উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি বিজরিত এলাকার নাম কাকিনা ইউনিয়ন। দির্ঘদিন থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন এই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজার হাজার মানুষ। এই ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ওই বাশেঁর সাঁকো।
একটি সেতুর অভাবে তিন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষেরর দুর্ভোগ আজ চরমে। সেতুটি নির্মাণ হবে সেই অপেক্ষায় আছেন মুক্তিযুদ্ধের সেই সূর্যসন্তানেরা।
জানা যায়, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের পূর্ব রুদ্রেশ্বর মন্ডল পাড়া এলাকায় প্রবাহিত তিস্তার শাখা নদীর উপর বহুবছর পূর্বে নির্মিত হয় একটি বাঁশের সাঁকো। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই শাখা নদীর ওপর এলাকাবাসী নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিবছর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেই যাতায়াত করে আসছেন। সেই বাঁশের সাঁকোটিও এখন নড়বড়ে অবস্থা। এই সাকো দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকে ছোটখাটো দুর্ঘটনার কবলেও পড়েছেন।
রোববার (১৭ জানুয়ারী) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী পারাপারে একমাত্র মাধ্যম একটি পুরাতন বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটির ছবি তুলতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে বলা হচ্ছিল ছবি তুলে কি করবেন? আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেখার মত কেউ নেই। এর আগেও আপনার মতো অনেকে ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। এর পরেও আমাদের এই দুর্দশার পরিবর্তন হয়নি। এভাবে সাঁকোটির মাঝ পথে ছবি তোলা অবস্থায় কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন ৭০/৭৫ বয়সের এক বৃদ্ধ।
তার সঙ্গে কথা বলতেই তিনি আক্ষেপ করে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন করেছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীন দেশের স্বাদ পেলাম না। নাম তাঁর ক্বারি মোঃ আব্দিল কুদ্দুস। তার সাথে একই গ্রামের স্কুল শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম ও জানু মন্ডল তিনজনই মুক্তিযুদ্ধে অংশহণ করেছিলেন। তিন বীর মুক্তিযোদ্ধাই বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের তিনজনকেই এখনো বেঁচে রেখেছেন।
এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। জানি না আমাদের জীবদ্দশায় এখানে একটি সেতু হবে কি না আর হলেও আমরা তা দেখে যেতে পারবো কি না?
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, ৪ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ঐ এলাকার সওদাগর মন্ডল, নুর ইসলাম, মোজাম্মেল হক সোনা মিয়াসহ আরও অনেকে বলেন, নির্বাচনের সময় ব্রীজ করে দিবে বলে সবাই আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়ে যায়। এলাকাবাসী ভোট দেয় প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় কিন্তু এখানে ব্রীজ আর হয় না! জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করে শুধু প্রতিশ্রুতিই পাওয়া গেছে কিন্তু বাঁশের সাঁকোটির পরিবর্তে এখানে আজ পর্যন্ত একটি সেতু নির্মান করা হয়নি। কবে নির্মাণ হবে তার কোনো নিশ্চয়তাও দিতে পারেননি কেউই। তবে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের বার বার ডেকে এনে দেখানোর পরেও সেতু র্নির্মানের নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। তারা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেলেন কিন্তু কেউ কথা রাখলেন না।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বিষয়টি জানা ছিলো না তবে যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানতে পেলাম দু-একদিনের মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে দেখে এলাকা পরিদর্শন করে সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, যত দ্রত সম্ভব জনগনের কষ্ট লাঘবে সেখানে দ্রুত একটি ব্রীজ নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, দির্ঘদিন থেকে সেখানে সেতু নির্মান না হওয়ার জন্য ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা দায়ী। আর বিষয়টি তার জানাও ছিল না। যেহেতু আজ তিনি জানতে পারলেন বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন এবং যত দ্রুত সম্ভব সেখানে একটি ব্রীজ নির্মানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।