করোনাকালে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মহামারির প্রভাবে ৪৮.৪৯ শতাংশ পরিবার থেকে অন্তত একজন কাজ হারিয়েছেন কিংবা কাজ পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কাজ হারিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন শহরের ৭৩.৩ শতাংশ মানুষ। গ্রামে এই হার আরো বেশি- ৯২.৫ শতাংশ। 'ফরমাল রিকগনিশন অব দ্য উইমেন্স আনকাউন্টেড ওয়ার্ক'-এর উদ্যোগে চালানো এক জরিপে উঠে এসেছে এই চিত্র। জরিপে দেখা গেছে, মহামারির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে ৭৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে। মাসে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করে এমন ৬৮ শতাংশ পরিবারে আয় কমেছে। ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করে এমন পরিবারে আয় কমেছে ৭৩ শতাংশ। মহামারির সময় সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেয়েছে শহরের ২২.৯৭ শতাংশ মানুষ। মহামারিতে নারীদের ঘরের কাজের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনার কারণে সৃষ্ট অভাবে পুরুষের তুলনায় নারীর সম্পত্তিই বেশি বিক্রি করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, করোনার আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এই চিত্র নিঃসন্দেহে হতাশা জনক। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশের লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস সংকটে অর্থনৈতিক পরিণতি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মহামারির কারণে স্বাস্থ্যগত ও লকডাউনের কারণে যে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে, তা মারাত্মক। এর ফলে দেশের অনেক মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। অনেকেই শহরে টিকতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে। গ্রামে গিয়েও তারা ভালো নেই। অনেকেই ঋণ করে চলছে। করোনার আগে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল, এর বেশির ভাগই সম্ভব হয়েছিল শ্রম আয় বৃদ্ধির কারণে। ২০১০-২০১৬ সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছিল। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমাচ্ছিল। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে করোনার ভয়াল থাবায় গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে- যা আমাদের জন্য নেতিবাচক বার্তা। আমরা মনে করি, দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনতে সব দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে। যারা প্রকৃত অর্থে গরিব হয়ে পড়েছে এবং সংসার চালাতে পারছে না, তাদের ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, করোনা মহামারির এই সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও একটি গর্বিত দেশ।