সেনাবাহিনীর মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানের হত্যা একটি অমানবিক ও নৃশংস হত্যাকান্ড। যাকে কোনো অবস্থাতেই দেশের মানুষ ভুলে যেতে পারে না। তারপর পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুলের মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেহ ভুলে যেতে পারে না। তদোপরি প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক ও মর্মান্তিক মৃত্যুরতো শেষই নেই। যদিও এসবের প্রতিকারে রয়েছে পুলিশ, র্যাব, সিআইডিসহ অনেক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ইতিপূর্বে সেনা তদন্ত কমিটি মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যার মামলায় তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। পরবর্তী সময় ওসি প্রদীপের পরিকল্পনায় মেজর (অবঃ) সিনহাকে হত্যাসহ আরও ১৫ জনকে আসামী করে র্যাব আদালতে চার্জশীট (অভিযোগনামা) দাখিল করেছে। র্যাবের চার্জশীটে এ হত্যাকান্ডকে একটি হৃদয় বিদারক ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা কারবালার প্রান্তরে এজিদ কর্তৃক হত্যাকান্ডেরই নামান্তর। জানা যায়, কক্সবাজারের সেনাবাহিনীর মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত। যার মূল পরিকল্পনাকারী টেকনাফ থানার সাবেক (বরখাস্ত) ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ইয়াবা বাণিজ্যসহ টেকনাফে তার অপরাধের অভ্যয়ারন্য ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে হুমকি ও স্বার্থের হানি মনে করায় সিনহাকে নির্মম, নিষ্ঠুর ও অমানবিকভাবে ৩১ জুলাই ২০২০ ইং কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ফাঁড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর মোট চারটি মামলা হয়েছে। তন্মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ ও রামু থানায় তিনটি মামলা করে থাকে। তিন মামলায় মেজর (অবঃ) সিনহা ও ডকুমেন্টরি নির্মাণে তার দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদক ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। তবে পুলিশের দায়ের করা মামলায় অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। তাই এই অভিযোগ থেকে তাদের দায়মুক্তি চেয়ে র্যাব আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট (Final Report) দাখিল করেছে।
এজাহারের এক পর্যায়ে বলা হয়, মেজর (অবঃ) সিনহার প্রাইভেট কার ৩১ জুলাই রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে শামলাপুর চেকপোস্টে পৌঁছায়। পরিদর্শক লিয়াকতসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা সেখানে গাড়ীর প্রতিরোধ করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়ে থাকে। সিফাত তখন পরিচয় দিলে পুলিশ সদস্যরা গাড়ীর সামনের বাঁ দিকের দরজা খুলে টেনে হিচড়ে সিফাতকে বের করে নিয়ে যায়। সিফাত তখন দুই হাত তুলে নিজের এবং গাড়ীতে বসা সিনহার পরিচয় দেয়। আসামীরা তখন আরও মারমুখি ও ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে বসা মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় সিনহা গাড়ী থেকে দুই হাত উপরে তুলে বার বার নিজের পরিচয় দেয়। তখন পরিদর্শক লিয়াকত অকথ্য ভাষায় বলতে থাকে, তোর মতো বহুত মেজরকে আমি দেখেছি এইবার খেলা দেখামু। এরপর লিয়াকত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ফোন করে বলে থাকে “ঠিক আছে শালারে এবার শেষ কইরা দিতাছি”।
এরপর অভিযোগপত্র (Chargesheet) যে ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা এজিদ কর্তৃক কারবালার বিয়োগান্ত নির্মম, নিষ্ঠুর, অমানবিক, হৃদয় বিদারক ঘটনার সাথে তুলনা করা চলে। (ক) লিয়াকত সম্পূর্ণ ঠান্ডা মাথায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে সিনহার শরীরে উর্ধ্বাংশে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। (খ) গুলির আঘাতে সিনহা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং নিজের জীবন
রক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে উঠে পালানোর চেষ্টা করে। (গ) তখন অন্য আসামীরা তাকে চেপে ধরে আবার মাটিতে ফেলে দেয়। (ঘ) পরিদর্শক লিয়াকত তখন সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরও এক রাউন্ড গুলি করে। (ঙ) এরপর ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ওসি প্রদীপ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা সিনহার শরীর ও মুখে কয়েকবার লাথি মেরে থাকে। তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং নিজের (দানব ও কষাই ওসি প্রদীপ) বুট জুতা দিয়ে বারবার ঘষা দিয়ে নিহত সিনহার মুখমন্ডল বিকৃত করার চেষ্টা করে থাকে। (চ) পুলিশ সদস্যরা এ সময় মামলার সাক্ষী এবং ঘটনাস্থলের আশেপাশে উপস্থিত লোকজনকে অস্ত্র উঁচিয়েও হত্যার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করে থাকে।
এমনিভাবে প্রদীপ ও লিয়াকত কত যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার খবর রাখেই বা কজনা। আইনের ফাঁক ফোকরে এমন ধরণের পাষন্ড দানব, এজিদ ও সীমারের প্রেতাত্মা রেহাই না পেয়ে বিচারের রায়ে যাতে সঠিক প্রতিফলন ঘটে, ইহাই দেখতে চায় সিনহার পরিবার ও দেশের মানুষ।
তারপর দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ও হম্বিতম্বি সম্পর্কে এ নিবন্ধে কিছু উপাখ্যান তুলে ধরছি। এই নিষ্ঠুরতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার হম্বিতম্বির সাথে সম্পৃক্ত না হলেও দুর্নীতিবাজদের কর্মকান্ডকে ভুলে যাওয়ার নহে। দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাম্ভিকতাও আজ দেশের অর্জনকে নিয়ে যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলেছে। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে দুর্নীতি দমনে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বা Anti Corruption কাজ করে থাকে। কিন্তু দুর্নীতি দমন ব্যুরো মানুষের তেমন আস্থা অর্জন করতে পারেনি। যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য পুঞ্জীভূত কারণ। এই সংস্থার লোকজন মনে করত তারাই ন্যায় নিষ্ঠাবান, আদর্শবান, তুলসীপাতা ধোয়া ও পবিত্র আবে জমজমের পানির ন্যায়। আর অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের লোকজন অসৎ ও দুর্নীতিবাজ। কিন্তু দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মধ্যে যে অসৎ, দুর্নীতির রাঘব বোয়াল ও কারে দরজালরা যে রয়েছে তা তারা কোনো দিনই ভাবত না। অহরহ ক্ষমতার দাপটে অনেক সমক অনেক মিথ্যা মিথ্যি মামলায় জড়িয়ে অহেতুক হয়রানী ও অসদুপায় অর্জনই ছিল তাদের মুখ্যম বিষয়। অপর দিকে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের সাথে ছিল সখ্যতা। সেই সময় মহকুমা দুর্নীতি দমন কর্মকর্তাকে SACO ও জেলা কর্মকর্তাকে DACO বলা হত। তাদের হাবভাব দেখে মানুষ তাদেরকে জমিদারের মতো ভয় করতো। আর তাদের অফিস ছিল দুর্নীতিবাজদের অপেন সিক্রেট আখড়া হিসেবে পরিচিত। আর তাদের অফিস সকাল, সন্ধ্যা ও গভীর রাতেও খোলা থাকত।
২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করা হয়। তাদের অধীনস্থ কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারণে দুদকও মানুষের পরিপূর্ণ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তাদের মধ্যেও অনেকেই দুর্নীতির মামলায় জড়িত হয়ে কারান্তরালে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যা কারও না জানার কথা হয়। এছাড়া দুর্নীতি বাড়ার সাথে সাথে সমাজে পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যে উপমা ও উদাহরণের সীমা পরিসীমা নেই। তদোপরি কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও হাই ভোল্টেজের হস্তক্ষেপের কারণে অপ্রকাশিত ও অপ্রচারিতই থেকে যায়। আজ যদি পূর্বেই ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের কর্মকান্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হত এবং তাদের আয় পর্যবেক্ষণ করা হত তবে কোনো মতেই এমনি পাষন্ডভাবে সেনাবাহিনীর চৌকস ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খানকে হত্যা করা হত না।
আরও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তার উদাসীনতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার যেন সহ্য না করার মতই। একজন জেলা ও দায়রা জজ এখন সচিব পদ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তদোপরি একজন বিচারপতির ক্ষমতা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় অনেক উপরে। কিন্তু অনেক সময় দায়িত্ব ও কর্তব্য কাজে কোনো জেলায় আগমন করলে তাদের থাকার ব্যবস্থা একমাত্র সরকারি সার্কিট হাউজ। শুনা যায়, সেখানে থাকার ব্যাপারেও প্রটোকলে যথেষ্ট নয় ছয় ও এদিক সেদিক করা হয়ে থাকে। যা যেমন বেমানান, তেমনি রুলস অব প্রেসিডেন্স অনুসারে অমার্জনীয় অপরাধ ও ক্ষমতার অপব্যবহারেরই নামান্তর। অর্থাৎ এসব কিছু দেখে মেন হয় একটা শ্রেণি যেন তাদের জমিদার বলে মনে করে থাকে। এ দৃষ্টতা দেশের অর্জনকে তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে। যা Undemocratic, unconstitutional এবং রুলস অব প্রেসিডেন্সের অবমাননারই নামান্তর। যাকে কেহ Misappropriation of power বলে উচ্ছাস করলে তেমন অত্যুক্তি না হওয়ারই কথা।
দেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থাকলেও বেশীর ভাগ দুর্নীতি উদঘাটনে পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গুরুত্বকে হেয় করে দেখার সুযোগ নেই। ক্যাসিনো কেলেংকারীর সাথে জড়িত গডফাদার, নাটের গুরু ও জড়িতদের ব্যাপারে র্যাব ও পুলিশ বিশেষ ভূমিকা নিয়ে তা উদঘাটন করলে পরবর্তী সময় দুদক তাতে সম্পৃক্ত হয়। হাজী সেলিমের দুর্নীতির ব্যাপারে র্যাব ও পুলিশ তৎপরতা চালালে দুদক তাতে পরে সামিল হয়। কোভিড ১৯ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে অনিয়ম ধরা পড়লে তৎপরবর্তী সময় তা দুদকের নজরে আসে। যদিও প্রতিটি দুর্নীতি উদঘাটনে প্রথমে দুদকের দায়িত্ব থাকার কথা, পরে অন্যান্য সংস্থা। তদোপরি দুর্নীতির অনুসন্ধ্যানে রয়েছে ৯৯৯, ১০৬ ও ৩৩৩ তিনটি ডিজিটাল হটলাইন। তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে যে অক্লান্ত শ্রম ও মেধা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন যা যথেষ্ট প্রশংসা যোগ্য। আবার দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির দুর্নীতির মামলায় কারাগারে রয়েছে।
আরেকটা অপেন সিক্রেট দুর্নীতির কথা না বললেই নয়। যা দুদকেরও না জানার কথা নয়। তা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের সময় LAR বা Local Arrangement Resource এর নামে প্রকাশ্যে টাকা নেয়া হয়ে
থাকে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনসিদ্ধ নহে। তবে এ রেওয়াজ নতুন কিছু নয় বরং সনাতন। কিন্তু দুদকের চোখের সামনে এ প্রথাটি চলে আসলেও অবস্থা দেখে মনে হয়, এ আইনসিদ্ধ হীন প্রথাটি বন্ধের ব্যাপারে দুদকের যেন দায়সারাভাব। এ প্রথাটি দুর্নীতির পর্যায়ভূক্ত বলে বিজ্ঞ আইনজীবী, ভোক্তভোগীসহ অনেকেই মনে করে থাকে। দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে এতদিন পরে হলেও এ চিহ্নিত অবৈধ এলএআর প্রথার বিরুদ্ধে দুদক সোচ্চার হলে মানুষের কাছে দুদকের বিশ্বাস, আস্থা ও অর্জন অনেকাংশে বেড়ে যাওয়ারই কথা।
০৮/১২/২০ ইং টিআইবি এক বিবৃতিতে বলেছে চুনোপুঁটি টানাটানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে দুদককে সত্যিকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছে। টিআইবি আরও বলেছে করোনা অতিমারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য খাতে সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষিত রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দরকার। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন, বিচার প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্টতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও দেশবাসীর স্বাধীন মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জোর দাবী জানিয়েছে টিআইবি।
১২/১২/২০ ইং “কালো বিড়াল” শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুর্নীতির মাধ্যমে রেলের তালা, বালতি ও ঝান্ডাকেনার লক্ষ লক্ষ টাকার সঙ্গে রেলের ১৭ কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রমান পেয়েছে রেলের তদন্ত কমিটি। ১৩৩ টাকার তালা কেনা ৫,৫০০ টাকায়, ২০০ টাকার বালতি ১৮৯০ টাকায়, ৫০ টাকার বাঁশী ৪১৫ টাকায়, ৭৫ টাকার ঝান্ডার ১৪৪০ টাকায় কেনা হয়েছে। এছাড়া রেলের অন্যান্য কেনাকাটায় বিস্তর অসংগতি ও দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অফিসের প্রতিটি পর্দা ক্রয় দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯০ টাকা। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যায় প্রতিটি পর্দার দাম ১০৮৫ টাকা। তাতে ক্ষতি হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। লাগেজফিতা প্রতি ফিস কেনা হয়েছে ৪৯.৪০ টাকা করে। যাচাইকালে দেখা যায় তাতে ক্ষতি হয়েছে ২৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ভিজিটিং চেয়ার প্রতিটি কেনা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৯০ টাকা। প্রকৃত দাম ৯ হাজার ৩৬০ টাকা। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৫ লাখ ২০০ টাকা। ডাস্টবিন প্রতিপিস কেনা হয় ৯৮৫০ টাকা। বাজার দর ৪৫০ টাকা। অনিয়ম ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা। এমনিভাবে লাগেজ ট্রলি ক্রয়ে আর্থিক ক্ষতি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৬০ টাকা, পাপোস ক্রয়ে অনিয়ম ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এছাড়া ফটোকপি মেশিন, স্টিল ফ্রেমের চেয়ারক্রয়সহ অন্যান্য খাতে রেলের ক্রয়ে রয়েছে লাখ লাখ টাকার অনিয়ম, অসংগতি ও সীমাহীন দুর্নীতি।
জানা যায়, জরুরী অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর সরকার দলীয় এমপি হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিচারিক আদালত তাকে ১৩ বছরের কারাদন্ড দেয়। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করে দুদক। এই আপীলের শুনানী শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপীল পুণরায় হাইকোর্টে শুনানীর নির্দেশ দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই নির্দেশনায় আলোকেই ও মামলার নথি তলব করে হাইকোর্ট।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ০৯/১২/২০ ইং বুধবার আলোচনা অনুষ্ঠানে টিআইবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য আবুল হোসেন বলেছেন, দুর্নীতি সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে গেছে। একজন দুর্নীতিগ্রস্থ লোককে অনেক সময় আমরা নির্বাচিত করছি। দুর্নীতিবাজরা সংসদেরও চলে আসছে। এখন দুর্নীতি ও সুনীতি মিলে একাকার হয়ে গেছে। জনসচেতনতাই পারে দুর্নীতির এ গ্রাস থেকে জাতিকে রক্ষা করতে।
দুর্নীতি উদঘাটনে প্রাথমিক পর্যায়ে দুদকের যতটুকু করার দরকার তা প্রত্যাশিত হচ্ছে না। দুর্নীতি উদঘাটনে দুদকের আরও সোচ্চার হওয়া দরকার বলে অনেকেই মনে করে থাকে। কারণ দৃশ্যপটে দেখা যায়, পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য সংস্থা প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক বড় বড় দুর্নীতি উদঘাটন করলে পরবর্তী সময় দুদক একে কেন্দ্র করে সোচ্চার হয়। অথচ দুদক দুর্নীতি উদঘাটনে প্রাথমিক পর্যায়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যাপক ও বিশাল থাকলেও তা অনেক সময় দৃশ্যমান হয় না।
পরিশেষে বলব, এলএআর ফান্ডের নামে বহুদিন ধরে যে অপেন সিক্রেট অনিয়ম চলছে তাতো দুদকের না জানা ও না দেখার কথা নয়। তারপরও দুদক যদি এ অনিয়ম দেখে ও জেনে না দেখার ভান করে এবং কোনো ব্যক্তি যদি হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ, দুদকের অন্ধরোগ ও এসব দেখি কানার হাটবাজার বলে মন্তব্য করে তবে দুদকের উত্তর দেয়ার মতো কিছু না থাকারই কথা। মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানের হত্যা মামলায় দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের আরও সচেতনতাই জনপ্রত্যাশা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট