করোনায় দেশের যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর অন্যতম হলো পোলট্রি খাত। বস্তুত পোলট্রি খাতের কয়েক লাখ প্রান্তিক খামারির অবস্থা এখন চরম সমস্যাক্রান্ত। তারা নিপতিত হয়েছেন উভয় সংকটে। একদিকে পোলট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে কমেছে মুরগি ও ডিমের দাম। গত বছর পোলট্রি ফিডের দাম টনপ্রতি ছিল ৩১ হাজার টাকা, তখন ডিমের দাম ওঠে ৭-৮ টাকায় আর এ বছর পোলট্রি খাদ্যের টন ৪১ হাজার টাকা, অথচ ডিমের দাম কমে নেমে এসেছে ৪-৫ টাকায়! লকডাউনে কমেছে মুরগির দাম। এ অবস্থায় দেশের কয়েক লাখ প্রান্তিক খামারি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। লকডাউনে পোলট্রি খামারিদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ও সরবরাহ দুটিই পড়েছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। অবশ্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেছেন, লকডাউনে প্রান্তিক খামারিরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, সে জন্য ভিন্ন চিন্তা করা হচ্ছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে পণ্য বাজারজাতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, পরিবহণ ও বিক্রির ব্যবস্থায় সব ধরনের সহায়তা করা হবে। সচিব মহোদয়ের এ আশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন কতটা হয় তা দেখার বিষয়। তবে আমরা মনে করি, পোলট্রি ফিডের মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা। পোলট্রি ফিডের অন্যতম উপকরণ ভুট্টার মৌসুম চলছে এখন। ভুট্টার মৌসুমে পোলট্রি ফিডের দাম বাড়াটা অযৌক্তিক বটে। পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, করোনায় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনিতেই উৎপাদন মূল্য পাচ্ছেন না তারা, তার ওপর পোলট্রি ফিডের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। স্মারকলিপিতে পোলট্রি ফিডের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে। আমরা এ দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই। পোলট্রি দেশের অন্যতম শিল্প খাত। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ ও তাদের জীবিকা। এটি মানুষের অন্যতম খাদ্য চাহিদা প্রোটিনের উৎসও বটে। তাই এ খাতকে শুধু বাঁচিয়ে রাখা নয়, এর শ্রীবৃদ্ধিও ঘটানো উচিত। করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে শুরু হয়েছে এর দ্বিতীয় ঢেউ। একদিকে পোলট্রি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে লকডাউনজনিত ব্যবসায়িক সংকট-দুয়ে মিলে পোলট্রি খাত যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তা থেকে উত্তরণে যা যা করা দরকার, তার সবই করতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। এর সঙ্গে লাখ লাখ খামারি ও কোটি কোটি ভোক্তার স্বার্থ জড়িত।