মানব শব্দটির সমার্থক শব্দ মানুষ। মানুষ এই বিশ্বের চালিকা শক্তি। বিশ্বের যত সুন্দর যত অসুন্দর সব মানুষের হাতে। মানুষই এটম বোমা বানিয়ে পৃথিবীর বুকে তান্ডব খেলেছে। আবার এই মানুষই তাজমহল নির্মাণ করে পৃথিবীর বুকে সুন্দরের মহিমা ছড়িয়েছে। কাজেই মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সম্পদ। মানব সম্পদ। সঙ্গত কারণেই মনে প্রশ্ন জাগে একজন মানুষ তাহলে জন্ম নিয়েই কি পৃথিবীর সম্পদ হয়ে উঠে? না। একজন নবজাতককে পরিচর্যার মাধ্যমে দিনে দিনে সম্পদে গড়ে তুলতে হয়। যেমন করে স্বল্পমূল্যের কয়েকটি বীজ বোনার পর তাতে নানা রকম পরিচর্যার মাধ্যমে প্রথমে বীজটি অংকুরিত হয় এবং পরে তা ধীরে ধীরে মূল্যবান এবং বহুমূল্যবান সম্পদে উন্নীত হয়। একজন নবজাতক মানুষকেও তেমনি নানাবিধ পরিচর্যার মধ্য দিয়ে পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের সর্বোপরি পৃথিবীর মহামূল্যবান সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। আবার সুস্থ পরিচর্যার অভাবে রোপণকৃত বীজটি যেমন শুকিয়ে যায়, অংকুরিত হয় না তেমনি একজন মানুষও যথাযথ পরিচর্যা না পেলে সে সম্পদে পরিণত না হয়ে আপদে পরিণত হয়।
নানা রকম পরিচর্যা এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। আর এই নানারকমের একটি অন্যতম পরিচর্যা এবং প্রক্রিয়া হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা মানব সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উপায়। শিক্ষা ছাড়া মানুষকে সম্পদে পরিণত করার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে এই সত্যির স্পষ্টতা মেলে। যে দেশে শিক্ষার হার যত বেশী সে দেশ তত বেশী উন্নত। মানব সম্পদই সে সব দেশের চালিকা শক্তি।
এখানে শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা এই দুটি বিষয়ের উপর সার্বিক আর্থ সামাজিক উন্নয়ন নির্ভর করে। স্বাক্ষরতাও শিক্ষা। কিন্তু শুধু স্বাক্ষরতা জ্ঞান নিয়ে সার্বিক উন্নয়নের সফলতা লাভ সম্ভব নয়। সার্বিক উন্নয়নের সফলতা আনতে উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ ছাড়া কোন দেশেরই সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ শিক্ষিত মানব সম্পদ দ্বারা উচ্চতর পর্যায়ের উন্নয়নের অবকাঠামো নির্মাণ এবং উন্নত জীবন যাপন সম্ভব। এক্ষেত্রে কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
আর শুধুমাত্র সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় উচ্চশিক্ষাকে দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দেয়াও সম্ভব নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে তাই বহু পূর্বেই বেসরকারীভাবে উচ্চশিক্ষাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অবদানও রেখে যাচ্ছে যথেষ্টভাবে।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন প্রদান করে এবং ১৯৯৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৫টি অনুষদে ১৩টি বিভাগ নিয়ে স্ব-মহিমায় আত্মপ্রকাশ করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় “এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ”। যার মাঝে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য সকল বিভাগ বিদ্যমান। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি অন্যতম বেসরকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। উচ্চতর দক্ষজ্ঞান সম্পন্ন মানব সম্পদ তৈরীর এক অন্যন্য প্রতিষ্ঠান। সু পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন শিক্ষা প্রদান, মান সম্মত শিক্ষা প্রদান, দক্ষ ও উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন শিক্ষা কারিগর দ্বারা শিক্ষা প্রদান, স্বল্প শিক্ষাখরচে আপামর জনগোষ্ঠিকে উচ্চ শিক্ষিত করে তোলা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন দক্ষ ও উন্নত মানব সম্পদ রুপে গড়ে তোলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরণের সহশিক্ষা কার্যক্রম। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার প্রদান, নিয়মিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ, শিক্ষা সফর ইত্যাদি। সাহিত্য প্রতিভা বিকাশের জন্য রয়েছে নিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা।
খুবই আনন্দের বিষয় এই যে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে অনেক বিদেশী শিক্ষার্থীরাও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর শিক্ষার্থী ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা নিয়ে বিদেশের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যয়ন করছে। তৈরী হচ্ছে উন্নত মানব সম্পদ।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক। যিনি তাঁর সারা জীবন শিক্ষাগ্রহণ এবং শিক্ষা প্রদানের মধ্য দিয়েই অতিবাহিত করেছেন। তাঁর শিক্ষা জীবনও অত্যন্ত বর্ণাঢ্য।
এই বিশ্ববিদ্যিালয়ের বহু শিক্ষার্থী আজ এখান থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে উন্নত ও দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত হয়ে দেশে ও বিদেশে সর্ব পর্যায়ের কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছে। এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসহ সার্বিক উন্নয়নে সফলতার সাক্ষর রাখছে।
দেশে এবং বিদেশে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর কয়েকজন মানব সম্পদের পরিচয় এখানে তুলে ধরা হলো। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম লিটন সর্বোচ্চ করদাতার তালিতায় আছেন। দেশবরেণ্য কবি জামশেদ ওয়াজেদ বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এক্সিিিকউটিভ ডাইরেক্টর লুৎফুল আরেফিন খান ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহন চৌধুরী বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এর এডিশনাল সেক্রেটারি ও সিইও জাভেদ আহমেদ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হিরা মিয়া বাংলাদেশ আনসার এ- ভিডিপি’র ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল। ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের জয়েন্ট ডাইরেক্টর। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর অজস্র অজস্র অজস্র দক্ষ মানব সম্পদ সকল স্তরের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন দেশে এবং বিদেশে। এখানে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি। কম্পিউটার সায়েন্স এ- ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ড. জসিম উদ্দিন যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছেন। একই বিভাগের শিক্ষার্থী ড. দেওয়ান মোঃ ফরিদ ইউনাইটেড ইন্টারন্যানাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছেন এবং সুইনবোর্ণ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছেন ড. কাবেরী নাজরীণ। বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে অবস্থিত। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ড. আল আমিন শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর মানব সম্পদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশাসহ সকল স্তরের প্রশাসনিক পেশায় নিয়োজিত আছেন।
এছাড়াও দেশের সকল স্তরের সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ, পদস্থ পদে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত ও দক্ষ মানব সম্পদ। রয়েছে শিল্প উদ্যোক্তা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। রয়েছে দেশবরেণ্য সাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী।
আবারও বলছি, যে কোনো ধরণের উন্নয়নের কেন্দ্র হচ্ছে মানব সম্পদ। উচ্চশিক্ষা উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন মানব সম্পদ তৈরীর অন্যতম উপাদান। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সেই উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন মানব সম্পদ তৈরী করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ গর্বিত পদভারে অতিক্রম করছে ২৫ বছর। এই ২৫ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আজ দেশের আনাচে কানাচে দক্ষ মানব সম্পদ ছড়িয়ে আছে। অবদান রাখছে বিদেশের মাটিতেও। বয়ে আনছে দেশের জন্য সুনাম ও অর্থ।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ২৫ বছর পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক স্যারের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং অভিনন্দন। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করতে চাই। এই প্রত্যয় নিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
ড. রিটা আশরাফ
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ,
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ