দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছরেও শেরপুরের ঝিনাইগাতীর কালাঘোষা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হয়নি। অবসান হয়নি হালচাটি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচলের দুভোর্গ। সেতু নির্মিত হলে বদলে যাবে গ্রামবাসীদের জীবনমান।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি গ্রামের কৃষক আদিবাসী সুরেন্দ কোচ বলেন, দেশ স্বাধীন অইলো। আমগোর গ্রামডা দুই ভাগ অইলো। অর্ধেক ভারতে। আর অর্ধেক আমরা। ৫৩ বছর অইলো। অহনও আমরা আগের মতোই। আমগোর দু:খ কেউ দেহেনা। এডা সেতুর লাইগা আমরা কত নেতা, মেম্বার চেয়ারম্যানরে কইলাম। কেউ দিলো না। এডার লাইগা মেলা কষ্ট অয়। পোলাপানগোরে কষ্ট আরো বেশি। কালাঘোষা নদীর ওপর এডা সেতু অইলে এই কষ্ট করতে অইবো না। তার প্রতিবেশী প্রেমানন্দ কোচ বলেন, ভোটের লাইগা অনেকে আয়ে। মেলা কতা কয়। সেতু দিব।
ভোট অইলে আর আয়েনা। একই গ্রামের আদিবাসী নারী নাইবালী কোচ বলেন, বেডা মানুষরা কাপর তুইলা যাইতে পারে। আমরাতো কাপর ভিজাইয়া যাই। এই সেতু অইলে আমগোর মেলা উপকার অইবো। তিনি আরও বলেন, বর্ষাকালে মাঝে মধ্যেই জোয়ার আসে। নদীতে পানি ভইরা যায়। অহন চলাচল করতে পারিনা। কোনো মানুষ অসুখ অইলে চিকিৎসাও করাতে পারি না। ছেলে মেয়েরা পড়ালেহা করতে যাইতে পারে না। হাতির সমস্যাতো আছেই। এভাবেই আক্ষেপ করে ওই নারী আরও বলেন, আমরা কি সারাজীবন এভাবেই কষ্ট করমু ?
গ্রামবাসীরা জানান, হালচাটি গ্রামে প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসবাস। প্রায় সবাই আদিবাসী। তবে কোচ সম্প্রদায়েরই পরিবারের সংখ্যাই বেশি। গ্রামটির উত্তরে ভারতের বারাংগাপাড়ার হালচাটি গ্রাম। স্বাধীনতার আগের একই গ্রাম ছিল। পরে সীমানা ভাগ হলে গ্রামটি ভাগ হয়ে যায়। গ্রামের মাঝ দিয়ে হয় কাটাতারের বেড়া। বিভক্ত হয়ে পড়ে গ্রামবাসীরা। ভারত থেকে এ গ্রামের মাঝ দিয়ে নেমে এসেছে কালাঘোষা নদী। শুকনো মৌসুমে এ নদীতে থাকে হাঁটু পানি। বর্ষা এলে মাঝে মধ্যে আসে জোয়ার। পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে নদী। কয়েকদিন বন্ধ থাকে হালচাটিসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচল। চরম বিপাকে শতশত মানুষ। তাদের চলাচলের সড়কটিও দু’পায়ে পাহাড়ি পথ। চলেনা কোনো যানবাহন।
স্থানীয় শিক্ষক যুগল কিশোর কোচ বলেন, কেউ অসুস্থ্ হলে তাকে কাধেঁ করে নিতে হয় প্রায় এক কিলোমিটার। এরপর বর্ডার সড়ক। আমরা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্ভোগের কথা বলি। তারা শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এখানে সেতু হলে হালচাটি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচলে দুভোর্গের অবসান হবে। বদলে যাবে গ্রামবাসীদের জীবনমান।
এ ব্যাপারে উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকসী বলেন, আমরাতো কোনো বরাদ্দ পাইনা। চেয়ারম্যানরা উদ্যোগ নিলে ত্রাণের টাকায় সেতু করতে পারে।
এ বিষয়ে কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, সেখানে প্রশাসনের লোকজনসহ বিজিবির সদস্যরাও চলাচল করে। বর্ষা এলে চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই সেখানে সেতু নির্মাণ হবে।