গত সাত জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার বর্তমান মেয়াদে দুই বছর পূর্তি ও তিন বছরে পদার্পণ করল কোন অনাড়াম্বর অনুষ্ঠান ছাড়া। নীরবে-নিভৃতে দিনটি কেটে গেল। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে শেখ হাসিনা তার সরকার আমলে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ভাষা চিত্র তুলে ধরেন।
এ দিনই শেখ হাসিনার সরকার টানা একযুগ পূর্ণ করলো। টানা তৃতীয় বার এবং দেশের ইতিহাসের চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তার নেতৃত্বে। তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দেশের প্রধান ও পুরাতন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের কাউন্সিলে তাকে সভাপতি নির্বাচন করা হলে, তিনি ১৯৮১ সালে দেশে এসে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই থেকে তিনি দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ১৯৮৬-১৯৯১ ও ২০০১ সালের সংসদে বিরোদী দলের নেতা ছিলেন। এবং দায়িত্ব নেয়া পর থেকে চলমান সময় প্রযন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশের তো বটেই সারাবিশ্বের এত দীর্ঘ সময় কোন নারীর ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। আর এই দীর্ঘ সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা। এডিবি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে উপমহাদেশের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে সর্বত্রই ডিজিটাইজেশন, মানবিকতা, শিল্পায়ন, জীবন মানের উন্নয়ন, কৃষি আধুনিকায়নে সাফল্যের শিখরে উঠেছে দেশ।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখে সামাজিক সমৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে পরিবেশ-উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি, সবক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে। পর্যবেক্ষক মহল বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং একের পর এক তার সাহসী পদক্ষেপ কার্যত এই অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের নামে জ্বালাও-পোড়াও বিশৃঙ্খল রাজনীতিকে আইনের শিকল পরিয়ে তিনি কার্যত রাজনৈতিক দলকে মাজা ভাঙ্গা সাপ বানিয়েছেন। বৃহৎর.. রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলের ঘানি টেনে এখন ঘরে নিরব। তার ছেলে তারেক জিয়া শাস্তি মাথায় নিয়ে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। আর দলীয় নেতারা ঘরে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের সমালোচনা করলেও রাজপথে আজ পর্যন্ত কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছেন না। তাদের তর্জন-গর্জনই শেষ। আর তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে শেখ হাসিনার সংসদে গৃহপালিত বিরোধীদল বানিয়ে ছেড়েছেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর সেটা পারিবারিক বল হয়ে উঠেছে। পরিবারের লোকজন নিজেদের দলের পদ-পদবি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছেন। নিজেদের মধ্যে লভিং করে দলকে দূর্বল করছেন। আর অনান্য দলগুলোকে মহাজোটের ছাতার তলে এনে সবার মুখে কুলুব এঁটে দিয়েছেন।
সাম্প্রদায়ী শক্তি জামাতের শীর্ষ নেতাদের মানবতা বিরোধী অপরারে শাস্তি হওয়ায় কর্যত দলটি এখন নিস্ক্রয়। ছোট-খাটো বাম ঘরানার রাজনীতিক দল মুখে সরকারের সমালচনা করলেও আন্দলোন গড়তে কার্যত কোন উদ্যোগ নেই। কাজেই রাজনৈতিক মাঠ শান্ত। ঘরে বসে হুমকি-ধামকি দিয়ে বিরোধীরা তাদের মুখ রক্ষা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, সহশিক্ষা স্বাস্থ্য লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাকশিল্প, ওষুধ শিল্প ও রফতানি আয় বৃদ্ধি সহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল সহ
দেশের মেগা প্রকল্প গুলো ক্রমান্বয়ে, দৃশ্য মান হওয়ায় শেখ হাসিনার সাহস ও সিন্ধান্ত গ্রহনের দক্ষতার প্রসংশা করছেন সবাই। আসলেই গত এক যুগের আর্থ সামাজিক সহ অনান্য খাতে দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন, অগ্রগতির ও মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটেছে। ২০০৮ সালে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬.২৫ ডলার আর এখন মাথাপিছু আয় দারিয়েছে দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। দারিদ্রের হার ৪১.৫ থেকে ২০% এবং অতি দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ থেকে ২০২০পর্যন্ত ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দারিয়ে ২৪ হাজার চারশ একুশ মেগাওয়াট। বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করে সমাজ ও অর্থনীতির নানা সূচকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেল করোনা মহামারী। দীর্ঘদিন চলা লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে অনেক শিল্প ও সেবা খাত।
রফতানির উচ্চ প্রবৃদ্ধির বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পও নেমে এসেছে দূর্দিন।
এসব খাতে অনেকেেকই চাকরি হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। ঋণের কিস্তির পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো ও ঋণের সুদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। এসব নীতি সহায়তা কারণে অর্থনীতির ওপর আসা আঘাত অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সরকার আবারও প্রণোদনা প্যাকেজের কথা ভাবছে।
সারাবিশ্বের অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সরকারপ্রধানরা শেখ হাসিনা সম্পর্কে প্রশংসা করছেন। তারা বলছেন শেখ হাসিনা শুধু স্বপ্ন দেখেন না, জাতিকে ও স্বপ্ন দেখান এবং তা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক গবেষকদের মতে আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করার মতো অবস্থায় নেই বিএনপি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের সব কয়টা ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। শুধুমাত্র বিদ্যুৎখাতের সাথে তুলনা করলে জনগণ আওয়ামী লীগের বিকল্প চিন্তা করতে পারেনা। ভারতীয় বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ফেলো শ্রী ধরা দত্ত বলেন সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক সাময়ীকী দি ইকোনমিস্ট শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা করলেও গত নভেম্বরে তারা লিখেছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অভুতপূর্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। যা ভারত ও পাকিস্তান অপেক্ষা বেশি। ইকোনমিস্ট আরো বলেছে সামগ্রিকভাবে জনগণ সরকারের কজে খুব খুশি। সামরিক অভ্যুত্থানে কোনো সম্ভাবনা নেই। ইকোমিস্ট’র এ কথা থেকে বুঝতে অসবিধা হয়না যে, নিবার্চনে অন্যান্যের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন বিএনপি'র আমলে বিদ্যুতের কারণে সমস্যা হচ্ছিল। বিশেষ করে পোশাক খাতে বেশী সমস্যা হচ্ছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুতের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেন। ফলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। শ্রী ধরা দত্ত আরো বলেন, দারুন সব কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু পদ্মা সেতু নয়। রাস্তা-ঘাট. রেল সহ সারাদেশে অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে। ঢাকার মতো শহরের গন পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এতে যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি তার সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিচার্স.. অন ইন্টার্নেশনাল ইকোনমিক রিলেশন্স-এর অধ্যাপক ডক্টর অর্পিতা মুখার্জি বলেন, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা যখন বাংলাদেশ ঘুরে ভারতে আসেন তখন তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করেন বাংলাদেশে তাদের অনুদানের টাকা এত ভালোভাবে খরচ করতে পারে। ভারত কেন পারছেন না। তখন কি উত্তর দেবো বুঝতে পারিনি না। ড. মুখার্জি আসলে মনে করেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অনেক উত্তরণ হয়েছে। তারা খুবই অ্যাকাডেমিক হয়ে উঠেছে। যেমন ধরুন তারা এখন দুবাই কুয়েতে লেবার পাঠায় না। তারা এখন পেশাদারদেরও পাঠাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষণ। গত এক দশকে কৃষি নির্ভর অর্থনৈতিক দেশ থেকে অনেক আপডেট হয়েছে। আর এই কৃতিত্ব শেখ হাসিনা কে না দিয়ে উপায় নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকটেংক সেন্টার ফর ইকোনমিস্ট-বিজনেস (সিইবিআর) বলছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৮ তম রড় অর্থনীতির দেশ হবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, দলমত নির্বশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করেছেন। সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছেন। বাঙ্গালী জাঁতি তাকে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তিনি ফাদার অফ ন্যাশন হয়েছেন। অন্যদিকে তার কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। ক্ষুধা দারিদ্র বিদায় করে বিল্ডার অফ দ্যা ন্যাশন হয়ে উঠেছেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তাদের শাসনআমলে জিয়া ও এরশাদকে বিল্ডার অফ ন্যাশন হিসেবে ঘোষনা করতে চাইলেও রাজনৈতিক উত্তাপে আর সম্ভব হয়নি। আজ সময় এসেছে প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিল্ডার অফ ন্যাশন ঘোষণা দেয়ার।