‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গো-খামারিরা দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এমনিতেই গত বছর থেকে নানা সমস্যায় পড়েছেন গরুর খামারিরা। আর এখন প্রথম দফায় ৭ দিনের পর দ্বিতীয় দফার এই সর্বাত্মক লকডাউনে চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। অনেকেই এন শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি। গত বছর করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে ক্রমাগত গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সে অনুপাতে দুধের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন খামারিরা।
এ ছাড়াও উচ্চমূল্যে কেনা অধিকাংশ গো-খাদ্যে রয়েছে ভেজাল। যা খাওয়ানোর পর নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপুশু। চাহিদা মোতাবেক ডাক্তার না থাকায় রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে দুধের উৎপাদন। প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে গাভীগুলো। অনেক খামারি তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন গাভীগুলো রোগাক্রান্ত হওয়ায় স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা চলতি বছর করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পে সারা দেশে লকডাউন শুরু হওয়ায় উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন খামারিরা। খামারিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সরকারের প্রণোদনা ঋণ নিতে গেলেও উল্টো হয়রানি পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। এ কারণেই চরম হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছেন এখানকার সমবায় ভিত্তিক খামারিরা।
উপজেলা ডেইরী মিল্ক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ও খামারি মোঃ আনিসুল হক বলেন, এই করোনার কারণে ভালো নেই আমাদের গো-খামারিরা। প্রতিদিন উপজেলার ছোট বড় প্রায় ১১ শত ৮৭টি খামার থেকে বছরে ২১ হাজার ৩ শত ৩৩ মেঃটন ও মাসে ১৭ শত ৭৭ মেঃটন লিটার দুধ উৎপাদন হয়। খামারের দুধ জেলার বিভিন্ন হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু গত ৯ দিন ধরে কোনো দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল না করায় নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে, আবার অনেকে দাম না পেয়ে রাস্তায়ও ফেলে দিচ্ছে। বর্তমান করোনার জন্য ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছি না। গত বছরে যে লোকসান হয়েছে, এ বছরে তার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। আমরা হয়তো আর খামার চালাতে পারবো না। আপদকালীন সময়ে উপজেলার ৩ টি স্থানে ৫০ টাকা লিটার দরে ভ্রাম্যমান ভাবে দুধ বিক্রি করা হচ্ছে। তাতে সমস্যা সমাধান হচ্ছেনা। অন্যদিকে ছোট ছোট খামারিরা গরু বিক্রি করার জন্য হাটে হাটে ঘুরছেন।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সরফরাজ হোসেন বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের জন্য আমার জেলার খামারিরা উৎপাদিত দুধ নিয়ে যাতে সমস্যায় না পড়েন সে কারণে আমি মিল্ক ভিটাসহ প্রাণ, আড়ং, এ্যাংকার, ঈগলু কোম্পানিদের বলেছি, এখন কোনোভাবেই দুধ কম নেয়া যাবে না। সেই সঙ্গে খামারিদের উৎপাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারে সঠিকভাবে বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যেসব খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারছেন না, তারা এই ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুধ দিচ্ছেন। এই গাড়ি আমাদের প্রাণীসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন।