এ দেশ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও দলের নয়। এ দেশ সকলের। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও কল্যাণের এ দেশ। কোনো দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া ও জনস্বার্থ বিবর্জিত কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠির জন্য এ দেশ নয়। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়। সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, জনপ্রতিনিধিসহ আমরা সকলেই বাংলাদেশী। দেশের জন্য দরদ কারও চেয়ে কারও কম নহে। জনপ্রতিনিধির বড় যোগ্যতা owner shipmentality বা মালিকানাবোধ। তদোপরি দেশের সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সাংবিধানিকভাবে প্রজাতন্ত্র ও জনগণের সেবক। Government of the Peoples Republic of Banlgadesh। তাতে কাহাকেও অবজ্ঞা, অবহেলা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার আদৌ তাদের কোনো সুযোগ নেই। এ দেশের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা আসাম, হরিয়ানা, সিন্ধু ও পাঞ্জাবের কোনো অধিবাসি নহে। তাদেরকেও এমনিতেই তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য ও ক্ষমতার বশবর্তী হয়ে কোনো জনপ্রতিনিধি বা কাহারও হুমকি ধমকি দেয়ার সুযোগ নেই। সেদিন ৪৯ বছর আগেই পাঞ্জাতন বা অবসান হয়ে গেছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এখনও মানুষ ব্রিটিশের ১৯৬ বছরের শোষন, নির্যাতন ও পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষন, নির্যাতন ভুলে যায়নি। যা ইতিহাসের পাতায় আজও কালো অধ্যায় হিসেবে অক্ষয় হয়ে রয়েছে।
তারপরও দেখা যায়, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে বিভাজন পরিলক্ষিত হয়েই থাকে। কেউ করে ক্ষমতার দাপটে, আবার কেউ করে চেইন অব কমান্ডের দাপটে। যা কারও প্রত্যাশা নহে। কিছুদিন আগে মেজর (অবঃ) সিনহাকে পুলিশ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। যা সামরিক বাহিনীর তদন্তে বের হয়েছে। তারপর ২৫ অক্টোবর ঢাকার ডিএসিসির (Dhaka South City Corporation) ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমপি সেলিমের পুত্র, নোয়াখালি ৪ আসনের সাংসদের জামাতা ইরফান সেলিম ও তাহার সহকর্মীরা নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেঃ ওয়াসিফ আহমেদকে মারধর, কিল, ঘুষিসহ হত্যা করার কথা বলে। এমনকি তার স্ত্রীকেও নাজেহাল করে থাকে। ১২ অক্টোবর পাবনা জেলার ভেড়া উপজেলার সমন্বয় কমিটির সভা চলাকালে দুর্দান্ত প্রতাপশালী পৌর মেয়র উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাজিরহাট ও নগরবাড়ী ঘাট তার পক্ষের লোকদের ইজারা দেয়ার জন্য একটি লিখিত রেজুলেশান উপস্থাপন করে এবং তা অনুমোদন দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। ইউএনও বিষয়টি সরকারি নীতিমালা বিরোধী বলে মন্তব্য করলে সেই মেয়র তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে থাকে। গণমাধ্যমে এ ধরণের ঘটনা প্রায় সময়ই কমবেশী লক্ষ্য করা যায়। ওই মেয়র সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাই বটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করে থাকে।
১০ অক্টোবর ফরিদপুর চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর ৪ আসনের এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিসাইডিং অফিসার, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা (ডিসি) ও নির্বাচনে নিয়োজিত অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি, ধমকি প্রদর্শন করে থাকে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্দেশে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং বর্তমানে ওই এমপি নিক্সন জামিনে রয়েছে। শুধু এ ঘটনাগুলোই নহে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হচ্ছে
কোথাও কোথাও জনপ্রতিনিধিদের বেআইনী কথা বা অন্যায় আবদার না রাখার কারণে কর্মস্থল থেকে স্বেচ্ছায় পালাতে হচ্ছে অনেক কর্মকর্তাদের। কেউ কেউ তদ্বির করে অন্যত্র পোস্টিংও নিচ্ছে। অনেককে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
অনেক জনপ্রতিনিধি অনাস্থা ও বরখাস্তের পর আদালতের নির্দেশে পূনর্বহাল হয়ে সেই জায়গায় ফিরে এসে আবার প্রশাসনের সাথে নতুন করে বিভাজন ও জটিলতা সৃষ্টি করছে। অনেকে ধরাকে সরা মনে করে সর্বক্ষেত্রে গণতন্ত্রের চর্চা ব্যতিরেখে জনপ্রতিনিধি সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী কারও মধ্যেই মালিকানাবোধ জাগ্রত করা সঠিক নয়। আজ স্বার্থের অবলীলার কারণে সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যে বিভাজন ও জটিলতা লক্ষ্য করা যায় এ বিষয়ে উপমা, উদাহরণের যেন শেষ নেই। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, চাওয়া পাওয়া ও চাহিদা মানুষের স্বভাব চরিত। তারপরও এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে রয়েছে আইনি বাধ্যবাধকতা ও জটিলতা। যা এড়িয়ে অনেককিছু করা যায় না। এ প্রসঙ্গে সম্মানিত পাঠক পাঠিকাদের নিকট একটি উদাহরণ এ কলামে দৃষ্টি নিবন্ধ করছি।
রামায়ন যারা পড়েছেন তারা ভালো করেই জানেন, রাবন একজন কামুক ও ধর্ষক হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত হয়ে আছে মহাকাব্যের পাতায় পাতায়। একদিন দেববতী নামে পরমাসুন্দরী এক নারীকে বিষ্ণুর উপসনায় রত দেখে কামর্ত হয়ে পড়ে রাবন। ওই নারীকে চুলের মুঠি ধরে তাকে অপহরণের চেষ্টা করার সময় অগ্নিতে সমর্পন করে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করে দেববতী। এক বছরের অধিক সময় সীতা রাবনের কুক্ষিগত থাকলেও সীতার সম্ভ্রম হানি করেনি রাবন। এর উত্তর রামায়নে পাওয়া না গেলেও সনাতন ধর্মের আরেকটি মহাকাব্য মহাভারত থেকে জানা যায়, দিগি¦জয়কালেই রাবন রম্ভা নামক এক অপ্সরাকে দেখে মুগ্ধ হয়। বাসনা চরিতার্থে রাবন জোর করে ধর্ষণ করে রম্ভাকে। রম্ভা ছিল রাবনের সৎ ভাই কুবেরের পুত্র নলকুবের স্ত্রী। সেই হিসেবে রম্ভা রাবনের পুত্রবধুসম। সে কথা রাবনকে স্মরণ করিয়ে দেয় রম্ভা। ঠিক সে সময় রম্ভার স্বামী নলকুবেরও উপস্থিত সেখানে এবং রাবনকে অভিশাপ দেয়। নলকুবের রাবনকে বলে যদি সে (রাবন) আবার অন্য কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করে তাহলে তার মাথা বিস্ফোরিত হবে। সেই অভিশাপের ভয়েই রাবন সীতাকে অপহরণ করলে অসম্মান করেনি। আজ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একটা শ্রেণী রয়েছে যারা কোনো অবস্থাতেই স্বার্থের কারণে কারও কোনো দোহাই, নির্দেশ ও আইন কানুনের ধার ধারছে না বলেই তাদের মধ্যে এত বিভাজন, অনৈক্য, জটিলতা, বিশৃঙ্খলা, দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পর্যন্ত যথাযথভাবে পালন করছেনা ওরা। অনেক সময় দেখা যায় ওদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব একটার পর একটা রয়েই যাচ্ছে। যে কারণে নতুন নতুন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রেক্ষাপটে অনেকেই লাঞ্ছিত হচ্ছে।
প্রায় সময়েই গণমাধ্যমে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ইউএনও এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দ্বন্দ্ব। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও এমপি দ্বন্দ্ব। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। পৌর মেয়র/চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। যার ফলে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের মধ্যে লেজে গোবরের সৃষ্টি হয়। এমনকি একজন আরেকজনের মুখ পর্যন্ত দেখতে চায় না। যেন সাপে নেউলের সম্পর্ক। এখানে ভেবে দেখে উচিত উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা যেমন জনপ্রতিনিধি তেমনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও (ইউএনও) একজন বিসিএস পদবীধারী হিসেবে সরকার কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা। তিনি একদিকে ১ম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা প্রশাসনের সর্বেসর্বা বা ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত। তাকেও কোনো জনপ্রতিনিধি যেমন হালকা করে দেখার সুযোগ পরাহত। তেমনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারও (ইউএনও) জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর চেয়ারম্যান/মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান বা অন্য কাহাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। যদিও অনেক সময় চাওয়া পাওয়া স্বার্থের দ্বন্দ্বই মুখ্যম বলে অনেকেরই প্রকট ধারণা। এখানে ইচ্ছে করলেই আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে ইউএনও যেমন কারও অন্যায় আবদার রক্ষা করত পারে না, তেমনি কোনো সচেতন জনপ্রতিনিধি ও ইউএনওর নিকট কোনো অন্যায় আবদার বা চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করে কোনো বিভাজন, জটিলতা ও দ্বন্দ্বে জড়িত হওয়া কারও কাম্য নহে। তদোপরি উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের ভালোমন্দ দেখা ও তদারকিতে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য ও এলাকার জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য পদাধিকার বলে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টাও বটে। এখানে এমপির গুরত্ব অপরিসীম। তা কোনো অবস্থাতেই কারও বেমামান ভুলে যাওয়ার সুযোগ একেবারেই পরাহত। বনে থেকে বাঘ ও সিংহের সাথে গাধা ও হরিণের লড়াই যেন বেকুবের কান্ড ও ভূতের মুখে রামনাম, তেমনি উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের যে কোনে অবস্থানে থেকে এমপির সাথে বিরোধীতার জন্য বিরোধীতাও তথৈবচ। তবে এমপির ভুলভ্রান্তি ধরিেেয় দেয়ার অধিকার সবারই আছে। যা মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারেরই পর্যায়ভূক্ত। তদোপরি ভূমি খেকো হাজী সেলিমের মতো এমপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দোষের কিছু নহে। কুছ নেহি পরোয়া।
১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে সার্কেল কর্মকর্তা (উন্নয়ন) ছিলেন সার্কেল বা থানার কর্মকর্তা। মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন মহকুমার কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন জেলার কর্মকর্তা। এর আগে দেশের ৬০টি মহকুমা ও জেলার গভর্নর পদ্ধতি প্রবর্তন হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সেই সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন থানা কাউন্সিলের সদস্য। সার্কেল কর্মকর্তা (উন্নয়ন) ছিলেন পদাধিকার বলে থানা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল এইচ.এম এরশাদ ১৯৮৫ সালে এক ফরমানে (সামরিক আদেশ) প্রথমে থানা নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও) এবং কিছুদিন পর এ আদেশ সংশোধন করে উপজেলা ও থানা নির্বাহী অফিসারের (টিএনও) স্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও করা হয়। তখন সার্কেল কর্মকর্তা (উন্নয়ন) সার্কেল কর্মকর্তা রাজস্ব দুটি পদ এবং থানা নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও) পদ বাতিল করা হয়ে থাকে। উপজেলা পদ্ধতি বাতিলের বিরুদ্ধে ১৫ দল, ৭ দল ও ৫ দলীয় বাম জোট তীব্র আন্দোলন ও হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে থাকে এবং উপজেলাকে উপজ¦ালা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তারপরও এরশাদ ক্ষমতা বলে এসব কিছু আমলে না নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত প্রতিনিধির বিধান রাখে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়া হলে প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রের দায়িত্বে সমাসীন হন। ৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং উপজেলা পদ্ধতি বিলুপ্ত করে থাকে।
১৯৯৬ সালে ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয় এবং পুনরায় উপজেলা পদ্ধতি চালু করে থাকে। উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদ্ধতিটিও বহাল রাখে। সামরিক সরকার নির্দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ্ধতি চালু করলেও আওয়ামী লীগ পরবর্তী সময় দলীয় ব্যানারে উপজেলা নির্বাচন পদ্ধতি চালু করে থাকে।
১৯৮৫ সালে এরশাদ উপজেলা পদ্ধতি চালুকালে উপজেলা চেয়ারম্যানদিগকে ইউএনওর চেয়ে বেশী ক্ষমতা দিয়ে থাকে। এমনকি উপজেলাধীন সমস্ত অফিসগুলোকে উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতার মধ্যে আনা হয়। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থেকে শুরু করে উপজেলাধীন অন্যান্য কর্মকর্তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন বা এসিআর (Annual Confidential Report) দিতেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তদোপরি উপজেলার উন্নয়নেও মধ্যমনি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তখন ইউএনওর চলাচলের জন্য কোনো সরকারি পরিবহন না থাকলেও উপজেলা চেয়ারম্যানের চলাচলের জন্য একটি জীপ ছিল। ক্ষমতার ঐ বৈষম্য নিয়ে তখন ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে প্রায় সময়ই স্নায়ু যুদ্ধ বা দ্বন্দ্ব এবং বাদানুবাদের সংবাদ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তখন ডিজিটাল পদ্ধতি চালু না হওয়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়নি।
পরবর্তী সময় উপজেলা প্রশাসন, ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদে ক্ষমতার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। তাতে ইউএনওর তুলনায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতার পরিধি একেবারেই কমে যায়। এখন আর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের উপজেলার অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের এসিআর লেখাতো দূরের কথা সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়, কিছু ক্ষমতা, একটি জীপ ও অফিস ব্যবহার ছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের তেমন কিছু সুযোগ সুবিধা পরিলক্ষিত হয়নি। এমনও জানা যায় উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত জীপটির ফুয়েলও নাকি ইউএনওর স্বাক্ষরে পাস হয়। প্রথিতযশা একজন নিবন্ধকের ভাষায় বলা হয়, “বাপকাবেটা সিপাইকা ঘোড়া।”
ক্ষমতার পরিধি নিয়ে একসময় ইউএনও বা উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা যেমন উপজেলার চেয়ারম্যানদের প্রতি ক্ষুব্ধ ও বিরাগ ছিল, তা নিয়ে এখন উল্টো উপজেলা চেয়ারম্যানরা ইউএনওদের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরাগ ভাজনের কথা শুনা যায়। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য পদাধিকার বলে উপজেলার উপদেষ্টা হওয়াতে উপজেলা চেয়ারম্যান এলাকার টি.আর, কাবিখা, কাবিটা ও উন্নয়নের কাজেও হস্তক্ষেপ করার আদৌ কোনো সুযোগ নেই বলে জানা যায়।
যে কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একদিকে এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অন্য দিকে। তদোপরি ক্ষমতার বিভাজনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ক্ষমতার সাথেও উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারছেন না। তদোপরি উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের উপর জেলা প্রশাসকের ভূমিকাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ পরাহত। যত সম্ভব ইউএনও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে সাপে নেউলের সম্পর্ক তিরোহিত হয় ততই মঙ্গল। তা না হলে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে যে অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে ইউএনও সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক একীভূত হলে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পড়ে দ্বিশঙ্কু বিভাজন ও জটিতলার সমস্যা কোনদিকে ধাবিত ও চালিত হয় তা বলা বাস্তবিকই নিয়ন্ত্রণে রাখা স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসকের গুরুত্ব অপরিসীম বলা চলে।
মাননীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক এগিয়ে আসলে উপজেলা প্রশাসন, ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও আলামত অনেকাংশে তিরোহিত হয়ে সামনে এগিয়ে যাবে বলে অভিজ্ঞজনদের প্রত্যাশা। যদি তা না হয়, তবে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্য, পৌরসভার মেয়র/চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর, জিঘাংসা, অনাস্থার সংবাদ প্রায় সময়েই গণমাধ্যমে যেভাবে লক্ষ্য করা যায় তাতে সমন্বয়ই একমাত্র সমস্যার সমাধান। উপজেলা ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ঐক্য, সংহতি ফিরে আসুক এবং সকলের সমন্বয়ে উপজেলার উন্নতি, অগ্রগতি, প্রগতি, সমৃদ্ধি সামনে এগিয়ে চলুক ইহাই পাথেয়।
উপসংহারে বলব, এ নিবন্ধটি বিশেষ কোনো ইউএনও বা উপজেলা চেয়ারম্যানকে কেন্দ্র করে নয়। যা গতানুগতিক সমস্যা ও প্রেক্ষাপটেরই দিকদর্শন। বাংলাদেশ আমাদের গর্ব ও লাল সবুজের পতাকাবাহি সোনার বাংলা আমাদের অহংকার। আমরা আর কোনো অবস্থাতেই পেছনে তাকাতে চাই না। যে কোনো বিভাজন ব্যতিরেখে সামনে চলাই অনাবিল প্রত্যাশা। দেশ প্রেম ও জাতীয়তাবোধই আমাদের অনির্বান শক্তি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশক।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট