এবার উচ্চ আদালতের আদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তার আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে কখনোই এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে সারাদেশের ভোক্তারা এলপিজি ক্রয়ে ক্রমাগত প্রতারিত হচ্ছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশ পেয়ে বিইআরসির পক্ষ থেকে এলপিজি বিপণন কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। আর এলপিজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে কমিশন আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে গণশুনানির দিনও নির্ধারণ করেছে। পর্যায়ক্রমে ১৪, ১৭ এবং ১৮ জানুয়ারি গণশুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরাসরি অথবা অনলাইনে ওই শুনানি হবে কিনা তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সরাসরি গণশুনানিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। বিইআরসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতার পাশাপাশি কাঠের অপ্রতুলতার জন্য এখন গ্রামে-গঞ্জেও এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। শুধু রান্নার জ্বালানিই নয়, গাড়ির জ্বালানি হিসেবেও এলপিজি ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে এখন থেকেই ভোক্তার অধিকারের চিন্তা না করা হলে একটি পক্ষের পকেটে চলে যাবে সব মুনাফা। অভিযোগ রয়েছে প্রতিবেশী দেশের পশ্চিমবাংলার চেয়েও এদেশে এলপিজির দর কেজিপ্রতি অন্তত ৩০ টাকা বেশি। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ভোক্তা এবং বিপণন কোম্পানির মধ্যে থাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা ওই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। আবার এলপিজির দামও নির্ধারণ করা হচ্ছে না। তাতে করে এলপিজি ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামাফিক দরে এলপিজি বিক্রি করছে। সরকারি এলপিজি বিতরণ কোম্পানি এলপিজি লিমিটেড ৭৫০ টাকা দরে এলপিজি বিক্রি করে। তবে তা মোট এলপিজি সরবরাহের মাত্র এক ভাগ। যার প্রধান ক্রেতা আবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে তাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব ফেলা সম্ভব হয় না। এলপিজির বোতলের গায়ে একটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণী অঙ্ক যোগ করে দিতে চাইলেও বেসরকারি বিক্রেতারা তাতে সম্মত হয়নি। তাতে করে এক এক কোম্পানির এলপিজির দাম বাজারে এক এক রকম।
সূত্র জানায়, গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণের জন্য কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) একটি রিট আবেদন করে। ওই রিটের প্রেক্ষিতে আদালত বিইআরসিকে গণশুনানি করে এলপিজির দাম নির্ধারণের আদেশ দেয়। কিন্তু কমিশন ওই আদেশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিপালন না করাতে উচ্চ আদালত বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিপণন কোম্পানির কাছে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি গণশুনানির দিনও নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। মূলত আদালত অবমাননার রুল থেকে বাঁচতেই তড়িঘড়ি করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তবে আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার দিন থেকে এতো অল্প সময়ে এলপিজির দাম নির্ধারণ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিপিসির এলপিজি লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান জানান, বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। বিইআরসি চিঠিতে লিখেছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে। সেজন্যই প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে এলপিজি অপারেটরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতা আজম জে চৌধুরী জানান, গত মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে বিইআরসিকে একটি প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়েছে। সেখানে কারিগরি অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফলে একবারে দাম বৃদ্ধি করলে চলবে না। প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে হবে। বিইআরসি তো একটি দাম নির্ধারণ করে বললে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তারা সেটি করে না। আর এলপিজির দাম বৃদ্ধির জন্য যে প্রবিধানমালা প্রয়োজন বিইআরসির তো তাই নেই। ফলে দাম বৃদ্ধি কতটা আইনসিদ্ধ হবে সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল জানান, এলপিজির দাম নির্ধারণের জন্য বিইআরসির পক্ষ থেকে বিপণন কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর কমিশন প্রস্তাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কবে ওই চিঠি বিপণন কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। গণশুনানির জন্য একটি সিডিউল তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিইআরসি শুনানি করতে চায়। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে কোনো পক্ষ গণশুনানিতে আপত্তি জানালে কমিশন কি করবে সে বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।