করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও বিধিনিষেধের মধ্যেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে লালমনিরহাট জেলায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু। জেলার বিভিন্ন আবাসনের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় পেটের দায়ে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে করোনা উপসর্গ নিয়ে কর্মের খোঁজে অবাধে চলাফেরা করছে। এতে করে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই ধারনা করছে অনেকে। অথচ এই খেটে খাওয়া মানুষ গুলো এখনো বোঝেই না করোনা কি.?
এখন পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭১৯জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১২৪৫ জন এবং মৃত্যু বেড়ে দাড়িয়েছে ৩২ জনে।
লালমনিরহাট পৌরসভাতেই দুইটি আবাসন রয়েছে। এই দুইটি আবাসনের ৩১০টি পরিবারে মোট ৭০০ জন মানুষ গত ২০০৯ ও ২০১০ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু গত ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ায় করোনা সংক্রমন ঠেকাতে গত ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশে দফায় দফায় লকডাউন চলছে।
লকডাউনের এ কদিনে বাড়ির জমানো টাকা শেষ হওয়ায় পেটের দায়ে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে করোনা উপসর্গ নিয়েই কাজের খোঁজে অবাধে চলাফেরা করছে ওই আবাসনের অনেকেই।
লকডাউনের কারণে আবাসনের বাসিন্দারা কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের ছেলে মেয়েরা খুদার জ¦ালায় কাঁদছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মের জন্য ছুটে যায় তারা। দিন মজুর মানুষ গুলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে কিংবা কোন চিকিৎসকের নিকট পরীক্ষার জন্য যায় না। তারা করোনা কি, অনেকে তা এখনো বুঝে না। ফলে দিন দিন ওই আবাসনে বসবাসরত বাসিন্দাদের মাঝে সর্দি ও জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুধবার (৭ জুলাই) সাপটানা আবাসন প্রকল্প কমিটির সভাপতি মোঃ রাশেদ ইসলাম জানান, আমাদের আবাসনে ৭০০ জন জনসংখ্যার মাঝে ৫০/৬০ জন শিশুসহ মহিলা ও পুরুষ জ¦র, স্বর্দীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হর হামেশেই শহর-বন্দরে চলাফেরা করছেন পেটের তাগিদে। ভালো মতো চিকিৎসা না করার কারণে তাদের পরিবারে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবাসনের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, আবাসনের মানুষ অধিকাংশই দিনমজুর, কাজ না করলে পেটে ভাত জোটেনা। তাই কাজের প্রয়োজনে তাঁদেরকে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াতে হয়।
আবাসনের পার্শবতী বসবাসকারী লোকজন জানান, আবাসনের বাসিন্দারা স্বাস্থ্য বিধি না মানায় দিন দিন জ¦র ও সর্দিতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখুনি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে করোনার ভয়াবহ ছোবলের আশঙ্কা রয়েছে আবাসনে।
তারা আরও বলেন, আবাসনের লোকজন হরহামেশাই করোনা সংক্রমন নিয়ে শহর-বন্দরে চলাফেরা করার কারণে লালমনিরহাটে করোনা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল। তবে সরকার ঘোষিত এই লকডাউনের কারণে আবাসনের একাধিক মানুষ বেকার হয়ে পরায় তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
করোনা সংক্রমন ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে অনেক কর্মহীম মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করার পরেও এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন বা সরকারের কোন ত্রান সহায়তা পাননি তারা। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব এসব কর্মহীন মানুষকে সরকাররের পক্ষ থেকে সহায়তা করা দরকার বলে মনে করছেন তারা।
লালমনিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) উত্তম কুমার রায় বলেন, লালমনিরহাটে কাজের কোন সমস্যা নাই। তবে আবাসনের লোকজন যত্রতত্র ভাবে চলাফেরা করার বিষয়ে প্রশাসন থেকে নজরদারী বাড়ানো হচ্ছে এবং তারা যেন সরকার থেকে ত্রান সামগ্রী পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, আবাসনের মানুষ সরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। এই করোনা মহামারীর সময় তাদের উচিত সরকারি চিকিৎসা সেবা গ্রহন করে নিজেরাও সুস্থ্য থাকুক এবং অপরকেও সুস্থ্য থাকতে সহায়তা করুক। সেই সাথে মাস্ক পরিধান করে সবাইকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করার জন্য আহবান জানান তিনি।