রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রাওথা গ্রামের গৃহবধূ রুনা খাতুন তাঁর স্বামী শফিকুল ইসলাম (৪২) কে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তাঁর স্বামী বেশ কয়েক দিন ধরে জ¦রে ভুগছিলেন। ডাক্তার রোগী দেখে টাইফয়েডের ভিডাল টেষ্ট করতে বলেন।
তিনি স্বামীকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরোনোর পর এক লোক এসে প্রেসক্রিপশনটি দেখতে চান। দেখে বলেন, হাসপাতালের মেশিন নষ্ট, রেজাল্ট ভাল আসেনা। বাইরের এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার ফল ভালো আসে। ওই সময় রুনা খাতুন রোগী নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলেন যে সহজেই প্রভাবিত হয়ে যান। ওই লোকের পরামর্শ অনুসারে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪০০ টাকায় ভিডাল টেষ্ট করে আসেন। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন এ পরীক্ষাই হাসপাতালে হচ্ছে মাত্র ৮০ টাকায়।
একই ধরনের অভিযোগ করেন ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের মিজানুর রহমান। তিনি জানান, তাঁর এক নিকট আত্মীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে প্রতিটি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও দালালেরা তাঁকে বাইরের রোগনির্ণয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার জন্য প্রভাবিত করেন। চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন অভিযোগ মেলে ভূরি ভূরি।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ফটক, জরুরি বিভাগের ভেতরে-বাইরে, বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের প্রায় প্রতিটি দরজার সামনে এবং অন্তর্বিভাগের সব কটি ওয়ার্ডেই দালালদের আনাগোনা।
সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা প্রতিনিয়তই এসব দালালদের খপ্পরে পড়েন। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লিনিকে ভর্তি করা থেকে শুরু করে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে প্রভাবিত করে এই দালালেরা।
তারা সরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা নেই, অল্প খরচে ক্লিনিকে ভালো চিকিৎসা হবে, সরকারি হাসপাতালে রোগনির্ণয়ের ব্যবস্থা নেই, অল্প খরচে অন্য জায়গায় সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে উল্লেখ করে রোগীর স্বজনদের বিভ্রান্ত করে ফেলে। উদ্বিগ্ন স্বজনদের অনেকেই দালালদের কথায় বিশ্বাস করে সরকারি হাসপাতাল ত্যাগ করেন এবং দালালদের দেখানো জায়গায় চিকিৎসা নেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দালালদের দৌরাত্ম্যে রোগী ও রোগীর স্বজনেরা দিশেহারা। যেখানে রোগী, সেখানেই হাজির হয়ে যায় দালালেরা। মূল ফটক থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত গোটা হাসপাতালজুড়ে রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য। রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট স্বেচ্ছাসেবক নাম দিয়ে প্রকাশ্যে দালালি করারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কয়েকজনকে।
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আশিকুর রহমান বলেন, দালালদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। আমরা প্রতিনিয়ত মাইকিং করে দালালদের হাসপাতাল ছাড়তে সতর্ক করেছি। স্থানীয় প্রশাসনকেও ব্যাপারটা জানিয়েছি।
এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, গত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে খুব দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।