গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ নদের শাখা আন্দারুল খাল থেকে গত ১৯ মার্চ উদ্ধার হওয়া অর্ধগলিত লাশের নাম পরিচয় ও হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ।
হত্যাকান্ডে জড়িত আতাউল হোসেন (৩৫) নামে একজনকে গত রোববার গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত আতাউল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার রামনগর গ্রামের মৃত ইমাম হোসেনের ছেলে।
তার ভাষ্য মতে, পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে রাজধারীর তুরাগ থানার কামারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল সরকারকে (১৪) হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয় অপহরণকারী চক্রটি। নিহত ইসমাইলের বাবার নাম নূর নবী সরকার। তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার ধানঘরা গ্রামে।
সোমবার দুপুরে টঙ্গী পশ্চিম থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম জানান, গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় তুরাগ নদের শাখা আন্দারুল খালের পানিতে ভাসমান অবস্থায় এক ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরনে নীল রঙের জিন্স প্যান্ট এবং নীল রঙের টি শার্ট ছিল। তার দুই চোখ জখমপ্রাপ্ত এবং ডান চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। লাশ পানিতে থাকায় শরীরের বেশির ভাগ জায়গা ফুলে পচে বিকৃত হয়ে যায়। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর পর পুলিশ রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশের (অপরাধ দক্ষিণ) তত্ত্বাবধানে টঙ্গী পশ্চিম থানার একটি চৌকস তদন্তকারী দল ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং আসামি গ্রেফতারের জন্য কাজ শুরু করেন।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলাটি তদন্তকালে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিহতের পরিচয় জানার জন্য গাজীপুর মহানগরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ভিকটিমের ছবিসহ বেতার বার্তা পাঠায়। রেল-বাসস্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমের পয়েন্টে ভিকটিমের ছবি প্রিন্ট করে টানিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভিকটিমের ছবি প্রচার করা হয়। একপর্যায়ে তদন্তকালে ডিএমপির তুরাগ থানায় গত ১৮ মার্চ দায়ের করা নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি সাধারণ ডায়েরির তথ্য অনুসন্ধানে যায় তদন্তকারী দলটি। ওই সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরেই ভিকটিমের অস্থায়ী ঠিকানা তুরাগ থানার কামারপাড়ায় গিয়ে ভিকটিমের বাবা-মাকে ছবি ও তার ব্যবহৃত জামা কাপড় দেখায়। ভিকটিম যে সেলুনে নিয়মিত চুল কাটাতো সেই সেলুনে গিয়ে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে। পরে পুলিশ ভিকটিমের বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামি আতাউল হোসেনকে রোববার গ্রেফতার করে। আতাউল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে। পরে তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
স্বীকারোক্তিতে তিনি জানান, তিনি ও তার আরো দুই সহযোগি স্কুলছাত্র ইসমাইলের বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশে তাকে অপহরণ করে। অবশেষে তারা মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে ইসমাইলকে হত্যা করে লাশ খালের পানিতে ফেলে দেয়।