ফরিদপুরে এই প্রথম আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে পুষ্টি ও ওষুধি গুনাগুণের ভরপুর বারোমাসী সজিনার বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাগানটি দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। দূর দূরান্ত থেকে বাগান দেখতে আসছে দর্শনার্থীরা। আমাদের দেশে বানিজ্যিক সজনের বাগান খুব একটা চোখে পড়েনা। আর ফরিদপুর জেলাতে এটাই প্রথম বাগান। সজিনা সাধারণত আমাদের দেশে বাড়ির আশপাশে কিংবা পুকুরের চালায় রোপন করা হয়।
সম্প্রতি শহর তলীর হাটগোবিন্দপুর এলাকায় পতিত জমিতে সজনে চাষবাদ করে সাফল্য পেয়েছে তরুন উদ্যোগতা খন্দকার খালিদ বিন মোরশেদ। বীজ বপনের ৬ মাসের মধ্যেই সজনে বাজারে সজনে তুলতে পেরে খুশি এই উদ্যোগতা। এ সজনে বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে বেকার যুবকদের। আর কৃষি বিভাগ বলছে, সজনে একটি সম্ভাবনাময় সবজি। এটি চাষে এ উদ্যোগতাকে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
সজনে গাছকে বলা হয় পুষ্টির ডিনামাইট। সজনে গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিকপাতা। আর গবেষকরা সজনের পাতাকে বলে থাকেন নিউট্রিশন্স সুপার ফুড়। এটি পুষ্টি ও ওষুধি গুনাগুণের কারণে সকলের প্রিয় সবজি হিসাবে পরিচিত। তবে বাংলাদেশে এর বানিজ্যিক চাষাবাদ নাই বললেই চলে। তবে ফরিদপুরে এই প্রথম পরিকল্পিত ভাবে, আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে মালচিং পদ্ধতিতে ও আন্ত ফসলের চাষাবাদসহ বারোমাসী সজনের বানিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। বহু গুনের অধিকারী সজনে বাতজ্বরে চিকিৎসায় ভূমিকা রাখে। এছাড়াও পোকামাকড়ের কামড়ালে অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে সজনে পাতার রস। হৃদরোগ, রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি, স্বেত, টাইফয়েড, প্যারালাইসিস, লিভার, ত্বক ও চোখের রোগ প্রতিরোধ করে।
ফরিদপুর পৌরসভার টেপাখোলা মহল্লার বাসিন্দা তরুন উদ্যোগতা খন্দকার খালিদ বিন মোরশেদ। নতুন কিছু করা লক্ষ্যে ইউটিউব এর মাধ্যমে বারোমাসী সজনে চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে, নিজেই শুরু করেছেন সজনে চাষ। ভারতের তামিলনাড়- থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৭১শতাংশ পতিত জমিতে শুরু করেন সজনে চাষ। ৭১ শতাংশ জমি প্রস্তুত করে ৪৮৫টি বীজ বপন করেন। সম্পূর্ণ বৈজ্য সার ব্যবহার করে সামান্য পরিচর্যায় বীজ বপনের ৬ মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফুল আসে। বর্তমানে বাগানের প্রতিটি গাছে ঝুলছে সজনে ডাঁটা ও ফুল। গত দুই মাস ধরে নিয়মিত সজনে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন এই উদ্যোগতা। বাজারে সজনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় খুশি তিনি। আর এই বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে দুই যুবকের। তারাও এখানে কাজ করে হচ্ছেন ভালো বান হচ্ছেন।
তরুন উদ্যোগতা খন্দকার খালিদ বিন মোরশেদ বলেন, নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে আমার পতিত জমিতে ভারতের তামিলনাড়- থেকে বারোমাসী সজনের বীজ সংগ্রহ করে বাগান করেছি। বীজ বপনের ৬মাসের মধ্যেই সাফল্য পেয়েছি। অনেকেই আমার বাগান দেখতে আসছে। নতুন বাগান তৈরীর আগ্রহও প্রকাশ করছে। এখন আমি প্রতি কেজি সজনে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পাইকারি বিকি করছি। আর বাজারে এখন এক কেজি সজনে বিক্রি হচ্ছে ১০০টাকা থেকে ১২০টাকা। ১০০ শতাংশ জমি থেকে বছরে ২০ থেকে ৩০টন সজনে উৎপাদন সম্ভব। আমার বাগানে নিয়মিত একজন শ্রমিক কাজ করে। বাগানের পরিচর্যায় ও লেবারের বেতন সহ মাসে ১২হাজার টাকা খরচ হচ্ছে আমার। প্রথম বছরের সাফল্য পেয়েছি। তবে এখনো বাগানের খরচের টাকা উঠাতে পারিনি। সামনের বছর গুলোতে ভালো ফলন আশা করছি।
শ্রমিক আলম বলেন, সজনে বাগান সম্পূর্ণ নতুন আমাদের এলাকাতে। খালিদ সাহেব এখানে বাগান করার পর থেকেই আমি বাগান পরিচর্যার কাজ করছি। এখান থেকে যে টাকা পাই, তা দিয়ে আমাদের পরিবার নিয়ে ভালোই আছি। আশা আছে আগামীতে আমরাও এধরনের বাগন গড়ে তুলতে পারবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ আশুতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, সজনে একটি ম্যাজিক ফসল। আমরা জানি এতে সবধরনের খনিজ পদার্থ আছে। সজনের পাতা, ফুল, ফল, বাকল ও শিকড় সবকিছুই ব্যবহার করা যায়। ফরিদপুরে বানিজ্যিক ভাবে এটাই প্রথম সজনে বাগান। সজনে চাষে এই তরুন উদ্যোগতাকে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।