বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস, অশ্রুসিক্ত বেদনার রক্তাক্ত দলিল। জল্লাদ হানাদার বাহিনী ও তাদের কুশীলবরা নয় মাসের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে যে বর্বরতা, নৃশংসতা, সীমাহীন অত্যাচার, নাশকতা, জ্বালাও পোড়াও লুন্ঠন করেছে তা ইতিহাসের কালো অধ্যায় ও নির্মমতার অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত। যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের কান্না আজও শেষ হয়নি। যা কারবালার বিয়োগান্ত মর্মস্পর্শী ঘটনারই প্রতিফলন।
জল্লাদ হানাদার ও তাদের নৃশংসতা, পাষন্ডতা তখন সারা দেশে একইভাবে বিস্তার ঘটে। যে দানবতা থেকে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, যুবক কোলের শিশু যেমনি রেহাই পায়নি তেমনি গর্ভবতী মা বোনও রক্ষা পায়নি। যা লেখতে ও ভাবতে গিয়ে আজও শরীর শিহড়িয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকার তদানীন্তন পিলখানার সদর দফতর (বর্তমানে বিজিবি), রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, ঢাকা সেনানিবাসসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুমন্ত মানুষের উপর ট্যাংক, কামানের মাধ্যমে গুলি চালিয়ে নির্মম, নিষ্ঠুর, নৃশংস ও অমানবিকভাবে হত্যা করে থাকে। লাশের মধ্যে বেঁচে থাকাদেরকেও বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করে থাকে। পরের দিন ২৬ মার্চ মানুষের লাশ ও রক্তের উপর দাঁড়িয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক জান্তা লেঃ জেঃ টিক্কা খান সদর্পে ঘোষণা করেছিল, আমরা এদেশের মানুষ চাই না, রক্ত মাখা মাটি চাই। আরও বলেছিল, Green of East Pakistan will have to be painted red. অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ চত্বরকে লাল রঙে আচ্ছাদিত করে দিতে হবে। সারা দেশের বিভাগ, জেলা, মহকুমা, বন্দর, গঞ্জ, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রামে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে হানাদার জল্লাদদেরকে পাঠানো হয়ে থাকে। তারপর হানাদার জল্লাদ বাহিনী ও তাদের পোষ্য পেটুয়া দানবরা এক যোগে নৃশংস জ্বালাও, পোড়াও অভিযান শুরু করে থাকে। এদিকে সামরিক জান্তা তাদের তল্পিবাহক, চাটুকার ও পুতুল হিসেবে ডাঃ এ মোতালিব মালেককে ৭১ সালের ৩১ আগস্ট গভর্ণর ও ৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে থাকে। তাদের মধ্যে ছিল, আবুল কাশেম, এ.এস.এম সোলায়মান, নওয়াজেশ আহমদ, এ.আহমদ, এম. ইউসুফ, মোঃ ইসহাক, মুজিবুর রহমান, জসিমুদ্দীন আহমদ, ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, এ.কে মোশারফ হোসেন, আব্বাস আলী খান। প্রথম দিকে দেশের জনগণ এদের বিরুদ্ধে দেশের সর্বত্র ব্যারিকেট গড়ে তুললেও, হানাদারদের প্রচন্ড ও নৃশংস আক্রমনে জনগণ সামনে এগুতে পারেনি।
এত কিছুর পরও জীবন মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েও দেশপ্রেমিক জনগণ দেশের বিভিন্ন স্থানে হানাদার পাকবাহিনীর চলাচলের পথে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে রাস্তাঘাট, কালভার্ট, রেল লাইন ও সেতু উড়িয়ে দেয়। তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকের নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
এপ্রিলের প্রথম দিকে দলে দলে ছাত্র, যুবকসহ সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাড়ি জমাতে থাকে। এমনিভাবে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ ও পাকুন্দিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকার বেশ কয়েকজন
মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। তখন আমরা ছিলাম ২৭ জন। ঈশ্বরগঞ্জ থানার আঠারবাড়ীর (রায় বাজার) কাল বলুয়া বাজারের নিকট পৌঁছলে আমাদের অগ্রবর্তী দলের বেশ কয়েকজনকে শান্তি কমিটির লোকজন ও রাজাকাররা ধরে পাক বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে থাকে। পরবর্তী সময় কিশোরগঞ্জ ডাক বাংলোর হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে অত্যাচার নির্যাতন করে ধুলদিয়ার রেল ব্রীজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ছিল সুখিয়ার কাশেম, চরপলাশের আঙুর, বড় আজলদীর আঃ হাই, সবজালিসহ আরও কয়েকজন। পরবর্তী সময় আমি, আঃ ছোবান, জিয়াউদ্দিন, নূরু, চান মিয়া কোনোমতে বেঁচে গিয়ে ভারতের মইষখলা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি।
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আহারসহ সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এছাড়া তখন দেশের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সন্তান তুল্য মনে করে আদর, যতœ, সেবা ও সহযোগিতা করে থাকে। দেশের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগিতা না করলে কোনো অবস্থাতেই নয় মাসে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। এত অল্প সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে ছিল সকল স্তরের মানুষের ত্যাগ, অকৃত্রিম সহযোগিতা ও সমর্থন। আর হানাদারদের কুশীলব ও দালাল হিসেবে পরিচিত রাজাকার, আলবদর, আল ফাত্তাহ, আল শামস ও শান্তি কমিটির লোকদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। সেই সময় কিশোরগঞ্জ স্টেশান সংলগ্ন জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে ধরে এনে যে অমানসিক অত্যাচার, নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ করা হয়েছে যা অবর্ননীয়। এসব থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকেই আজও নির্মমতার কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ ও কান্নায় ভেঙে পড়ে। ডাক বাংলোর দেয়ালে আজও রক্তের ছাপ লেগে আছে। সন্তান হারা পিতা মাতা, ভাই হারা বোন, স্বামী হারা স্ত্রী, পুত্র পরিজন ও স্বজন হারাদের অনেকেই স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবসের দিন আজও ডাক বাংলোতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য সেই সময় কুলাঙ্গার নরপিশাচ পাক হানাদার বাহিনীর মেজর ইফতেকার (কসাই ইফতেকার) ও অন্যান্যরা হত্যা, ধর্ষণ ও অমানষিক নির্যাতন করলেও, এই শহরের অনেকের বাসায় যাওয়া আসা নিয়ে রয়েছে অনেক কাহিনী। যা আজও অনেকেই ভুলে যায়নি। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও, কিশোরগঞ্জ স্বাধীন হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৬/৭ দিন আগেই পাকুন্দিয়া মুক্ত হয়। সেই সময় পাকুন্দিয়ার ১ কিলোমিটারের মধ্যে শুধু লাল আর লাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। যদিও এর আগেই হানাদার বাহিনী তাদের কুশীলব ও পোষ্যদের রেখে কিশোরগঞ্জ ছেড়ে চলে যায়। পাকুন্দিয়া মুক্ত হওয়ার সংবাদ শুনে এলাকার শত শত নারী পুরুষ ও সকল স্তরের মানুষ সেখানে ছুটে আসে এবং উল্লাসে মেতে ওঠে। দৃশ্যপট দেখে মনে হয়েছে এদিনই যেন দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। এত লাশ দেখেও কারও মধ্যে বিন্দু বিসর্গ অনুশোচনা আসেনি। তারপর হানাদার বাহিনীর অগনিত কুশীলব ও পোষ্যদের আটক করা হয়। দেখা গেছে আটকদের যেমন তিরস্কার করা হয়েছে তেমনি লাশের মধ্যে অনেকেই ঝাড়– ও জুতা দিয়ে পেটাচ্ছে। অনেকেই নয় মাসের অত্যাচার, জ্বালা যন্ত্রনার কারণে লাশের ওপর থুথু দিয়ে ধিক্কার ও ঘৃণা জানাচ্ছে। মানুষের নিন্দা ও এ প্রতিক্রিয়া স্বচক্ষে না দেখলে এ নিবন্ধে দুকথা লেখে বুঝানো বাস্তবিকই কঠিন।
আরেকটি ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরারচর রেল স্টেশনের অনতিদূরে একটি ট্রেন দুর্ঘটনায় পতিত হয়। তাতে খবর রটে যায় এই ট্রেনে দুর্ঘটনায় পাকবাহিনী মারা গেছে। এই খবর শোনার পর এলাকার শত শত মানুষ সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়। যদিও এ ঘটনা শোনার পরও ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ থেকে পাকবাহিনী ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে আসতে কালক্ষেপন করে থাকে। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনে আটকা পড়া পাকবাহিনীকে পিটিয়ে নাস্তানুবাদ ও ক্ষত বিক্ষত করে প্রকাশ্যে হত্যা এবং আনন্দ উল্লাস করে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক অধিনায়ক লেঃ জেঃ এ.এ নিয়াজি যখন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমাড্যান্ট লেঃ জেঃ জগজিৎ সিং অরোরার নিকট রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অপরাহ্নে আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করে তখন এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ জি ওসমানী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। যে রহস্য আজও অনোদঘাটিত। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতসহ দুনিয়ার আরও যেসব দেশ সাহায্য সহযোগিতা করেছে, তা এদেশের জনগণ ও কোনো সরকারই অস্বীকার করেনি বা ভুলে যায়নি। আজও এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়ার (বর্তমান রাশিয়া) অবদানকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে থাকে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় মিত্রবাহিনী এদেশ থেকে অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে মূল্যবান সম্পদ ভারতে পাচার করে থাকে। ভারতের বন্ধ পাটকলগুলো এদেশের পাট নিয়ে চালু করা হয়। ভারত একচেটিয়া এদেশের পাট রপ্তানি করে এবং ডান্ডির বন্ধ পাটকল চালু করে থাকে এবং বিদেশে একচেটিয়া পাট রপ্তানি করে বাজার সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়া পাকিস্তানি হানাদারদের ফেলে যাওয়া গোলা বারুদ, গাড়ী ও মিল ফ্যাক্টরীর মূল্যবান যন্ত্রপাতি পাচার করে থাকে। তখন আমদানীকৃত জাপানী ট্রেটরন ও আদমজী পরিচালিত কিশোরগঞ্জ ন্যাশনাল সুগার মিলের মূল্যবান পার্টসও ভারতে পাচার করে থাকে। সেই সময় প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বন্ধু ও মিত্র হিসেবে ভারত তখন এদেশ থেকে শুধু ৬ হাজার কোটি টাকার পাট নিয়ে যায়। আরও জানা যায়, কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদ সংলগ্ন ইসলামিয়া ছাত্রাবাসের মাঠে স্তুপীকৃত করে জমা করা অস্ত্র ও গোলা বারুদ নিয়ে যাওয়ার জন্য মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেন চুয়ান প্রচেষ্টা চালায়। তাতে তৎকালীন কবীর কোম্পানীর কমান্ডার কবীর উদ্দিন আহমেদ ও
অন্যান্যরা বাধা দিলে তা নিতে পারেনি। এমন অজ¯্র উদাহরণের শেষ নেই। কেহ ভারত সম্পর্কে কিছু লিখলে বা বললে একটা শ্রেণী বা গোষ্ঠি বলে থাকে ওরা ভারত বিদ্বেষী। ভারত আজও তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যা দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক হেলসিংকি নদীমালা আইন ভঙ্গ করে ৫৭ নদীতে গ্রোয়েন দিয়েছে। ফেলানীকে বিএসএফরা মেরে তারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে। পদ্মা নদীতে বিএসএফরা জোর করে মাছ ধরতে আসে। পেঁয়াজের দাম ৩ গুণ বাড়িয়ে সাড়ে আটশত ডলার করে। ভারতের সাথে চুক্তি বাণিজ্যের আমদানীকৃত পেঁয়াজ ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ বন্ধ করে দেয়। কেহ এসব বললে বা লেখলে যদি ভারত বিদ্বেষী বলা হয়, তবে এ দুঃখ বেদনা ও অনুশোচনা প্রকাশের জায়গাই বা কোথায় ?
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ইতিহাসের আলোকে নির্ধারিত। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের জন্মই হয়নি, তাদের মধ্যেও অনেকই মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক নিয়ে যখন সমালোচনা করতে দেখা যায়, তখন দুঃখ বলার জায়গাই বা কোথায় ?
মহান বিজয় দিবস আমাদের গর্ব ও অহংকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যে লক্ষ্যে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ও দুলক্ষ মা বোনের ইজ্জত সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ৪৯ বছর ধরে কোনো সরকারের আমলেই মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থানের যেমন সূরাহা হয়নি তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তিও আসেনি। তদোপরি পাকিস্তান আমলে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠি অফিসে আদালতে এদেশের মানুষের সাথে সীমাহীন দ্বৈততা ও বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে ওদের যবনিকাপাত হলেও আজও স্বাধীন দেশের অফিস আদালতে তা অব্যাহত রয়েছে। তাদের আচার আচরণ যেমন পাকিস্তানিদের অনুরোপ, তেমনি প্রজাতন্ত্রের সেবক হলেও তাদের হাবভাব দেখে মনে হয় ওরা সেবক নয় মালিক, প্রভু, ঘুষ দুর্নীতির রাক্ষস ও পাকিস্তানী দুঃশাসকদের উত্তরসূরী। কিছুদিন আগে এ বিষয়ে কিছু দুঃখের কথা বলতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু হযরত আলী মাস্টার স্যার আবেগ, অনুরাগ ও ব্যথার যন্ত্রনায় তা শেষ করতে পারেননি। কিন্তু যতটুকু শুনেছি তাতে আমি স্যারের দুঃখ, কষ্ট, বেদনায় সমব্যতিত হয়েছি। অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি। ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৭৪ ও ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট ও ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে অভিযান চলে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। ইহা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে দেশের মানুষ মনে করে থাকে। ইহাও একটি যুদ্ধ। কোনো কারণে শুদ্ধি অভিযানে ধস নামলে বা ফাঁকফোকর দেখা দিলে গোটা জাতির কষ্ট ভোগ করতে হবে। যে কারণে আগে ভাগেই এ ব্যাপারে সতর্ক ও কান খোলা রাখা উচিত যাতে বেড়ায় ক্ষেত না খায়।
দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল, রক্ত পিপাসু জল্লাদ হানাদার ও কুলাঙ্গারদের বিচার এদেশের মাটিতেই হবে। বিচারের মাধ্যমে নররাক্ষস ও কসাইদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হবে। যা দেখে এদেশের পুত্র হারা পিতা মাতা, ভাই হারা বোন, স্বামী হারা স্ত্রী, সন্তান ও নির্যাতিত বীরাঙ্গনা মা বোনেরা শান্তি পাবে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১৯৭২ সালে ইন্দিরা ভূট্টোর সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ৯৩ হাজার অপরাধী হানাদার ও নাটের গুরু ১৯৫ জন কুলাঙ্গার অপরাধী পাকবাহিনীকে ফেরৎ দেয়া হয়ে থাকে। যা দেখে অনেকরই মনে হয়েছে যুদ্ধটা যেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে হয়নি। যুদ্ধটা যেন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। তা না হলে ইন্দিরা-ভূট্টোর মধ্যে বন্দি বিনিময় সমঝোতা সিমলা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল না। আজও পাকিস্তান আমাদের ন্যায্য হিস্যা ফিরিয়ে দিচ্ছে না। সে কথা বলার জায়গাও যেন দিন দিন ক্ষিণ হয়ে আসছে। ঘুরে ফিরে প্রতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস আসলেও এ প্রশ্নগুলো বার বার এদেশের মানুষকে রেখাপাত করে থাকে। এ ব্যথা, বেদনা ও জ্বালা যন্ত্রনা ধারণ করার পরও মহান বিজয় দিবস আমাদের গর্ব অহংকার ও লাল সবুজের পাতাকা আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। আজ আমরা গর্ব ভরে উচ্চারণ করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সুমধুর কন্ঠে জাতীয় সংগীতে গেয়ে যাই, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। উচ্চারণ করি জীবন বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ।
পরিশেষে বলব, এবারের মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বীরমুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী স্যারের অব্যক্ত দুঃখের কথা শুনতে গিয়ে আমি যেমন অশ্রু সংবরণ করতে পারিনা তেমনি এমন অব্যক্ত দুঃখ যেন আর কারও শুনতে না হয়। মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত মায়ের বুক খালি হয়েছে তাদেরকে জানাই সালাম ও মহান বিজয় দিবসে শহীদদের জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা ও অভিবাদন।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট