রাজশাহী জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মোট ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলা এখন করোনার অন্যতম হটস্পটে পরিণত হয়েছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে সচেতনতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সাইফুল ফেরদৌস। বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহীর বর্তমান করোনা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ইতিমধ্যেই হাসপাতালের ২৫ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডটি করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করে চালু করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে চিকিৎসার সরঞ্জামও। রোস্টার করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানে কেবিন ও আইসিইউতে রোগী পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আর এমনভাবে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জায়গাসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছু দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করতে হবে। যে কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তবে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেতনতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘন্টায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার দুপুরে হাসপাতালের আইসিইউতে তারা মারা যান। মৃত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম মাহাবুল ইসলাম (৪৫)। তিনি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের নামাজগ্রাম এলাকার মৃত জেকের আলীর ছেলে। তিনি একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। আর অপর জনের নাম পরিচয় তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি। তবে তার বাড়ি পাবনা জেলায় বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মৃত মাহাবুল ইসলাম ঝিনাইদহতে বেসরকারি গ্রামীন ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। সেখানেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হলে গত রোববার রাতে এ্যম্বুলেন্সে করে সরাসরি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আসে। তাকে প্রথমে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আইসিইউতে ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাবুল ইসলাম মারা যান। এরপর রাতেই লাশ নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অপরজন বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মারা যান।
ডা. সাইফুল ফেরদৌস আরো বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য ৪ জন হলেন- রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আরিফুল (৪৩), নওগাঁ জেলার রাজ্জাক (৬০), রাজশাহী মহানগরীর দড়িখরবোনা এলাকার রেজাউল করিম (৫২) ও সালেক (৬০)। বর্তমানে হাসপাতালে ৪০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। যাদের মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ৮ জন।
এদিকে, বুধবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাবিবুল আহসান জানান, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে, রাজশাহী জেলায় ২৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২, নওগাঁ ২৪, নাটোর ৫, জয়পুরহাট ৪, বগুড়া ৫০, সিরাজগঞ্জ ২৬ ও পাবনায় ২০ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়- রাজশাহী জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মোট ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিভাগের আট জেলায় এ পর্যন্ত ৪১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৯ জন মারা গেছেন রাজশাহীতে।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ২৭, নাটোরে ১৪, জয়পুরহাটে ১০, সিরাজগঞ্জে ১৮ এবং পাবনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আর গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩৬ জন। আর এই বিভাগে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৫৬ জন। এদের মধ্যে ২৪ হাজার ৯৪৭ জন সুস্থ হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১৭৬ জন।