লালমনিরহাটে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুল্লী বেওয়া নামে ৭০ বছরের এক বিধবা বৃদ্ধা। বর্তমানে ঘর ছাড়া হয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই ভুল্লী বেওয়া। ভুল্লী বেওয়ার ছেলে ভোলা মিয়া মায়ের জীবনের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় সাধারন ডায়েরী (জিডি) করেও কোন ফল পাচ্ছেন না, উল্টো তাদের বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে।
বিধবা ভুল্লী বেওয়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটী ইউনিয়নের ঢাকনাই কুড়ারপাড় গ্রামের মৃত ছানে মামুদের স্ত্রী।
থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগে জানা গেছে, স্বামীর রেখে যাওয়া আড়াই শতাংশ জমির উপর সরকারী ভাবে বরাদ্দ পাওয়া টাকায় আধাপাকা ঘর করে বসবাস করেন বিধবা ভুল্লী বেওয়া। তার দুই ছেলে, তারা রাজধানী ঢাকায় রিক্সা চালান। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা সেখানেই থাকেন। ছেলেদের পাঠানো সামান্য টাকা আর সরকারী ভাবে পাওয়া বিধবা ভাতায় কোন রকমে চলে তার সংসার। পাশাপাশি বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি কুড়ায় (বিল) কয়েকটা হাঁস পালন করেন বৃদ্ধা ভুল্লী বেওয়া। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সেই কুুুড়া জবর দখল নিতে কিছুদিন আগে বিষ প্রয়োগ করে তার হাঁসগুলো মেরে ফেলেন আমিনুর রহমান নামে এক পুুুুলিশ সদস্য। সেই পুলিশ সদস্য আমিনুর রহমান তারই প্রতিবেশী আকবর আলীর ছেলে। বর্তমানে ওই পুলিশ সদস্য কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে কনস্টবল পদে কর্মরত আছেন।
এ ঘটনায় ভুল্লী বেওয়া ক্ষতিপুরন চেয়ে পুলিশ সদস্য আমিনুরসহ তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। রহস্যজনক কারণে অভিযোগটি নথিভুক্ত না হলেও কপাল পড়ে বিধবা ভুল্লী বেওয়ার। থানায় এ অভিযোগ দায়ের করার পর তার পক্ষে স্বাক্ষী দেয়া স্বাক্ষী জুয়েল সরকার নামে এক স্বাক্ষীর ঘর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এখানেই শেষ নয়, ওই পুলিশ সদস্য আমিনুর রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১ জানুয়ারী ছুটি না নিয়ে বাড়িতে এসে বিধবা ভুল্লী বেওয়ার সরকারী ঘরটি ভেঙে পরে আগুনে পুড়িয়ে দেন। যা ভুল্লী বেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন।
ঘটনার ভিডিওসহ এ ব্যাপারে পুলিশ সদস্য আমিনুরকে প্রধান আসামি করে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুল্লী বেওয়া। যার মামলা নং জিআর-১২৬/২১। মামলায় পুলিশ সদস্য আমিনুরকে প্রধান আসামি করা হলেও লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক। অথচ এই পুলিশ সদস্য আমিনুর কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে কনস্টবল পদে কর্মরত রয়েছেন। একটি মামলার প্রধান আসামি হয়েও আদালতে জামিন না নিয়ে তিনি বীরদর্পে পুলিশে চাকুরী করছেন।
এদিকে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলা দ্রুত তুলে নিতে ভুল্লী বেওয়া ও তার ছেলেদের বিভিন্ন ভাবে হুমকী দেয়া হচ্ছে। একা বসবাস করা বিধবাকে মেরে কুড়ায় (বিলে) মরদেহ ফেলে রাখার অব্যহত হুমকীর ভয়ে রাতে অন্যের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকছেন বিধবা ভুল্লী বেওয়া। দিনের বেলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। মায়ের নিরাপত্তাহীনতার খবরে রিক্সা চালক ছেলে ভোলা মিয়া বাড়িতে এলে তাকেও মেরে ফেলার হুমকী দেয়া হয়। এ ঘটনায় মা ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে শনিবার(৫ জুন) লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (নং-২৫২) করেন ভোলা মিয়া।
কান্নাজড়িত কন্ঠে ভুল্লী বেওয়া সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের নামে মামলা দেয়ার পর থেকে বাড়িতে রাত কাটাতে পারি না। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মামলা তুলে না নিলে আমাকে মেরে কুড়ায় লাশ লুকিয়ে রাখার হুমকী দিচ্ছে আমিনুর ও তার লোকজন। আমার এই পরিস্থিতিতে আমাকে দেখতে আসা ছেলে ভোলাকেও মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে। পুলিশের চাকুরী করে বলে এভাবে গরীবের প্রতি অত্যাচার করবে আর কেউ দেখবে না.? তাহলে কি আমরা মানুষ না? আমাদের কি বাঁচার অধিকার নাই? আসলে গরিবের আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই। তিনিই বিচার করবেন এভাবেই কান্নাজড়িত কন্ঠে কথা গুলো বলেন ভুল্লী বেওয়া।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টবল আমিনুর রহমানকে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন এবং মোবাইলের সুইচ অফ করে রাখেন।
কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল বলেন, কনস্টবল আমিনুর পুলিশ লাইনে কর্মরত রয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি আমাদের কিছুই জানান নি। এ ব্যাপারে তিনি সিনিয়র অফিসারদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
লালমনিরহাট সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলম বলেন, শুধু পুলিশই নয়, যেকোন সরকারী চাকুরী জীবীর বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ দায়ের হয় তাহলে অভিযুক্ত সেই ব্যাক্তির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়। বিধবা ভুল্লী বেওয়ার মামলার বিষয়টি অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টবল আমিনুরের কর্মস্থলে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। তারা আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। সেই সাথে বিধবা ও তার ছেলেকে হুমকীর বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।