কিশোরগঞ্জের বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। বাঁশ শিল্পের কারিগররা তাদের নিপূণ হাতে কারুকাজের মাধ্যমে বাঁশ দিয়ে তৈরি করে থাকেন গৃহস্থালি পরিবারের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। বাঁশের তৈরী ওই সকল পণ্য সামগ্রী তারা বিক্রি করতো আশপাশের হাট বাজারে। এ কাজ করে চলতো তাদের পরিবার। তাই বলা চলে তাদের জীবন-জীবিকার মুল হাতিয়ার বাঁশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের ভালবাসার জীবিকা বিলুপ্তি হতে চলেছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে আধুনিকতা। আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় চাহিদা হারাচ্ছে বাঁশের তৈরি শিল্প পণ্য। একসময় বাশেঁর তৈরি শিল্প সামগ্রীর ব্যবহার ও চাহিদা ছিল সবার মাঝে। এখন বাঁশের তৈরী পণ্যের স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিব প্লাস্টিকের পণ্য সামগ্রী। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবেশ বান্ধব বাঁশের পণ্য সামগ্রী ছেড়ে সবাই ঝুঁকছে এ দিকে।
বাঁশ পল্লী নামে পরিচিত সদর ইউনিয়নের কেশবা যুগি পাড়া গ্রাম। ওই গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এ পেশায় জড়িত। তাদের মধ্যে অনেকে আজ এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে অন্য পেশায়। বাদবাকি ১০ থেকে ১৫ পরিবার তাদের আদি পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছে। তবে এ পেশায় থেকে তাদের সংসার আর চলছে না বলে জানান অনেকে। বাঁশ দিয়ে তারা গৃহস্থালি পরিবারের ডালী, কুলা, চালুন, ডালা, খাচা, শিশু কিশোরদের খেলনা হিসেবে ছোট কুলা, ফুলতোলা চালুন, দোন, পাল্লা, বুননে ব্যস্ত সময় কাটালেও জীবন পাতায় সৌখিনতার ছোঁয়া লাগেনি তাদের। বর্তমানে দু’মুঠো খাবারের জন্য নিরলস কাজ করছেন তারা। তাদের বেঁচে থাকা মানে দু’বেলা খেয়ে পরে থাকা। ওই গ্রামের সুভারাণী, সুমিত্রা রাণী, অমল চন্দ্র দাস জানান, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, বাঁশের সংকট, দাম বৃদ্ধি, বাজারে প্লস্টিক পণ্যের সয়লাবের কারণে আমাদের বাপ-দাদার পেশার ঐতিহ্য আজ হারাতে বসেছে। নানামূখী সংকটের মাঝেও বাপ দাদার পেশা ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাট-বাজারে বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর অন্য পেশায় নারীদের কারিগারি কোন জ্ঞান না থাকায় পেশা পরিবর্তনও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিলুপ্ত প্রায় এ শিল্পটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে অনেকেই এ পেশা ছাড়তে শুরু করেছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে অদূর ভবিষ্যতে এ পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকাবাসি।