নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি মোবাইলফোনের সিম চুরির অপবাদ দিয়ে শিহাব হোসেন (১৪) নামে এক মানষিক প্রতিবন্ধী কিশোরকে ধরে হাত-পা বেঁধে পাম্পের একটি ঘরে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করা হয়েছে। সে উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের বাগাচারা গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। এই ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামবাসী নির্যাতনকারী বকুল হোসেনকে (৫০) আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আটক বকুল নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহসড়কের বাগাচারা এলাকায় নির্মাণাধীণ অটোগ্যাস স্টেশনের নৈশপ্রহরী ও শিকারপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। মারাত্মক আহত অবস্থায় শিহাবকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম ওই কিশোরের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভারের দায়িত্ব নিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার কিশোর শিহাব হোসেনের দরিদ্র পিতা টমটম চালক খোরশেদ আলম জানান, শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকাল ১০টায় তার ছেলে হাপানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শিহাব ওই পাম্প এলাকায় অন্য শিশুদের সাথে খেলা করার সময় বকুল ও কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক মোবাইলের সিম চুরি হয়েছে বলে শিহাবকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাম্পের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে মারপিট করে তাকে ওই ঘরে আটকে রাখে। জানতে পেরে দুপুরে তাকে উদ্ধার করা হয়। মারপিটের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায় তাকে কিভাবে অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, এ ব্যাপারে সন্ধ্যায় শিহাবের পিতা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। রাতে নির্যাতনকারী বকুলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। সিম চুরির ঘটনা সত্য নয় বলেও তিনি জানান। শনিবার দুপুরে তাকে নওগাঁ কোর্টে চালান দেয়া হয়। পুলিশ সুপার বলেন, ‘খোরশেদ আলম অর্থের অভাবে আহত সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। শিশু শিহাবকে সুস্থ করে তার বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই আমি সার্থক হব।’
উল্লেখ্য, পুলিশ সুপার সম্প্রতি এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। অসহায় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। নগদ অর্থ সাহায্য করেছেন এক বয়স্ক রিকশা চালককে। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বাবাহারা শিশু মরিয়মের পাশেও দাঁড়িয়েছেন মানবিক এ পুলিশ সুপার।