দেশে দিন দিন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশে এলপিজির গ্রাহক সংখ্যা ৪০ লাখের কাছাকাছি। কিন্তু ব্যবহার বিধি না মানাতে আশঙ্কাজনক হারে দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে প্রাণ ও সম্পদহাণির ঘটনাও। এমন পরিস্থিতিতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারে গ্রাহকদের সতর্কতায় মাঠে নেমেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, সচেতন হলেই ৫০ ভাগ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেজন্য গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচারসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এলপিজি ব্যবহারের ৭টি নির্দেশনা মানলেই দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর ওসব নির্দেশনাগুলো হচ্ছে রান্না শেষে চুলা বন্ধের সঙ্গে সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ অবশ্যই বন্ধ করা। কারণ অনেকে রান্নার পর চুলা বন্ধ করলেও রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করে না। ফলে চুলা এবং সিলিন্ডারের মাঝের পাইপে কোন ছিদ্র থাকলে গ্যাস বের হয়ে ঘরে জমার আশঙ্কা থাকে। এলপিজি যেহেতু বাতাস থেকে ভারি তাই সেটি উপরের দিকে উড়ে না গিয়ে ঘরের মেঝেতে জমা হয়। তারপর চুলা জ¦ালাবার জন্য দিয়াশলাই জ¦ালালেই ভয়াবহ বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া গ্যাস দিয়ে ঘর ভর্তি হয়ে থাকলে ইলেক্ট্রিক সুইচ থেকেও অনেক সময় স্পার্কের কারণে দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কাে থেকে যায়। সেজন্য রান্না শুরুর আধাঘণ্টা আগেই ঘরের দরজা জানালা খুলে দিয়ে ফ্যান চালিয়ে দেয়া প্রয়োজন। যাতে বাতাসে ঘর থেকে এলপিজি বের হয়ে যাবে। তাছাড়া চুলা থেকে অনেক দূরে বায়ু চলাচল করে এমন জায়গাতে এলপিজি সিলিন্ডার রাখতে হবে। অনেকে চুলার কাছে আবদ্ধ জায়গায় এলপিজির সিলিন্ডার রাখে, যা বিপজ্জনক। তাছাড়া যদি কখনো গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায় তখন সব থেকে বেশি সতর্ক হওয়া জরুরি। ওই সময় দ্রুত দরজা জানালা খুলে দিতে হবে। দিয়াশলাই জ¦ালানো যাবে না। ইলেক্ট্রিক সুইচ মোবাইল খোলা এবং বন্ধ করা যাবে না। এলপিজি সিলিন্ডার সব সময় খাড়াভাবে রাখতে হবে। কোন সময় উপুড় বা কাত করে রাখা যাবে না। সিলিন্ডার থেকে সব সময় চুলা উঁচুতে রাখতে হবে। কমপক্ষে এর পরিমাণ ৬ ইঞ্চি হতে হবে। অতিরিক্ত গ্যাস বের করার জন্য কখনো সিলিন্ডারে তাপ দেয়া যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে হোটেল বা চায়ের দোকানে শীতের সময় এলপিজি সিলিন্ডার রোদে রাখা হয়, আবার কেউ কেউ তাপও দেয়। ফলে এলপিজি গ্যাসীয় অবস্থা থেকে আরো বেশি প্রসারিত হয়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, মানুষ ব্যবহারে সচেতন হলেই এলপিজির বেশিরভাগ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতি বছর এলপিজির মাধ্যমে কত দুর্ঘটনা ঘটে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সূত্র মতে বছরে অন্তত ২শটি এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। তাতে অনেকে হতাহত হয়ে থাকে। তবে যারা এলপিজি বিপণন করে তারা তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। সরকারের তরফ থেকে দফায় দফায় বৈঠক করলেও কোন এলপিজি ব্যবসায়ী নিরাপত্তা ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য কিছু করেনি। সরকারের তরফ থেকে এর আগে এলপিজি গ্রাহকদের বীমা করে দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের চাপ দেয়া হলেও কেউ সম্মত হয়নি। এখন সরকারের তরফ থেকে গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার ছাড়াও সভা সেমিনার আয়োজন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, গত অর্থবছরে দেশে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন এলপিজির চাহিদা ছিল। আর সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলছে ২০৪১ সালের মধ্যে চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০ লাখ মেট্রিক টন। দেশের উদ্যোক্তরা এলপিজি আমাদনি করে দেশের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এলপিজি রফতানিও করছে।