমতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে থাকতে তৈরি তারা; তারা ঐক্যবদ্ধ দুর্নীতিরোধে। একদিকে ঋণ আসে, সেই ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে টেন্ডার দিয়ে লুটপাট করছে, দেশকে দেউলিয়া করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠছে। এই ষড়যন্ত্রকে রুখতে হলে লোভ মোহহীন নতুন প্রজন্মকে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বরাবরের মত।
ঋণের বোঝায় ডুবে যাচ্ছে বাংলাদেশ যখন; তখন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির ক্ষমতার পরিবর্তনে সারা বিশ্বে নানা হিসাবনিকাশ চলছে। নতুন সরকার ক্ষমতা নিলে ট্রাম্পের রক্ষণশীল নীতিতে পরিবর্তন আসবে। এতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো লাভবান হবে বলে প্রাথমিক অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। গণমাধ্যম বলছে- বিশেষ করে এর আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে অকার্যকর করে দেয়ায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু বাইডেন রক্ষণশীল নীতি থেকে সরে আসবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। আর এটি বাস্তবায়ন হলে রফতানি, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সহায়তা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। একথা সত্য যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সাধারণভাবে অর্থনীতিতে যে সংরক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করে আসছিলেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে তার প্রভাব পড়ত। বাইডেন ক্ষমতায় এলে তার কিছুটা পরিবর্তন হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে পরোক্ষভাবে হলেও উপকৃত হবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ট্রাম্পের কারণে বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পলিসি নিচ্ছিল, তাতে পরিবর্তন আসবে। যেমন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে সকল সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নীতি আদর্শচ্যুত হলেও বিশ^ব্যাপী সকল দেশের সকল সরকার প্রধান দেশের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর ভূমিকায় ছিলো সবসময়। যে কারণে বাইডেনের সবসময়ের সবসময়ের মূল বক্তব্য ছিলো- যুক্তরাষ্ট্র সবার আগে অগ্রাধিকার। সেখানেই বিনিয়োগ করতে হবে। ক্ষমতার পরিবর্তন এলে ওই নীতিতে পরিবর্তন আসবে। এতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসার পথ তৈরি হবে। তবে কতটুকু আসবে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, বিভিন্ন পলিসির ওপর বিনিয়োগ নির্ভর করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র যে ইন্দো-প্যাসেফিক স্টাডিজ নিয়ে আসছে, তাতে কোনো পরিবর্তন দেখি না। কারণ, চীনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান্তরালে এখানে কিছু করার চিন্তা করছে তারা। ফলে এটি অব্যাহত থাকবে। টিকফাসহ অন্যান্য চুক্তিতে ডেমোক্র্যাটরা শ্রমিক ইস্যুকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেবে। তাদের দলের মধ্যে সব সময়ই শ্রমিকের বড় প্রভাব থাকে। এতে বাংলাদেশের শ্রমিক ইস্যুতে মার্কিন চাপ কিছুটা বাড়বে। আর জিএসপি (বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার খাত) ইস্যুতেও তেমন কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। জিএসপি আবার খুব সহজে আমরা ফিরে পাব-সেটি মনে হয় না। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার হার বাড়বে। সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বিভিন্ন আলোচনা নির্মিত হয়েছে। যেমন- কয়েক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারী আর দেশজুড়ে দীর্ঘ সামাজিক সহিংসতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন।
আমরা দেখেছি যে, বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি সেই ধারা যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবাহিত হওয়া এবং জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময়ের সহিংস বিক্ষোভ বাইডেনের দিকে জনগনকে এগিয়ে আসতে বাধ্য করেছে বলেও আমি মনে করি। কেননা, বাইডেনের নির্দেশে-সুকৌশলী নির্দেশনায় তারা খুব হিসাব কষে এগিয়েছেন। বাইডেনকে যতটা সম্ভব কম জনসম্মুখে আসতে দেখা গেছে। প্রচারণার গতি এমন ছিল যাতে প্রার্থী ক্লান্তি থেকে অসাবধানতাবশত কিছু না করে বসেন। বাইডেন ক্যাম্প বরং ট্রাম্পকে তার মুখ খোলার সুযোগ দিয়েছে যা শেষ পর্যন্ত কাজে লেগেছে। এখানে কিছু বাইডেনকৌশলে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরকেও। শিখতে হবে কিভাবে বাইডেন ট্রাম্পের মত একজন টাকাওয়ালাকে কাবু করে ক্ষমতায় এসেছে-জানতেও হবে। যেমন- আর যেই হোক ট্রাম্প নয় : নির্বাচনের দিনটির এক সপ্তাহ আগে জো বাইডেন ক্যাম্প তাদের সর্বশেষ টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করে। গত বছর জো বাইডেন প্রার্থী হিসেবে যখন মনোনীত হন এবং যেদিন তার প্রচারণা শুরু করেন সে সময়কার বক্তব্যের সঙ্গে এ বিজ্ঞাপনের বক্তব্যে বেশ লক্ষণীয় সাদৃশ্য ছিল। এ নির্বাচনকে উল্লেখ করা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আত্ম রক্ষার যুদ্ধ’। ট্রাম্পের চার বছরকে বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলার সময়কাল বলে উল্লেখ করা হয়। ট্রাম্পের সময় যে মেরুকরণ হয়েছে, যে ধরনের বিতর্কের জন্ম তিনি দিয়েছেন মার্কিন জনগণ তা থেকে মুক্তি চেয়েছে। তারা শান্ত ও অবিচল একজন নেতা চেয়েছেন। ভোটারদের অনেকেই বলেছেন তারা ব্যক্তি হিসেবে ট্রাম্পের আচরণে রীতিমতো বীতশ্রদ্ধ। বাইডেন ক্যাম্প ট্রাম্পকে এমনভাবে উপস্থাপন করে- এ নির্বাচন যেন দুই প্রার্থীর মধ্যে যোগ্য একজনকে বেছে নেয়ার নির্বাচন নয়। এটি যেন ট্রাম্প সম্পর্কে একটি গণভোটের মতো বিষয়, এমন কৌশল ছিল বাইডেনের প্রচারণায়। জো বাইডেন কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নন, এমন বার্তা দেয়া হয়েছে ভোটারদের। মধ্যপন্থী অবস্থান : প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার লড়াইয়ে জো বাইডেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স, যিনি বামপন্থী হিসেবে পরিচিত। আর একজন ছিলেন এলিজাবেথ ওয়ারেন। যার ক্যাম্পেইনে বেশ ভালো অর্থের জোগান ছিল। এ দু’জনের যে কোনো সভায় রক গানের কনসার্টের মতো মানুষ জড়ো হতো। কিন্তু জো বাইডেন উদারপন্থীদের চাপের মুখেও মধ্যপন্থী অবস্থান বজায় রেখেছেন। তিনি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, বিনামূল্যে কলেজ শিক্ষা ও ধনীদের জন্য বেশি কর আরোপ করার নীতিগুলোতে সমর্থন দেননি। এর ফলে তিনি মধ্যপন্থী ও অসন্তুষ্ট রিপাবলিকানদের কাছে টানতে পেরেছেন।
এত এত রাজনীতি আর অর্থনীতির কথার ভীড় ঠেলে একটা কথা স্পষ্ট হয়েছে নিশ্চয়ই। আর তা হলো- ক্ষমতায় আসার এবং থাকার খেলায় মেতে থাকা বাংলাদেশের রাজনীতির ৪৯ বছরে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তখন সে সরকার নিজের দল-প্রশাসনকে হাতে রাখার জন্য নির্মমতায় মেতে উঠেছে, করেছে সীমাহীন দুর্নীতি। দেখিয়েছে আগের আগের সরকারের অন্যায়-অপকর্ম; আর তারই ফাঁক গলে অতিতের রেকর্ড ভেঙ্গেছে অন্যায়ের রাস্তায় অগ্রসর হয়ে। অথচ বাইডেনদের দেশে স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি হয়েছে সবসময়। যখন যে-ই আসুক না কেন, কেবল করেছে দেশ-মানুষ-সমাজসেবা। যে কারণে তারা ঋণ দেয় আর আমরা হাভাতের মত তাকিয়ে থাকি সেই ঋণের আশায়! ‘আহারে বাংলাদেশ! শেষ হবে না এই সব বড় বড় বুলির দিন-কমবে না ঋণ...’ ভাবতে ভাবতে ঘুমুতে যাই, ঘুমের মধ্যেও ভাবি। তাই দাবি আজ একটাই চলুন নিবেদিত হই দেশের জন্য। দেশের অর্থনীতিকে অন্তত শক্তিশালী করার চেষ্টা করি দুর্নীতি-অর্থপাচার আর ক্ষমতার দম্ভ না দেখিয়ে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি