অর্থনীতির পরিভাষায় Wants are unlimited অর্থাৎ অভাবের শেষ নেই। যে যত পায় আরও চায়। তেমনি ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, আধিপত্য, আশা আকাংখারও সীমা পরিসীমা নেই। তাই আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন সীমা লংঘনকারীকে পছন্দ করেননি। সীমা লংঘনকারীদের শাস্তি এ দুনিয়াতে যেমন কিছু দেখা যায় তেমনি আখেরাতেও চরম শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস ও সোনামি এর বড় উদাহরণ। মোদ্দা কথা, যে যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, একদিন আগে আর পরে শাস্তি তার পেতেই হবে। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। ফেরাউন (রামেসিস), নমরূদ, কারুন, সাজ্জাদ, আবু জাহেলসহ আরও অনেকেরই চরম শাস্তি ইহারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত। তারপর ইতিহাসে রয়েছে এর অজ¯্র উদাহরণ, উপমা ও দৃষ্টান্ত। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর সীমাহীন ও স্বাধীনতার পর রক্ষিবাহিনী মানুষকে যথেষ্ট হয়রানী ও নির্যাতন করেছে। তাদের পরিণতি কারও অজানা নহে। এমনকি জল্লাদ ইয়াহিয়া খান মদ্যপ অবস্থায় মৃত্যুর সময় কাতরাতে থাকা অবস্থায় এক ফোটা পানিও পান করতে পারেনি। নরাধম ইয়াজিদের মৃত্যুর পর তার লাশ কোথায় কবর দেয়া হয়েছে আজও কেহ জানতে পারেনি। Sinner can never go unpunished অর্থাৎ পাপী কখনও শাস্তি ছাড়া বিদায় হয় না। যা বলে, লিখে শেষ করার মতো নহে।
ঢাকার ৭ আসনের এমপি হাজী সেলিম ও সেলিমের পুত্র রাজধানীর ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নোয়াখালীর ৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল হক চৌধুরীর জামাতা ইরফান সেলিমের দাপট ক্ষমতার অপব্যবহার, অপকর্ম, বাহাদুরী আজ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। সামনে আরও কিছু বের হলে তা হয়তো সময়ই বলে দিবে। ইতোমধ্যে ইরফান সেলিমের অপকর্ম, স্বৈরাচারিতা ও দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে গিয়ে র্যাবের গোয়েন্দা জালে ধরা ইরফান সেলিমের পিতা এমপি হাজী সেলিমের সীমাহীন স্বৈরাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, জায়গা দখলের তথ্যচিত্র, যা সিনেমা ও নাটকের কাহিনীকেও হার মানায়। তা যেমন কাহারও কাম্য নহে তেমনি দুকথা লিখে শেষ করার মতো নহে। তা যেন এক ইতিহাস। পিতা পুত্রের আদিপত্যকে ধরে রাখার জন্য গড়ে তোলে এক বিশাল পেটুয়া বাহিনী এবং বিভিন্ন ভূঁইফোড় সংগঠন ও সমিতি। জানা যায়, এমন অন্তত ১০টি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সমিতি রয়েছে হাজী সেলিম ও পুত্র ইরফান সেলিমের নিয়ন্ত্রনে। শ্রমিক, যুবক, ব্যবসায়ী, সচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের নামে গঠন করা হয় এসব সংগঠন। উল্লেখযোগ্য হলো দেবীদাস ঘাট যুব ঐক্য সংগঠন, দেবীদাস ঘাট সচেতন নাগরিক সমাজ, দেবীদাস ঘাট সমাজকল্যাণ সংসদ, নলগোলা তরুন সংঘ, টালি স্ট্যান্ড সরদার ও লেবার সংগঠন, দেবীদাস ঘাট বাক্স প্রস্তুতকারক শ্রমিক লীগ, চকবাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, দেবীদাস ঘাট মুসলীম বয়েজ সোসাইটি এবং মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। স্থানীয় মসজিদ কমিটির পদেও রয়েছে এসব সংগঠনের সদস্যরা। এসব সংগঠনের আবার এলাকায় শাখা উপশাখাও রয়েছে। এসব সংগঠনের অনেকেই ইরফান সেলিমের মুক্তির দাবীতে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টাঙ্গানো, সাংবাদিক সম্মেলনসহ নানা ধরণের প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রে জানা যায়। ইতোপূর্বে হাজী সেলিম ও তার পুত্র ইরফান সেলিমের নেতৃত্বে ও রাজনৈতিক পদবীধারী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশাল আকারে এসব তথাকথিত সংগঠনের ব্যানারে প্রেসক্লাব ও ঢাকার বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে ভুরিভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠান করতে কম দেখা যায়নি। যা নিয়ে এখন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককিছু প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। যা ভোক্তভোগী ছাড়া অনেকের পক্ষে অনুধাবন করা বাস্তবিকই মুশকিল।
তাতে রয়েছে এমপি পুত্র ইরফান সেলিমের অপকর্ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবাহর, নৌবাহিনীর লেঃ ওয়াসিফকে মারধর, হত্যার হুমকি, স্ত্রীকে নাজেহাল, গালিগালাজ, টর্চার সেল, অগ্রণী ব্যাংকের অফিস বোল ডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে দখল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল দখল করে মার্কেট নির্মাণ, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল, বধির স্কুলসহ অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদসহ স্বৈরাচারিতার পরাকাষ্টা। যা বর্ণনাতীত।
ইরফান সেলিমের আটকের পর চকবাজারে বিতর্কিত জমি দখলের পাশাপাশি পছন্দের ভবন, মার্কেট ও দোকান নিজেদের নামে নেয়ার ব্যাপারে এমপি সেলিম ও পুত্র ইরফানের বিরুদ্ধে অনেকের কাছ থেকে তা জানা যায়। যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। আরও জানা যায়, চকবাজারের আশিক ও মদীনা টাওয়ারে ছিল তাদের টর্চার সেল। এখানে ব্যবসায়ীদের নিয়ে নির্যাতন করা হতো। ভবন, জমি ও দোকানের প্রকৃত মালিককে টর্চার সেলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। চকবাজারের অতি পরিচিত জাহাজ বিল্ডিং দখলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
স্বাধীনতার আগে মৌলভীবাজারে ১৯ শতাংশ জায়গার ওপর অগ্রণী ব্যাংকের একটি দ্বিতল বিল্ডিং ছিল। স্বাধীনতার পূর্বে নির্মিত ভবনটি পুরাতন হওয়ায় কিছুদিন আগে নতুন ভবনে ব্যাংকের শাখা স্থানান্তর করা হয়। এই সুযোগে ব্যাংকটি গুঁড়িয়ে দিয়ে চলতি বছরের মে মাসে সেখানে মার্কেট করে এমপি সেলিম। সেখানে ব্যাংকের অনেক সরঞ্জাম ও কাগজপত্র লাপাত্তা ও নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষতি অপূরণীয় বলে অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করে থাকে। বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের স্কুলের জন্য সরকার ২০০৫ সালে রাজধানীর বুড়ীগঙ্গার তীরে সোয়ারিঘাটে জমি প্রদান করলে এমপি সেলিম সেখান থেকে বধির স্কুলটি উচ্ছেদ করে দেয়। সেখানে তার মালিকানায় একটি পেট্রোল পাম্প ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে তোলা হয়।
পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর ওয়াইজ ঘাটের ৮ ও ৯ নম্বর জি.এল পার্থ লেনে ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠা জমির ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হলটি আজও এমপি হাজী সেলিমের দখলে। জগন্নাথের ছাত্রদের দফায় দফায় আন্দোলন ও সরকারের উপর মহলের আশ্বাসের পরও হাজী সেলিমের কাছ থেকে হলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সব বাধা উপেক্ষা করে ২০০১ সালে হাজী সেলিম হলটির অবকাঠামো বদলে ফেলে স্ত্রীর নামে ১০ তলা বিশাল ভবন নির্মাণ করে। যা গুলশান আরা সিটি মার্কেট নামে পরিচিত। এই মার্কেটে ১০০০টি দোকান ঘর রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ পুরান ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, চকবাজর, মৌলভী বাজার এলাকায় সরকারি জায়গা জমিসহ নিরীহ মানুষের পতিত জায়গা জমি দখলই হচ্ছে সেলিম পরিবারের নেশা। ক্ষমতার দাপটে যাদের পেছনে তাকাতে হয়নি। যাকে ভূমিদস্যু না বলে ভূমি খেকো দানব, রাক্ষসও বলা চলে। এ সমস্ত এলাকায় অন্তত পাঁচ একর সরকারি জমি দখল রয়েছে ওই পরিবারের। যে জায়গাগুলো স্বর্ণের খনি হিসেবে পরিচিত। দখলকৃত জমিগুলোর একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালালেও আবার দখল নেয়া হয়েছে। দখল থেকে রেহাই পায়নি সাধারণ মানুষের জায়গা জমিও। জানা যায়, তাদের প্রভাব ধরে রাখতে পুরান ঢাকায় ২ শতাধিক অস্ত্রধারী ক্যাডার দাবিয়ে বেড়ায়। আর এ সমস্ত ক্যাডারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিত এমপি সেলিমের নির্দেশনায় তার পুত্র ইরফান সেলিম বলেও জানা যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন লালবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার প্রায় এক একর জমি দখল করে রড সিমেন্টের মার্কেট নির্মাণ এবং কালুনগর এলাকায় ১০ শতাংশ জমি দখল করে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীন নৌ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মালিকানাধীন কামরাঙ্গীরচরের এলাকার ১ একর জমি দখল করে গোদাম নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে হাজী সেলিম এমপি। এইসব স্থাপনার উদ্ধার অভিযান চালালেও পুণরায় আবার দখলে নেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও এমপি হাজী সেলিম ও তৎপুত্র ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। অর্থাৎ এমপি হাজী সেলিমকে অনেকেই পুরান ঢাকার জায়গা জমি দখলের দানব, বুড়ীগঙ্গা দখল ও বুড়ীগঙ্গা খেকো বলেও ভূষিত করে থাকে।
২৯/১০/২০ ইং একটি জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম ছিল হাজী সেলিম পরিবার একঘরে এবং কঠোর অবস্থানে সরকার। অপরদিকে ঐ সংখ্যায় সংবাদ প্রতিবেদনে লেখা ছিল “জনপ্রতিনিধিরা যত শক্তিশালী লোকই হোক না কেন অপরাধ করলে ছাড় নয়- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী”। এ সংবাদটি দেখে জনমনে যথেষ্ট আশার সঞ্চার হয়েছে। কারণ এ ব্যাপারে সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোরতার ঘোষনা বাস্তবিকই প্রনিধান যোগ্য ও প্রশংসিত। এর বাস্তবতায় প্রতিফলিত হবে এ কথার যথার্থতা কতটুকু ফলপ্রসুত হয়। অপেক্ষা না করেই আগেভাগেই আন্দাজের উপর এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য বা কমেন্ট না করাই প্রনিধানযোগ্য। দুদক এরইমধ্যে এমপি হাজী সেলিমের সম্পদের ব্যাপারে এখনই অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে একজন প্রথিতযশা কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট “ক্যাডার তন্ত্র দিয়ে গণতন্ত্র হয়না” মর্মে একটি কলম লিখেছেন। যা ০১/১১/২০২০ ইং রোববার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। যা পড়ে অনেকেরই যথেষ্ট উপলব্ধি করার সুযোগ রয়েছে। কি করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাতার তলে আশ্রয় নিয়ে কিভাবে পিতা ও পুত্র দলকে হেয় করে থাকে।
এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইরফান সেলিমকে ডিএসসিসির ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, ডিএসসিসির ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধর, হামলা, হত্যার হুমকি ও তার স্ত্রীকে নাজেহাল করার অভিযোগে
ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া সে মদ সেবন করার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে ১ বছরের কারাদ-ে দন্ডিত হয়ে কারাগারে রয়েছে। আরও বলা হয়, কাউন্সিলর ইরফান সেলিম অবৈধ ওয়াকিটকি রাখা ও ব্যবহারের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে ৬ মাসের কারাদ-ে দন্ডিত হয়েছে। যেহেতু স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর ধারা ২ (৩৭) এবং ধারা ১৩ (১) ক, ঘ নৈতিক স্থলন জনিত কর্মকান্ড, অপরাধ ও অসদাচরণের সামিল তাই তাহাকে (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর ধারা ১২ এর উপধারা ১ এর ক্ষমতা বলে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ২৫/১০/২০ ইং রোববার রাতে ঢাকার নীলক্ষেত থেকে বই কিনে স্ত্রীসহ মোটর সাইকেলে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেঃ ওয়াসিফ। ল্যাব এইড হাসপাতালের সামনে মোটর সাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ী। লেঃ ওয়াসিফ মোটর সাইকেলটি থামিয়ে গাড়ীটির গ্লাসে নক করে নিজের পরিচয় দিয়ে ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে চায়। তখন এক ব্যক্তি গাড়ী থেকে বের হয়ে তাকে গালিগালাজ করে। মোটর সাইকেলে লেঃ ওয়াসিফ গাড়ীটির পেছনে যায়। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে গাড়ীটি থামলে ওয়াসিফ তার মোটর সাইকেল নিয়ে গাড়ীটির সামনে দাঁড়ায়। তখন তিনচার জন লোক গাড়ী থেকে নেমে বলতে থাকে- তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী আজ বাইর করতাছি। তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বাইর করতাছি। তোকে আজ মেরেই ফেলব। এই কথা বলে তাকে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে এবং তার স্ত্রীকেও নাজেহাল করে থাকে। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে মর্মান্তিক এ রোষানল থেকে উদ্ধার করে থাকে।
এ ব্যাপারে ওয়াসিফ রাতেই ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি করে এবং সোমবার সকাল ৮টার দিকে একটি মামলা করে। মামলা নং- ১৬। এ ব্যাপারে সোমবার র্যাব ৩ ও ১০ দুপুর ১২টা থেকে ৮ ঘন্টা এমপি হাজী সেলিমের চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেনের চাঁন সরদার দাদা বাড়ীতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে লাইসেন্স বিহীন দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৮টি ওয়াকিটকি, ৫টি ভিপিএস সেট, একটি দূরবিন, শক্তিশালী ইলেক্ট্রিক ডিভাইস, ৪০০ পিস ইয়াবা, বিপুল সংখ্যক বিদেশী মদের বোতল ও অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। এদিকে ইরফান সেলিম ও সেলিমের দেহরক্ষি জাহিদকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ তাদেরকে রিমান্ড দেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করার কথা জানা যায়।
এতগুলো অপরাধ অল্পদিনে হয়নি। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কারণ নিহিত রয়েছে। তাছাড়া কোটি কোটি টাকার সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার সম্পদ দখল করে আলিশান বিল্ডিং, মার্কেট ও স্থাপনা করে বছরের পর বছর ধরে দখল করে থাকলেও কারও চোখে পড়েনি তা অবিশ্বাস্য বটে। যদিও এ সমস্ত জায়গা জমি দেখার জন্য এসিল্যান্ডসহ অনেক সরকারি দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থা রয়েছে। এ সবকিছুই অমার্জনীয় অপরাধ। এমপি হাজী সেলিমের সাথে এসব ব্যাপারে জড়িতদেরও আইনের আওতায় দ্বারস্থ করার কথা অনেকেই মনে করে থাকে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে সরকার ও জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করে এবং অন্যায়ভাবে বেআইনী অস্ত্র এবং ওয়াকিটকি ব্যবহার, মদ ও ইয়াবা রাখার মারাত্মক অপরাধের পরও যদি কোনো প্রভাবশালী অপরিনামদর্শী রেহাই পেয়ে যায় তবে সমাজে অপরাধ প্রবনতা বেড় যাওয়ারই কথা। তাই ইংরেজ লেখক অ্যাকটন বলে গেছেন, অনংড়ষঁঃব ঢ়ড়বিৎ পড়ৎৎঁঢ়ঃং ধনংড়ষঁঃবষু। আর অপরাধীর সমোচিত শাস্তি হলে তা দেখে অন্য অপরাধীরাও কোনো অপরাধ করতে গিয়ে অনেককিছু চিন্তা করবে। তাই যে কোন অপরাধ ও স্বৈরাচারিতা রুখতে হলে দরকার উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি। আইন হোক সবার জন্য সমান। আইনের ফাঁক ফোকড়ে যাতে কোনো অপরাধী মুক্তি না পায় তাহাই জনপ্রত্যাশা। অনেকেরই ভাবতে অবাক বিষ্ময় হতে হয়, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত কঠোর হওয়ার পরও এমপি হাজী সেলিম ও পুত্র ইরফান সেলিম এত দুর্নীতি ও অপরাধ করার সাহস পায় কোথায় ? নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেঃ ওয়াসিফ আহমেদ জীবন মরণ উপেক্ষা করে যে কাজটা করে গেছে ইহা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও অপরিনামদর্শীদের বিরুদ্ধে এমনি জোরালো প্রতিরোধ হলে আর কোনো প্রভাবশালী অন্যায়ভাবে কাহাকেও মারধর ও নৌবাহিনী/সেনাবাহিনীর লেঃ ও ক্যাপ্টেন বাইর করবে বলে অন্য কোনো সংস্থা ও ব্যক্তিকেও হুমকি দেয়ার সাহস পাবে না। তদোপরি কোন জায়গা, জমি ও সম্পদ ক্ষমতার বলে জোর করে দখল করার সাহস না পাওয়ারই কথা। থলের বিড়াল ইতোমধ্যে একটার পর একটা বেড়-তে শুরু করেছে। সামনে আরও চমক রয়েছে। এমনিভাবে ক্ষমতার দাপটে আরও কত মুখোশধারী সেলিম ও ইরফানরা অপকর্ম ও দুর্নীতি করে সমাজে কত যে হোয়াইট কালার ম্যান ও সাধুবাবা রয়েছে তার যেন শেষ নেই। তাদের অনুসন্ধান করে এখনই মুখোশ উন্মোচন করা উচিত। এদের কোনো দল নেই, আদর্শ নেই, দর্শন নেই। ওরা দেশ, জাঁতি ও জনগণের শত্রু। যতদিন পর্যন্ত এ সমস্ত দানবদের চিহ্নিত করে বের না করা যাবে ততদিন পর্যন্ত ইরফান সেলিমদের অপকর্ম, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারিতার প্রেতাত্মা সমাজে থেকেই যাবে। পরিশেষে উপসংহারে নির্ভিক সাহসীকতার জন্য নৌবাহিনীর অকুতোভয় লেঃ ওয়াসিফ আহমেদকে আবারও সানন্দ চিত্তে ধন্যবাদ জানিয়ে জনগণের প্রত্যাশানুসারে বলব, এমপি হাজী সেলিম ও সেলিম পুত্র ইরফানের মতো অপরিনামদর্শীদের মতো লোকদিগকে এমপি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন না দিলেই কি হয় না ?
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট