ফরিদপুরের সালথায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধ শাতাধিক আহত হয়েছে। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিবাদমান এ দুই পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক ইউপি দুই চেয়ারম্যান। এরা দুজনই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপট্টি ও মাঝারদিয়া গ্রামে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামানের এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বিরোধ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। ওই দুই নেতাই সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাহিদুজ্জামানের সমর্থকদের সাথে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুরর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। বিকেল থেকে শুরু হওযা এ সংঘর্ষ রাত পর্যন্ত চলে। শুক্রবার সকালেও উভয় পক্ষের সমর্থকরা আবারো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সকালে কুমারপট্টি গ্রামে আবারো কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হলেও সেখানে সংঘর্ষে কোনো ঘটনা ঘটেনি।
শুক্রবার দুপুরে আবারও সংঘর্ষ হয় দুই পক্ষের মধ্যে। এ সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যাক্তি আহত হন। এ সময় অন্তত ১৫টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড, ১৪টি কাঁদানে গ্যাসেল সেল ফাটিয়ে এবং শর্টগানের ৫৬টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সংঘর্ষে আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল ও নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত এর আগে গত বৃহস্পতিবার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপট্টি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষে ৬জন পুলিশসহ ৩১ জন আহত হন।
মাঝারদিয়ার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কুমারপট্টি গ্রামের সংঘর্ষে সাবেক চেয়ারম্যান সাহিদুজ্জামানের সমর্থকরা অংশ নেয়। সংঘর্ষ শেষে সেখান থেকে ফিরে গ্রামে এসে আমাদের সমর্থক আতিকুর রহমানকে মারধর করে। এনিয়ে বিকালে সংঘর্ষ হয়। শুক্রবার সকালে আমাদের আরেক সমর্থক মিজান শেখ পেঁয়াজের হালি চারা বিক্রি করতে গেলে মাঝারদিয়া বাজারে তাকেও মারধর করে সাহিদুজ্জামানের সমর্থকরা। এনিয়েই ফের সংঘর্ষ শুরু হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মাঝারদিয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাহিদুজ্জামান বলেন, কুমারপট্টি গ্রামের সংঘর্ষ শেষে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সমর্থকরা আমাদের সমর্থক জিনায়েত মোল্লার বাড়িঘর ভাঙচুর করে এবং আমাদের সমর্থকদের ধাওয়া দেয়। এরপর থেকে মুলত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। আমি এলাকা শান্ত রাখার জন্য সব সময় পুলিশের সাথে যোগাযোগ রাখছি।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ বলেন, মাঝারদিয়া গ্রামের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে ৫৬ টি শর্টগানের গুলি, ১৪টি টিয়ার সেল ও ২টি সাউন্ড গ্রেনেট ছোঁড়া হয়। তিনি বলেন, এলাকায় এখন পর্যন্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকালে মাজারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপট্টি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হন ছয় পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ্য করে এবং অজ্ঞাত ২৫০ জনের নামে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের উপার হামলা ঘটনায় শুক্রবার সকালে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।