কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৩ বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রায় ১০ বিঘা জমি দখলে রেখেছে জালিয়াতচক্র ভূমিদস্যুরা। ৭০/৮০ বছর ভোগ দখলে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি, বসতবাড়ি এবং আবাদি মাঠ সবই দখল করে নিচ্ছে ওই ভূমিদস্যুরা। সুকৌশলী ওই চক্র ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে জমি গুলো হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রেকর্ডরুমের পাতা গুলোও ছিঁড়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছে। ফলে জমির কোন তথ্যই দিতে পারছে না পাবনা এবং কুষ্টিয়া কোর্ট। প্রায় দাগের জমির তথ্যেই নোট দেওয়া হয়েছে জমির তথ্য সংশ্লিষ্ট পাতাটি ছিঁড়ে গেছে। এমন অবস্থায় দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না ওই মুক্তিযোদ্ধারা। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ১৬ দাগ গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হয় ৩ বীরমুক্তিযোদ্ধা মজিবুল হক মাঙ্গন, হেদায়েত উল্লাহ কাজল, একরামুল হক তাজু’র। তাদের পিতার নাম ফজলুল হক। মুজিবুল হক মাঙ্গন ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় ৯০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন তাঁদের পিতা। সব জমিই দেখা শুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল চাচা গোলাম রব্বানীকে। জালজালিয়াতি এবং ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে পরবর্তীতে তিনিই পশ্চিম বাহিরচর মৌজার ১০টি দাগের প্রায় ১০ বিঘা জমির মালিক বনে যান তিনি।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, পশ্চিম বাহিরচর মৌজার ১১২৪, ১১২৫, ১৩৫৩ নং এস এ খতিয়ান’র কোন তথ্যই দিতে পারেনি কুষ্টিয়া কোর্টের রেকর্ড রুম। ভেড়ামারার ভূমি অফিস, কুষ্টিয়া সাবরেজিষ্ট্রি অফিস এবং রেকর্ড রুম কোথায় জমির কোন তথ্য নেই। কোর্ট তথ্য দিয়েছে জমির তথ্য সংশ্লিষ্ট পাতাটি ছিঁড়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে গোলাম রব্বানী জমি গুলো তার নামে করে নেয় এবং রেকর্ড রুমের পাতা গুলো ছিঁড়ে ফেলার ব্যবস্থা করে। এছাড়াও পশ্চিম বাহিরচর মৌজার ৭৫৯,৭৬৫ এস এ খতিয়ানের ১৭৯৫, ১৭৯৬, ১৮০২, ১৮০৩, ১৮০৪ দাগের প্রায় ১০ বিঘা জমি এখনও দখল রেখেছে ওই জালিয়াত চক্র ভূমিদসূরা। উল্লিখিত দাগের জমিগুলোর মধ্যে রয়েছে পৈত্রিক সম্পত্তি, বসতবাড়ি এবং আবাদি জমির মাঠ।
বীরমুক্তিযোদ্ধা হেদায়েতউল্লাহ কাজল বলেছেন, আমরা ৩ ভাইই মুক্তিযোদ্ধা। নানা কারণে আমরা আমাদের জমিজমা গুলো দেখা শুনা করতে পারেনি। দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমার মেজা দাদার ছেলে গোলাম রব্বানীকে। তিনিই ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে জমি গুলো তার নামে রেকর্ড করে নেয় এবং জমির সংশ্লিষ্ট পাতাগুলো রেকর্ড রুম থেকেই ছিঁড়ে ফেলার ব্যবস্থা করে। যাতে আমরা কোনদিনই জমির কোন তথ্য উদ্ধার করে জমি দখল নিতে না পারি। ছিন্ন দাগের জমি গুলোও বিক্রি করে দিয়েছে ওই ভূমিদস্যু, যার প্রমান রয়েছে। তিনি বলেন, জমি উদ্ধারের জন্য আমরা প্রচুর হয়রানী আর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। এছাড়াও সম্প্রতি সময়ে তারা প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। জমি পূর্নরুদ্ধারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীনেশ সরকার জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধার জমি বেদখলের বিষয়টি খুবই নিন্দনীয় অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।