জামালপুরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ অভাবে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে জেলার প্রায় অর্ধশত বধ্যভূমি ও গণকবর। ১৯৭১ এর পাকহানাদার বাহিনী জামালপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে কিংরা নির্বিচারে গুলি করে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে শতশত লাশ মাটি চাপা দিয়ে ছিল। এসব হত্যাকান্ডে মুক্তিযুদ্ধের নির্মম বেদনা বিজরিত স্মৃতিচিহ্ন গুলো কালের বিবর্তনে মুছে যাচ্ছে। সংরক্ষণের অভাবে অসংখ্য গণকবর শনাক্ত করার পরও আজও মর্যাদাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জেলার বিভিন্ন মুক্তি যোদ্ধাদের দেয়া তথ্য মতে জামালপুরে প্রতিটি উপজেলার আনাচে কানাচে প্রায় অর্ধশতাধীক বধ্যভূমি গণকবর রয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধের প্রধান ঘাঁটি নামে খ্যাত বকশিগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর। কামালপুরে বর্তমান বিজিবি ক্যাম্পের সামনে স্মৃতিস্তম্ভের উত্তর পাশে বিশাল বধ্যভূমি, কামালপুর কছিম উদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়ির পশিচমে রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য গণকবর পড়ে রয়েছে। বকসিগঞ্জ খাদ্য গুদাম ও ডাক বাংলোর কাছাকাছি দুইটি বধ্যভূমি বেদখল হয়ে গেছে। ধানুয়া কামালপুর বাজারের পশ্চিমে ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে একটি বড় বধ্যভূমি বর্তমানে পুকুরে পরিনত হয়েছে। বকশিগঞ্জ এনএম উচ্চবিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে ৭১-এর মৃত্যুকুপ নামে পরিচিতি ছিল তা সংরক্ষণের অভাবে সেই বধ্যভূমিটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। বকশিগঞ্জের পুরাতন গো-হাট একটি গণকবর সংরক্ষণের অভাবে আবাদি জমি ও পুকুরের সঙ্গে বিলীন হতে যাচ্ছে। উলফাতুননেছা সরকারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের হলররুম ছিল টর্চারসেল। বকসিগঞ্জের মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, কামালপুর উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পার্শ্বে প্রায় বেশ কিছু গণকবর অরক্ষিতবস্থায় রয়েছে।
জামালপুর পৌর শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের তীর সংলগ্ন শ্মশানঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাগামী লোকজনদের ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হতো। জামালপুর পৌর শহরের বনপাড়া এলাকার ফৌতি গোরস্থানে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিপাগল মানুষের লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল, পিটিআই ও ওয়াপদা রেস্ট হাউজ,পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় ছিল পাক-হানাদার বাহিনীর নির্যাতনি ক্যাম্প। এ জায়গা গুলো চিহ্নিত করা হলেও সংরক্ষণ করা হয়নি আজো। দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনের লোকোসেড, রেলস্টেশন সংলগ্ন জিআরপি থানা,আলেয়া মাদ্রাসা, জিল বাংলা চিনিকল, দেওয়ানগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, কাঠারবিলের গয়ারডোবা, ফারাজী পাড়া, পুরাতন বাহাদুরাবাদ ঘাটে এসব স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনী ক্যাম্প ছিল। সরিষাবাড়ি উপজেলার পিংনা বারইপটল, পালপাড়া ও জগন্নাথগঞ্জঘাটে রয়েছে অসংখ্য গণকবর। গণকবর হিসেবে পরিচিত ইসলামপুরের কুলকান্দি খান পাড়া, পৌর গোরস্থান। মেলান্দহ উপজেলায় রয়েছে অনেক গণকবর ও টর্চারসেল। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব গণকবর। মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে না এসব গণকবর ও বধ্যভূমির সঠিক ইতিহাস। তাই এসব মুক্তিযোদ্ধা গণকবর বধ্যভূমি স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণের জন্য দাবী জানিয়েছেন জেলাবাসি।