করোনা প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি রোধে সরকার বিগত ২৯ মার্চ দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিদেশফেরত যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তার পরদিন ৩০ মার্চ শুধু যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের যে কোনো দেশ থেকে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা জারি করা হয়। তারপর ৩১ মার্চ নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ এবং আরো ১২টি দেশ থেকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। ওই ১২টি দেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, ব্রাজিল, চিলি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, পেরু, কাতার, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। কিন্তু বিদেশফেরতরা সরকারি ওই নির্দেশনা মানতে অনীহা দেখাচ্ছে। বিমানবন্দরে পৌঁছে ওসব বিদেশ ফেরতরা কোয়ারেন্টিনে না যাওয়ার বিষয়ে বাগবিত-া, চিৎকার-চেঁচামেচি, এমনকি বিক্ষোভ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরা কর্মসূচির আওতায় গত রোববার রাতে লেবানন থেকে ২৭৮ জন বাংলাদেশী দেশে ফেরে। তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেই কোয়ারেন্টিনবিরোধী বিক্ষোভ করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পরদিন দুপুরে তাদের কোয়ারেন্টিনে নিতে সমর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবারও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ওইদিন সকালে যুক্তরাজ্য থেকে আসা দুই শতাধিক যাত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে কোয়ারেন্টিনে না যাওয়ার বিষয়ে বাগবিত-া শুরু করে। একপর্যায়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে তারা হেলথ ডেস্কের সামনে অবস্থান নেয়। স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যরা ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কোয়ারেন্টিন নিয়ে এমন পরিস্থিতিতেই পড়তে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর পর সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গত ৩১ মার্চ কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী ২জনকে ৭ দিনের কারাদ-সহ ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ওই দুজনই ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী। তার আগে গত ২০ মার্চ সিলেটের এক হোটেল থেকে একই পরিবারের ৯ সদস্য কোয়ারেন্টিন অবস্থায় পালিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। আর অতিসম্প্রতি বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টিনবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেয় প্রবাসীদের স্বজনরাও। নিয়ম অনুযায়ী বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে। কিন্তু বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে যেতে অনীহা নিয়ে নানা কর্তৃপক্ষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী ও এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সহযোগিতায় বিদেশফেরতদের আশকোনা হজ ক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোপ ও ১২ দেশ থেকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হলে গত ১ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের সঙ্গে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে ১৫ জানুয়ারি ৪ দিন এবং তারপর ৭ দিন কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে বিদেশফেরতদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, লেবাননফেরত যাত্রীরা কোয়ারেন্টিনে না যাওয়ার জন্য উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ করে। ওই সময় তাদের স্বজনরাও আবেগে উত্তেজিত হয়। তবে সবাইকে বুঝিয়ে শান্ত করার পর ফোর্সের প্রোটেকশনে দুপুরের দিকে যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমান জানান, বিদেশফেরত কিছু যাত্রী কোয়ারেন্টাইনে যেতে রাজি হচ্ছিল না। এ নিয়ে বিমানবন্দরে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে সেনবাহিনী ও আমর্ড পুলিশের সহায়তায় তাদের গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।