সবুজ শ্যামল বনভূমি মাঠ নদীতীর বালুচর; সবখানে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘর। সোনার দেশের মাঠে মাঠে ফলে সোনাধান রাশি রাশি; ফসলের হাসি দেখে মনে হয় শেখ মুজিবের হাসি। শিশুর মধুর হাসিতে যখন ভরে বাঙালির ঘর; মনে হয় শিশু হয়ে হাসে চিরশিশু মুজিবর। আমরা বাঙালি বেঁচে রইব এ বাংলায়; স্বাধীন বাংলা ডাকবে, মুজিব আয় ঘরে ফিরে আয়।
মমতা মাখা ভাষায় আমাদের জীবনের সকল স্তরে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের প্রতিমুহূর্তের উপস্থিতির কথা এভাবেই তুলে ধরেছেন দাদা ভাই নামে সমধিক পরিচিত কবি রোকনুজ্জামান খান তাঁর 'মুজিব' কবিতায়।
আমার ধারণা, সম্ভবত ওই কবিতাকে বাস্তবে রূপ দিতেই বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করেছেন আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
ফেসবুকসহ সংবাদপত্রের কল্যাণে জানতে পারলাম যে, ওইসব ঘর নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে বুঝি। দুর্নীতির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের 'চোর' আখ্যা দিয়ে ধোয়া তোলা হচ্ছে। নানা জনে নানা মতে চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা হচ্ছে বিশেষ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও)। এসব কতোটা জেনে-বুঝে করা হচ্ছে? কতোটুকুই বা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ও বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে দুইর্নীতির গন্ধ শোকা হচ্ছে? সেটাই ভাববার বিষয় বটে।
সারাদেশে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র কয়েক মাসে। উদ্দেশ্য ছিল গরীব অসহায় আশ্রয়হীন মানুষকে পরিচয় দেওয়া। দুই শতক জমি সুবিধাভোগীর নামে লিখে দিয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার কিংবা ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে ২টি থাকার কক্ষ, রান্না কক্ষ, টয়লেটসহ বারান্দা বিশিষ্ট পাকা ঘর। এতে মূখ্য ভূমিকা পালনে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। ওইসব ঘরের পেছনে দিনরাত শ্রম দিয়েছেন ইউএনও এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ্যাসিল্যান্ডরা।
সাংবাদিকতা পেশার সুবাদে শুরু থেকেই এই প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার সুযোগ হয়েছে। সুবিধাভোগী প্রতিজনকে দুই শতক জমি দিয়ে এই প্রথম বারের মতো দেশব্যাপী গৃহহীনদের নামে শত শত একর জমি দেয়া হলো। যা নিতান্তই বিস্ময়কর ব্যাপার।
অল্প সময়ের মধ্যে এত একর খাস জমি উদ্ধার করে, তা ঘর করার উপযোগী করার কাজটি একেবারে সহজ ছিল না। কখনো কখনো পাশের বাড়ির দখলদার জমি ছাড়তে চায়নি। অনেক প্রতিবেশী চায়নি তার পাশে সরকারি ঘরে গরীব মানুষ বসবাস করুক। অনেকে ষড়যন্ত্র করেছে, কেউ আবার ধনী হয়েও ঘর ভাগিয়ে নিতে আবেদন করেছে। এমন শত বাধা ডিঙিয়ে জমি উদ্ধার থেকে ঘর নির্মাণ! সেটাও অল্প দিনে, অল্প খরচে। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কারণে শুরু থেকেই কোনো কিছুতে ছাড় দেননি ইউএনও-এ্যাসিল্যন্ডরা।
দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছুটির দিনও রুটিন ওয়ার্ক করেও ঘর বন্দবস্তের কাজ শেষ করতে পারেননি ইউএনও-এ্যাসিল্যান্ডরা। তাঁদের অফিসে রাত দশটা পর্যন্তও দেখা গেছে আলো জ¦লতে। যার জলজ্যান্ত উদাহরণ জামালপুরের ইসলামপুরের ইউএনও এস. এম. মাজহারুল ইসলাম এবং এ্যাসিল্যান্ড রোকনুজ্জামান খান। আমি এ্যাসিল্যান্ড রোকনুজ্জামান খানকে দেখেছি তাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা মারা যাওয়ার শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তাঁকে কর্মস্থলে আসতে হয়েছে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের জমির বন্দবস্ত করতে। ইউএনও এস. এম. মাজহারুল ইসলামের মতোই তাঁকেও দেখা গেছে, সরকারি বন্ধের দিন শুক্র, শনিবারসহ রাতেও অফিস করতে। একদিন তাঁকে বলেই ফেল্লাম- 'স্যার, অতিমারী করোনার প্রাদুর্ভাবের এই সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতেও অফিস করতে হচ্ছে বুঝি? প্রদত্তোরে 'উপায় নেই গোলাম হোসেন' বলেই সত্যি যেনো তিনি দীর্ঘশ্বাসে হাফ ছেড়ে দম নিলেন।
বাংলার ইতিহাসে প্রক্ষ্যাত নবাব সিরাজদ্দৌলা
নাটক-সিনেমার ওই ডায়ালগে জনাব রোকনুজ্জামান খান বলতে চেয়েছেন, 'নিয়মের অফিস করলে অল্প সময়ের মধ্যে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। সেকারণেই তিনি দিনের অফিসে রাতেও কাজ করেন।'
পাশ্ববর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও এবং এ্যাসিল্যান্ডের আসনে নারী বসলেও দায়িত্ব পালনে কমতি নেই। ইউএনও মুনমুন জাহান লিজা এবং এ্যাসিল্যান্ড ডাক্তার স্নিগ্ধা দাস রাতদিন নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। শেরপুরের শ্রীবরদীর ইউএনও নিলুফা আক্তারের কার্যক্রমও প্রসংশার করার মতো। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের এ্যাসিল্যান্ড মিজানুর রহমান ঈদের রাতেও ঘর নির্মাণের কাজে নিয়োজিত থাকার কথা নিশ্চয় উচ্চ মন-মানষিকতার পরিচয় বহন করে। সারা দেশেই প্রশাসন ক্যাডারে অনেকেই এ রকম ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বিতর্কের জন্ম যে দিচ্ছেন না, এমনটিও নয়।
প্রকল্পের শুরু থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থেকে জনপ্রতিনিধিগণও যুক্ত ছিলেন। প্রত্যাক্ষেই প্রত্যক্ষ করেছেন কতোটা ডেডিকেশন ও শ্রম দিতে হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। সুচারুভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে, অনেক ইউএনও-এ্যাসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টদের এমনও দেখেছি দুপুরের খাবার তাঁরা সন্ধ্যায় খেয়েছেন। বন্ধের দিন এবং রাতে অফিস করাসহ সবকিছুর মূলে উদ্দেশ্য একটাই, জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া। ভালোভাবে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা।
গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে মূলত গোড়ায় গলদ পরিলক্ষিত। ওই বর্ণনায় না গিয়ে কৃপণের টুপি বানানোর গল্পের অবতারণা করছি। এক হাড় কৃপণব্যক্তি এক খ- কাপড় কিনে একটি টুপি বানাতে দর্জির কাছে গেলো। টুপি বানিয়ে দিতে দর্জি রাজি হলে কৃপণব্যক্তি চলে গিয়েও আবার ফিরে এসে ভাবলো, একই কাপড় দিয়ে যদি দুইটি টুপি বানানো যায়! দর্জিকে সে বললো, দুইটি টুপি বানিয়ে দিতে। রাজি হলো দর্জি। কৃপণব্যক্তি হাসিমুখে ফিরে গেলো। কিন্তু আবার তার মনে হলো, তিনটি টুপি বানালে কেমন হয়? পুনরায় সে দর্জিকে বললো, তিনটি টুপি বানাতে। দর্জি আবারও সহজে রাজি হলে সে ক্রমান্বয়ে চারটি, পাঁচটি, ছয়টি টুপি বানাতে বললো। যথা সময়ে টুপি ডেলিভারী নিয়ে দেখে টুপিগুলোর সাইজ এত ছোট যে মাথায় পরা যায় না। কৃপণব্যক্তি খেপে গিয়ে শাসালে দর্জি সহজ জবাব দেয়, একটা টুপির কাপড় দিয়ে ছয়টি টুপি বানালে তা মাথায় দেয়া যায় না ছাহেব!
আমরা মনে করি, গরীবদের জন্য নির্মিত ঘর কত কম টাকায় বানানো যায়, এনিয়ে নির্লজ¦ প্রতিযোগিতা হয়েছে প্রকল্প পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে। কর্তৃপক্ষকে তেল মারতে কিংবা খুশি করতে নিশ্চিন্তে হয়তো বলা হয়েছে, কম টাকায়ও ভালো ঘরে বানানো সম্ভব। ফলশ্রুতিতে দেশে এলজিইডি'র এস্টিমেট থাকলেও গরীবদের নির্মিত ঘরে তা ফলো করা হয়নি। ফলো করা হয়নি পিডাব্লিউডি'র এস্টিমেটও।
ঘর নির্মাণের জায়গার মাটি কমপ্যাক্ট যেমন করাও হয়নি। তেমনই ভিটার গাইডওয়ালও নির্মাণ করা হয়নি। লিংকার বা লিনটেন করা কল্পনাতিত। লোহা বা রডও হয়নি ব্যবহার। ঘর নির্মাণে আবার তাড়াহুড়ারও অন্ত ছিল না। এখন দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় ঘরে ঘরে গিয়ে খতিয়ে দেখছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টিম। দুর্নীতির ধোয়ায় এখন বেখেয়ালি স্বভাবের কিছু আমলার চাকুরী নিয়ে দেখা দিতে পারে জটিলতা। কিছু জনপ্রতিনিধির মানসম্মান টানাহেচড়ার ঘটনারও হতে পারে। ঘর নির্মাণে ইউএনওদের দুর্নীতি প্রকাশে মিডিয়া বড্ড সরব। আবার একেবারে যে নিষ্কণ্টকভাবে ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তাও কিন্তু নয়। বরং ঘর বরাদ্দের নামে কোথাও কোথাও কতিপয় জনপ্রতিনিধির প্ররোক্ষ মদদে তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা সুবিধাভোগিদের নিকট মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও বিস্তর।
বলাবাহুল্য, নির্মিত ঘরের ফাটল কিংবা ধ্বসে পড়াসহ দুইর্নীতির খবর চাউর হওয়ার জন্য সাজা হতে পারে যিনি ঘরের এস্টিমেট করেছে কিংবা তৈল মর্দন করে কর্তৃপক্ষকে খুশি করার জন্য খামখেয়ালি চিন্তাধারায় ঘর নির্মাণে আজগুবি পরামর্শ দিয়েছেন। অথবা যারা কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষের ‘পারিব না' কবিতার 'পারিব না এ কথাটি বলিও না আর...' স্তবকটি কাজে লাগাতে বেপরোয়ায় লিপ্ত ছিলেন। পারিব না কবিতাটির মর্মার্থ তারা হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন, কম টাকায় কেনো গৃহহীনদের পাকা ঘর নির্মাণ করতেন পারব না! কিন্তু তাঁরা যদি চিন্তা করতেন দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কেনাকাটায় শত শত কোটি টাকা তছরূপ হচ্ছে। সেখানে গরীবের একটু বেশী টাকায় গুণগতমানের ঘর নির্মাণে কেনো বাজেট করতে পারব না। সে কথা কেনো একবারও ভাবা হলো না।
ভুলে গেলে চলবে না যে, কম দামে ভালো জিনিস পাওয়ার চিন্তা অতি উর্বর মস্তিষ্ক হতেই আসে? ফলশ্রুতিতে সস্তার বারো অবস্থা হলেও ঘর নির্মাণে আজ সাড়ে তেরোটা বাজতে বাকি নেই।
আমরা বলতে চাই, যদি প্রতিটি ঘর ৩ লাখ টাকায় দেয়া হতো, তাহলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো। টাকাটা তো আমাদের দেশের গরীবরাই পেতো। আমরা তেলা মাথায় তেল দিতে অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত। রাজউক পূর্বাচলে বা উত্তরায় যে প্লট ১০ লাখ টাকায় কারো কারো ভাগ্যে বরাদ্দ মিলেছে, তার বতর্মান বাজার মূল্য ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা। ওইসব প্লটে বাসবাসকারী মানুষ ঘুম থেকে উঠে দেখে সে অনেক বড়লোক। ধনীদেরকে যদি রাতারাতি আরও বড়লোক বানানো যায়, তাহলে গরীবদেরকে ৩ লাখ টাকার ঘর দিতে কেনো কার্পন্য?
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এখনও সময় নিয়ে কিছু ঘর বেশী দামে বানিয়ে বিতরণ করা যেতে পারে। শুধু পাওয়াটাই বড় না, সুবিধাভোগিরা যেনো বাকী জীবনটা ওইসব ঘরে বসবাস করতে পারেন। তবেই সত্যিকার অর্থে উপকৃত হবেন গরীবরা।
রাষ্ট্র যখনই কোনো দায়িত্ব দিবেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা প্রশাসন ক্যাডারের ধর্ম। ডেঙ্গু, করোনাসহ অন্যান্য কারণে মাঠ প্রশাসনে কাজ করা কতজন কর্মকর্তা যে চাকরি জীবনে কতটি ঈদ পরিবারের সঙ্গে করতে পারেন না। তা অন্তত একবার হলেও খোঁজ নেয়া জরুরি। তাদের কি ইচ্ছে করে না পরিবারের সঙ্গে ঈদের দিনটি কাটাতে?
বোধ করি, ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার সময়েও ইউএনও-এ্যাসিল্যান্ডদের রওনা দিতে দেখেছি ঘরের কতটুকু কাজ হয়েছে, কীভাবে হচ্ছে তা খোঁজখবর নিতে। ঈদের চাঁদ যখন ওঠে তখনও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজের স্পটে অবস্থান করতেও তাঁদের দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ঈদের দ্বিতীয় দিনও ঘরের কাজ দেখতে হয়েছে। ঈদের আনন্দ স্পর্শ করার সুযোগ হয়নি হয়তো অনেক ইউএনও-এ্যাসিল্যান্ডদের।এতো কিছুর পরও কি বলা যায়, জনগণের টাকায় বেতন হয়, তাই সব কিছু ইউএনও-এ্যাসিল্যান্ডদের জন্য জায়েজ। তাঁরা শুধুমাত্র প্রজাতন্ত্রের চাকর? কেনো? তাঁদের কি কিনে নিয়েছে রাষ্ট্র?
না জেনে, না বোঝে 'দুর্নীতিবাজ', 'চোর' বলার অধিকার কিংবা সাহস কে দিয়েছে? ইউএনও-এ্যাসিল্যান্ডরা কি শুধু শুধু বসে বসে বেতন নেয়? দিনশেষে আমাদের মতো তাঁরা কি জনগণ না? আমাদের মতো তাঁরা ট্যাক্স দেই না? দেন না কি ইনকাম ট্যাক্স?
অবশ্যই কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে না, আমরাও না।
তাই ব্যর্থতার সুক্ষ্ম দায় যেমন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদেরও নিতে হবে, তেমনই সফলতার বিশাল গল্পগাঁথা নিয়ে গর্বের দাবিদারও তাঁরাই।
অল্প সময়ে, কমে খরচে বিপুল সংখ্যক ঘর নির্মাণ করে গৃহ ও ভূমিহীন মানুষের হাতে হস্তান্তর পৃথিবীতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। পত্রিকা ও ফেসবুকে যে ফাটল বা আংশিক ভেঙে পড়া ঘরগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা যে বিশাল সমূদ্রে সামান্য ঘোলাজল, সেটা বুঝবার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি করার প্রয়োজন নেই। একটু নিরপেক্ষতা ও বুদ্ধিমতা খাটিয়ে দেখলেই বুঝা যাবে ঘুরে ফিরে গুটি কয়েক জেলার কয়েকটি ঘর, একই ঘর বিভিন্ন এঙ্গেলে প্রচার হচ্ছে। যার সংখ্যা খুবই কম। যা শতকরায় রূপান্তরিত করলে ০.০২৫% এরও কম হতে পারে। সেগুলো ঘরে ত্রুটি দেখা দিয়েছে, ইতোমধ্যে সেগুলো সুন্দরভাবে সংস্কার করা হয়েছে। সমালোচকরা একটিবার ভেবেও দেখলেন না যে, এ বছর আবহাওয়া কতটা বৈরি এখন পর্যন্ত। বর্ষায় অল্প কিছু ঘরের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। এতে কি এত আহামরি সরকারি সম্পদ বেঘোরে চলে গেছে।
যাই হোক। আজ যে বিদ্যুতের আলোয় নিজের ইটের ঘরে যে সন্তান পড়াশোনা করছে কিংবা যে মা সেলাই মেশিনে কাজ করছে, এতে ইউএনও, এ্যাসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টদের অবদান অস্বীকার করার জোঁ নেই। এখানেই ইউএনও-এ্যাসিল্যান্ডদের স্বস্তির নিশ্বাস।
কতোটি ঘরে পূর্ণিমার আলোর পাশাপাশি বিদ্যুতের আলো, সুখের আলো পড়েছে, তা খোঁজে দেখা বাঞ্ছনীয়। তথ্য প্রমাণ ছাড়াই শুধুমাত্র কিছু ষড়যন্ত্রকারীদের জালে ফেঁসে কাউকে 'দুর্নীতিবাজ' কিংবা 'চোর' আখ্যা দেওয়ার আগে আত্মসমালোচনা অতীব জরুরিই বটে। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, সব পক্ষের।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)