কোরআন, হাদীস ও মনীষীদের মতে আত্মমর্যাদাবোধ, সম্মান, জাগ্রত বিবেক ও লজ্জাশরম জীবনের অলংকার। এসব থেকে বিচ্যুৎ হলে তখন যা ইচ্ছা তা করা এবং আত্মসম্মানের বালাই থাকে না। যা নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প, কাহিনী, উপমা, উদাহরণ ও বাস্তবতার দিকদর্শন। তদোপরি যুগে যুগে দেশ, জাতি, সমাজ ও জনগণের অধিকার নিয়ে যারা অবজ্ঞা ও কলুষিত করেছে তা বড়ই মর্মস্পর্শী। মানুষ তাদের ইতিহাস আজও ভুলে যায়নি। মহান বিজয় দিবসের ৪৯তম বার্ষিকীতে একজন দেশপ্রেমিকের উদাহরণ টেনে এ নিবন্ধটি শুরু করছি। তা হলো স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) প্রধান বিচারপতি বি.এ সিদ্দিকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জল্লাদ টিক্কা খানকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ করাতে রাজী হননি। তারপর তিনি বলেছিলেন, “আমাকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিলেও আমি তাকে শপথ গ্রহণ করাবোনা। আমার জীবনের চেয়ে এদেশের স্বাধীনতা আমার কাছে অনেক বড়।” তারপর জল্লাদ টিক্কা খান পিস্তল ট্যাক করে ক্ষোভ ও রাগে উত্তেজিত হয়ে বলেছিল, তোমাকে গুলি করে মস্তক বিদীর্ন করে দিব (নিয়াজির আত্মসমর্পনের দলিল- সিদ্দিক সালিক)। তারপরও বিচারপতি বি.এ সিদ্দিকি তার সিদ্ধান্তে অটল ও অবিচল থাকেন। কোনো অবস্থাতেই তিনি বিন্দুবিসর্গ ও এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান নি। তারপর জল্লাদ টিক্কা খান, রাও ফরমান আলীসহ অন্যান্য সহকর্মীদের নিয়ে ২৬শে মার্চ ৭১, সকালে পিলখানার সদর দফতরে (বর্তমান বিজিবি) লাশের উপর দাঁড়িয়ে বলেছিল, Green of East Pakistan will have to be painted red. অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের শ্যামল চত্বরকে লাল রক্তে রঞ্জিত করে দিতে হবে। তার পরের মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক ঘটনা ও ইতিহাস সবারই জানা বলে এ নিবন্ধে সেদিকে না গিয়ে অন্য একটি গল্পের আলোকপাত করা হল। যা একটি গল্পেরই অংশ বিশেষ। যা কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠিকে উদ্দেশ্য বা উপলক্ষ করে নহে।
হরিবল ছিল ব্রিটিশ রাজন্য বর্গের প্রভাবশালী ও বিশ্বস্থ জমিদার। তাই তার প্রভাবও আকাশ চুম্বী ক্ষমতার শেষ ছিল না। সে যা ইচ্ছা তা করতে কুন্ঠা ও দ্বিধা সংকোচ বোধ করত না। একদিন সে তার জমিদারি পরগনায় ঢাকঢোল পিটিয়ে দিল, আমার পরগনার কেহ মদ, গাঁজা ও নেশা জাতীয় কোন কিছু সেবন করতে পারবে না। তাদের সংশোধনের জন্য ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয়া হল। আর এই সময় অতিক্রান্ত হলে অপরাধীকে শূলে চড়ানো হবে। কিন্তু জমিদার হরিবলসহ তার আশেপাশে যে সমস্ত চামচা-চাটুকার ছিল প্রত্যেকেই মদ, গাঁজা নেশাতে আসক্ত ছিল। তারা গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। তারা একদিন জমিদারের খাস দরবারে গিয়ে বলল হুজুর আপনি আপনার পরগনায় মদ, গাঁজা ও নেশা সেবন না করার বিরুদ্ধে যে ঢাকঢোল পেটাচ্ছেন, তাতে আপনি না বেঁচে গেলেন, আমাদের কি উপায় হবে। এছাড়া যারা এর বিরুদ্ধে ঢাকঢোল পেটাচ্ছে ওরাওতো নেশাখোর ও মদ গাঁজা সেবক। জমিদার বলল, এই ঢাকঢোল তোমাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। যারা আমার পরগনায় থেকে খাজনা, ট্যাক্স না দেয় ও আমার অবাধ্য ওদেরকে ধরে এনে মদ, গাঁজা ও নেশাখোর হিসেবে শুধু শূলে চড়ানো হবে। আর তোমরা যারা আমার মতো নেশাখোর তারা আরও বেশী মাদক সেবন করে পড়নের কাপড় মাথায় বেঁধে পরগনাময় ঢাকঢোল নিয়ে বেড়িয়ে পড়বে। আর আমরা কয়েকজনই শুধু আরামছে একসাথে মিলেমিলে নেশাপান করে আনন্দ উল্লাসে মেতে পড়ব, গাইব, নাচব। আমিও তোমাদের মতো জমিদারের ভূষন খোলে পড়নের কাপড় গলায় বেঁধে সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী উচ্চাসে আনন্দ উল্লাস করব। পরে জমিদারের এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে পরগনার ভোক্তভোগী প্রজারা একত্র হয়ে একদিন জমিদারের আস্থানা ঘেরাও করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিলে জমিদার, তার চামচা-চাটুকার ও জমিদারের আস্তাবলের হাতী, ঘোড়াও পালিয়ে যায়। অর্থাৎ যে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে জমিদার প্রজাদের শূলে চড়াতেও নাজেহাল করতে চেয়েছিল এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে জমিদার হরিবল একদিন জমিদারি ছেড়ে হাঁফ ছেড়ে জীবন নিয়ে রক্ষা পায়। আর তাতে জমিদারের আত্মমর্যাদা ও সম্মান কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। অপরদিকে জমিদার হরিবলের চামচা-চাটুকাররা প্রজাদের রোষানলে পড়ে যার পর নাই নাজেহাল হয় এবং কোনো অবস্থাতেই এত ফন্দি ফিকির, কূট কৌশল ও চানক্যের পথ অবলম্বন করেও প্রজাদের রোষানল থেকে পরিত্রান পায়নি। যে গল্পটির মর্মার্থ, শিক্ষা ও ভাবার্থ হলো বুঝিয়া, জানিয়া, শুনিয়া ও ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। তাই যে কোনো ব্যাপারে কোন কিছু করার আগে পিছে ভাবিয়া, শুনিয়া ও বুঝিয়া করাই পারঙ্গম। জমিদার হরিবলের গল্প থেকে কোনো কিছু করার আগে আত্মমর্যাদা ও জাগ্রত বিবেক বারবার নাড়া দিয়ে গেছে।
নির্বাচন কমিশন একটি সার্বভৌম ও সাংবিধানিক অর্গান। তদোপরি নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং রক্ষায় দায়বদ্ধ। বহুদিন ধরে স্বাধীন দেশে নির্বাচন নিয়ে যে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক দৃশ্যপট একটার পর একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা কারও জন্যেই শোভনীয় নহে। অনেকেই মনে করে একদিন আগে আর পরে হোক নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জাগ্রত হলে জমিদার হরিবলের যে অবস্থা হয়েছে তা হলেও বলার কিছু থাকবে না। পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষন, নির্যাতন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ সোচ্চার হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসে। আর তাদের ভয়াবহ পরিণতিকে কেহ রক্ষা করতে পারেনি। যার প্রতিফলন ৯৩ হাজার হানাদার যুদ্ধাপরাধির আত্মসমর্পন। মোদ্দা কথা ইতিহাস নির্মম ও নিষ্ঠুর কাহাকেও ক্ষমা করে না। তদোপরি ক্যামেরায় বন্দী হানাদার ও তাদের তস্করদের ললাটে ঝাড়–পেটার দৃশ্যপট আজও অম্লান হয়ে রয়েছে।
২০/১২/২০ ইং রোববার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত দেশের বিভিন্ন স্তরের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক, ইসি ও সিইসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সম্বলিত অভিযোগ জানিয়ে ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির নিকট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানিয়েছেন। তাতে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের কথাও উল্লেখ রয়েছে। ১৯/১২/২০ ইং শনিবার এক লিখিত সংবাদ সম্মেলনে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া আবেদনে নির্বাচন কমিশনের গুরুতর অসদাচরণ ও আর্থিক দুর্নীতির কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরা হয়। তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনারদের বিশেষ বক্তা হিসেবে ২ কোটি টাকার বেশী গ্রহণ, কর্মচারী নিয়োগের নামে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার দুর্নীতি, নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনটি করে গাড়ী ব্যবহার এবং ইভিএম (Electronic Voteing Machine) কেনার অনিয়ম। এছাড়াও অসদাচরণের মধ্যে রয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে অনিয়ম। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনেরও আবেদন জানানো হয়ে থাকে। দেশের ৪২ জন নাগরিকের পক্ষে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়কের উপদেষ্টা এম. হাফিজ উদ্দিন খান, অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়কের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ও মানবাধিকার কর্মি হামিদা হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, আমরা সবাই মনে করেছি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নির্বাচন কমিশন যেসব কার্যকলাপ করেছে সেগুলো গুরুতর অসদাচরণ। সাংবিধানিক পদে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের। দুদক বা পুলিশ এটা করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশ দিতে পারবেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, গুরুতর অসদাচরণের দায়ে তারা দোষী প্রমাণিত হবেন। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের পদ থেকে অপসারণ করবেন। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছে রক্ত দিয়েছে যাতে স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়। কিন্তু কমিশনাররা বিভিন্ন অনিয়ম ও অসদাচরণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রচিত ৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি গণতন্ত্র ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে তার প্রতিও বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তাদের এখন সরে দাঁড়ানোই ভালো হবে।
নির্বাচন গণতন্ত্রের পাদপীঠ এবং এর আলোকে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব, কর্তব্য অপরিসীম। আজ নির্বাচন কমিশনার ও সিইসির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের ব্যাপারে দেশের বিশিষ্ট ৪২ জন নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে যে আবেদন জানিয়েছেন এবং ১৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মধ্যমে কমিশনের যে ন্যাক্কারজনক দিকদর্শন উপস্থাপন করেছেন, তা কারও কাম্য ছিল না। যদিও এর আগেও অনেকেই কে.এম নূরুল হুদা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপি, অস্বচ্ছ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে যথেষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তাতে এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগকেই ইসি ও সিইসি আমলে না নিয়ে জমিদার হরিবলের মতো একতরফা ঢাকঢোল পিটিয়েই যাচ্ছে।
এমনকি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকাদরসহ অনেকেই নির্বাচনের অনিয়ম, কারচুপি ও অস্বচ্ছতা সম্পর্কে প্রায় সময় গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করলে তাও বাস্তবে কোনো কাজে আসছে না। বরং এতকিছুর পরও সিইসি ভূতের মুখে রামনামের মতই বলে যাচ্ছে। শুধু দেশের বিশিষ্ট ৪২ জন নাগরিকই নহে অনেকেই মনে করে এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন একটি দুর্যোগকালীন সময় অতিবাহিত করছে। যদিও গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিমতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের সংবাদ ২০/১২/২০ ইং রোববার প্রকাশিত হওয়ার পরের দিন ২১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের ২/১ জন কমিশনার এ ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন। যদিও এটা তাদের কাজ নয়। এছাড়া তাদের কাছে এ ব্যাপারে আবেদনও করা হয়নি। এ বিষয়টিকে নিয়ে পানি ঘোলা না করে যাতে সামগ্রিক বিষয়টির উন্নতি ঘটে এটাকে সামনে নিয়েই নির্বাচন কমিশনের এগুনো উচিত বলে অনেকেরই অভিমত। ঘটনা যেভাবে নির্বাচন কমিশনারদের কাউন্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সামনে এগুচ্ছে তাতে দিকভ্রান্ত সম্ভাবনাই ঘুরপাক খাচ্ছে। আত্মমর্যাদা ও জাগ্রত বিবেবকই পারে এর সমাধান দিতে। যদিও রোববার সন্ধ্যায় সিইসি কে.এম নূরুল হুদা নির্বাচন ভবন ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কিছু কথা বলেন। তাতে তিনি বলেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পেন্ডিং আছে। এ অবস্থায় কী মন্তব্য করা যায় বলে প্রশ্ন রাখেন সিইসি কে.এম নূরুল হুদা। কিন্তু ২/১ জন নির্বাচন কমিশনার এ মুহুর্তে যে গালবাজি করছেন তা আগুনে ঘি ও পেট্রোল ঢালারই নামান্তর বলে অনেকেই মনে করে থাকে।
ইসি, সিইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির নিকট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের যে আবেদন জানানো হয়েছে তা যদি বাস্তবায়িত বা প্রতিফলিত হয় তবে নির্বাচন কমিশন, কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়ে যে আলোচনা, সমালোচনা ও তীর্যকতা রয়েছে তা থেকে অনেকটা উৎকন্ঠা প্রশমিত হতে পারে বলে মনে করে দেশের মানুষ। দেশের নির্বাচন কমিশন যাতে প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচালিত হয় ইহাই মুখ্যম। অতীতে বিভিন্ন নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনার ও সিইসি নির্বাচন উপলক্ষে যে তামাশা, বদনাম ও দুর্নাম লেপন করেছে এ নিয়ে আসন্ন পৌরসভা ও তৎপরবর্তী সময়ে ইউপি ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে স্বচ্ছতার ব্যাপারে যে সন্দেহ অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে, জনগণ ও ভোটারের মধ্যে যে সন্দেহের দানা বাঁধছে এসব অতিক্রম করে যদি ভালো কিছু প্রদর্শিত হয় তবে হয়তো কমিশনের দীর্ঘদিনের এ দুর্নাম, বদনাম ও ভুল বোঝাবুঝির এ ক্যারিশমার অনেকটা অবসান হতে পারে। তাই দরকার স্বচ্ছ, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও কারচুপিমুক্ত নির্বাচনের ব্যাপারে ইসি ও সিইসির সমোজ্জল গণতান্ত্রিক, নিরপেক্ষ ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
তা না হলে দেশের জনগণ, ভোটার, গণমাধ্যম কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও মানুষের মুক্তচিন্তায় যদি এবারও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, কারচুপি ও প্রতিপক্ষকে তাড়িয়ে দিয়ে ও ভায়োল্যান্স সৃষ্টি করে পূর্বের নির্বাচনী সংস্কৃতি সামনে তাড়িত ও এগিয়ে চলে তবে দুঃখ বেদনার আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। আর তাতে রাজনৈতিক দলগুলো জড়িত হলে পরিস্থিতি কোন দিকে ধাবিত হয় তা বলা খুবই কঠিন ও জটিল বলে অনেকেরই ধারণা। বিচারপতি বি.এ সিদ্দিকির উক্তির সাথে সুর মিলিয়ে বলব, “আমার বুক গুলি করে ঝাঁঝরা করলেও জল্লাদের শপথ গ্রহণ করাবোনা। আমার জীবনের চেয়ে এদেশের স্বাধীনতা অনেক বড়।” তেমনি দেশের স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, অবাধ, নিরপেক্ষ কারচুপিমুক্ত নির্বাচন, গণতন্ত্র ও সংবিধানকে সুসংহত করারই দিকদর্শন। আর জমিদার হরিবলের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও অপরিনামদর্শিতা নিজেদেরকেই অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত করে থাকে। দুঃসময়ে কেহই পরিণতির ভাগীদার হয় না। যা জমিদার হরিবলের গল্প থেকে সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুটন ঘটেছে। ইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের ব্যাপারে যে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক আবেদন করেছেন, ইহা একটি ভালো উদ্যোগ। এ ব্যাপারে সবারই দেখা উচিত কি সিদ্ধান্ত হয়। যদিও সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরেও সিইসি কে.এম নূরুল হুদা বলেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পেন্ডিং রয়েছে। এ কথার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক। পরিশেষে বলব, রাষ্ট্রপতির নিকট পেশকৃত আবেদন সুরাহাসহ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন যাতে অবাধ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও কারচুপিমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হয় ইহাই জনপ্রত্যাশা। তদোপরি ইসি ও সিইসি কারও ব্যক্তিগত শত্রু নয় বা তাদের সাথে কারও জমিজমা নিয়েও বিরোধ নেই। তাছাড়া নির্বাচনে কোন ব্যক্তি বা দল জয়লাভ করল বা পরাজিত হল তাও দেখার বিষয় নহে। দেখার বিষয় একটাই স্বচ্ছ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তদোপরি নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিরপেক্ষ ও সাংবিধানিক পদেরই রক্ষা কবচ। কোনো অবস্থাতেই তাদের এ প্রবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও যদি কেহ প্রবিধান ভঙ্গ করে, তবে তা গণতন্ত্র ও সংবিধান লংঘনেরই শামিল। এছাড়া বিবেককে প্রশ্ন করলে এর উত্তর না পাওয়ার কথা নয়। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে সকল কিছুর উর্ধ্বে স্থান দেয়াই হোক আমাদের পাথেয়। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও দেশের সংবিধান (Constitution) প্রাণের চেয়েও কোন অংশে কম নহে।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট