যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো (ঘঅঞঙ) বাহিনীর ত্বরিৎ প্রস্থান এবং তালেবানদের ঝড়ের গতিতে আফগানিস্তান বিজয় সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক মাইল ফলক। পূরো আগস্ট -সেপ্টেম্বর ২০২১ ব্যাপী এই অভূতপূর্ব দৃশ্যপট তাবৎ মিডিয়ার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল। এই অভাবনীয় পট পরিবর্তনে সবাই নড়েচড়ে বসে। যদিও দেড় বছর আগেই কাতারের রাজধানীতে কাবুলের ভাগ্য নির্ধারিত হয় তারপরও বিশ্বের মহাপরাক্রমশালী পরাশক্তির এমন দ্রুত ও গ্লানিময় বিদায় হবে তা কোন পক্ষই ভাবেনি। বিনা যুদ্ধে বিনা বাধায় তালেবান বাহিনীর এমন বিজয়ে বিশ্ব অবাক। তাৎক্ষণিকভাবে কাবুলে বর্ণিল বিজয় উৎসব করলেও তালেবান শীর্ষ মহল বিজয়োৎসব উদযাপন করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তালেবান বাহিনী মার্কিন বাহিনীর শেষ বিমানটি কাবুল বিমান বন্দর ত্যাগ করা পর্যন্ত ধৈর্য প্রদর্শন করে। বিজয়ের ১৫ দিন পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী তালেবানরা বিমান বন্দরে প্রবেশ করেনি। তালেবানরা বিজয় এবং চুক্তি পালনের জন্য প্রশংসার দাবীদার। যত দ্রুত এবং নির্বিঘ্নে তালেবান কাবুল জয় করে সেই গতিতে তাদের পরবর্তী কার্যক্রম এগোয়নি। তারা যে ২০ বছর আগের তালেবান নয় এবং এই বছরগুলোতে তারা অনেক পরিপক্ক ও কৌশলী কুটনীতিক হয়েছে বলে সবার কাছে প্রতিভাত হয়েছে। তারপরও সরকার গঠনে তিন সপ্তাহের বেশী সময় নিয়েছে এবং গঠিত সরকার বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। কোন দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। মূলতঃ তারা বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন দেশের অভ্যন্তরে এবং বর্হিবিশ্বে। ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছে তালেবান সরকার।
বিজয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাঝে ২৭শে আগস্ট কাবুলের হামিদ কারজাই বিমান বন্দরে আত্নঘাতী বোমা হামলা করে তালেবানেরই এতদিনকার সহযোগী আফগান শাখা আই এস কে পি (ওংষধসরপ ঝঃধঃব কযড়ৎধংধহ চৎড়ারহপব)। মার্কিনীদের বিদায়ের অব্যবহিত পরই এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা ড্রোন হামলা চালায়। উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর হতাহত হয়। ওদিকে পানশির বা পাঞ্জশির আহমেদ মাসুদ বাহিনীর কাছ থেকে দখল করতে তালেবানের তিন সপ্তাহ লেগেছে। ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২১ পানশির দখল করার পরই ৭ই সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৩- সদস্য বিশিষ্ট সরকার ঘোষণা করে তালেবান। এ সরকার গঠনে পৃথিবীর কোন দেশ সন্তুষ্ট হয়নি। কেন না সরকারে সংখ্যালঘু গোষ্ঠিসমূহ এবং নারীদের অংশ নেই। আরো কিছুদিন পর কয়েকজন মন্ত্রীকে অন্য দু’একটি গোষ্ঠী থেকে নেয়া হয় তাও নামকা ওয়াস্তে। যে দেশগুলো তালেবান সরকারের খুব ঘনিষ্ট Ñ পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, বাহরাইন, কাতার এবং আরো দু’একটি দেশ তারাও অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকার আশা করেছিল তালেবানদের নিকট থেকে। লক্ষনীয় ব্যপার হল যে, সরকার গঠনের এক মাস অতিবাহিত হলেও এখনো সরকারের শপথ নেয়া হয়নি (৯ সেপ্টেম্বর ২১)। এদিকে সরকার গঠনের ১৫ দিন পার হতে না হতেই তালেবানের উপর হামলা হয়। আই এস জংগীদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত নানগরহার প্রদেশের জালালাবাদ শহরে তালেবানদের গাড়ী লক্ষ্য করে পৃথক তিনটি বোমা হামলা হয়। এরপর আরো কয়েকটি অনুরূপ হামলা হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভবনে নূতন সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে ঝগড়া-গোলাগুলি হয়। সরকারের পদণ্ডপদবী নিয়ে হাক্কানী গ্রুপের সাথে তালেবানদের আন্ত:কোন্দল সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য গ্রুপের সাথেও যে কোন্দল সৃষ্টি হবে না এমন কথা বলা যায় না।
আফগানিস্তান একটি বহুজাতি-গোত্রে বিভক্ত দেশ। তালেবান পশতুন প্রধান সংগঠন যারা সমগ্র আফগানিস্তানের ৪২%। অন্যান্য গোত্রগুলি হচ্ছে তাজিক, (২৭%) হাজারা (১০%), উজবেক (৯%), আয়মাক (৪%), তুর্কমেন (৩%), বালুচ (২%), পাশাই, নূরিস্তানী, গুজ্জর, আরব, ব্রাহুই, কিজিবাস, পামিরি, কিরগিজ এবং সাদাত। এক এক প্রদেশে এক এক গোষ্ঠীর প্রধান্য এবং প্রতিটি গোত্রই কট্টর এবং আলাদা কৃষ্টিতে বিশ্বাসী। এদের সবাইকে এক পতাকাতলে ও এক সরকারের অধীনে আনা দুরূহ ব্যপার। তালেবান যেমন দেওবন্দী সুন্নী তেমনি আই এস সুন্নী হলেও সালাফি মতাদর্শে বিশ্বাসী। এভাবে বিভিন্ন বিবদমান গ্রুপ ও গোত্রে বিভক্ত আফগানরা বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি আন্তঃগোত্র কলহেও ব্যস্ত ছিল। পূরো আফগানিস্তানকে কখনো এক পতাকাতলে, এক শাসনযন্ত্রের অধীনে আনা যায়নি। বৃটিশরাজ, সোভিয়েত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কেউই পূরো আফগান মানচিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তালেবানের কাছেও এটি যে সহজ হবে এটা আশা করা যায় না। এমনকি সরকার গঠনেও এখন পর্যন্ত সব দল-গোত্রকে অন্তর্ভূক্ত করা যায়নি এবং এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বাহিনী ও সশস্ত্র গ্রুপ। তালেবান, আইএস, আল কায়েদা ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন মুজাহিদিন গ্রুপ যেমন, জামাতে ইসলামী, হেজবে ইসলামী যারা আবার দুইটি জোটে বিভক্ত Ñ ‘পেশোয়ার সেভেন’ (চবংযধিৎ ঝবাবহ) নামে সুন্নী ইসলামী ইউনিয়ন এবং ‘তেহরান এইট’ (ঞবযৎধহ ঊরমযঃ) নামে শিয়া ইসলামী ইউনিয়ন। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দল-উপদল ও গ্রুপ Ñ হাক্কানী গ্রুপ, লস্করে বেলুচিস্তান, হেজবে ওয়াহাদাত, মকতব আল-খিদমত, মোল্লা আবদুল্লাহ ফ্রন্ট, নর্দান আ্যালায়েন্স, ন্যাশনাল ইসলামী ফ্রন্ট, বেলুচ লিবারেশন ফ্রন্ট / আর্মি, ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট, কমিউনিস্ট পার্টি অব আফগানিস্তান ইত্যাদি। এই সবগুলো গ্রুপকে পোষ মানানো কতটুকু সম্ভব হবে তালেবানের পক্ষে তা ভবিষ্যতই বলবে।
জংঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে তালেবানের এতোদিনকার সম্পৃক্ততা এতো সহজে এড়ানো যাবে না যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো সরব। এই সংগে অন্যান্য বিশ্বসংস্থা বা জোটও আফগানিস্তানে জংঙ্গিবাদের কেন্দ্র ভূমি হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনার ব্যপারে উদ্বিগ্ন। তারা আল-কায়েদা এবং আই এস তালেবানের অধীন আফগানিস্তানকে জংঙ্গি বান্ধব মনে করতে পারে। এব্যপারে পশ্চিমা সরকারগুলো হুঁশিয়ারী দিচ্ছে। অন্যদিকে তালেবান সরকার চাচ্ছে বর্হিবিশ্বের স্বীকৃতি ও সাহায্য। সেপ্টেম্বর ২১-এ অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬ তম অধিবেশনে তালেবান সরকার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আবেদন করলেও তা গৃহিত হয়নি। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য অর্থাৎ পাঁচ বিশ্বশক্তি তালেবান সরকারকে চাপের মুখে রেখেছে। তারা চায় আফগানিস্তানে অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকার গঠিত হোক যেখানে নারীদের অধিকার রক্ষিত হবে এবং যেখানে সন্ত্রাসের আখড়া থাকবে না। তারা চায় আফগানিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। ওদিকে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন বা এস সি ও -এর ২১তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে, যার ফোকাস ছিল আফগানিস্তান পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর এর প্রভাব নিয়ে। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাকস্তান। উল্লেখ্য, আফগানিস্তান এই সবগুলো দেশ বেষ্টিত। সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণায় তারা এমন একটি আফগানিস্তান দেখতে চায় যেখানে সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও মাদক থাকবে না।
তালেবান সরকার এখন চরম অর্থ ও খাদ্য সংকটে। গত ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের মাধ্যমে আফগান অর্থনীতি সচল ছিল। কিন্তু তাদের বিদায়ের পর পরিস্থিতি ভিন্ন। বিদেশে আফগানিস্তানের অর্থ জব্দ করা হয়েছে এবং সব সাহায্য বন্ধ হওয়ায় আফগানরা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে যাতে জাতিসংঘ মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা ব্যক্ত করছে। লাখো শিশু অপুষ্টি ও মৃত্যু ঝুঁকিতে। ২১ আগস্ট ২০২১ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে আফগানিস্তানের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন কাতারের আমীর। তিনি আফগানিস্তানের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানান। আফগানিস্তানে ঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জ্বালানী দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ্স্ ঘোষণা করেছেন যে, আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেংগে পড়া রোধে সাড়ে চার কোটি মার্কিন ডলার জরুরী ভিত্তিতে উন্মুক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘের অনুরোধে দাতা দেশগুলো ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের জরুরী সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারা এই অর্থের সঠিক ও সুষ্ঠ ব্যবহারের শর্ত দিয়েছে। অর্থনীতি সচল করা, খাদ্য সংকট মোকাবেলা করা এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা তালেবান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ আফগানিস্তান মহামূল্যবান খনিজ ও তৈল সম্পদের উপর ভাসছে যার মূল্য কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার, কিন্তু উত্তোলন করতে পারছেন না। আফগানিস্তানে এক হাজার চার শতেরও বেশী খনিজক্ষেত্র রয়েছে যাতে মজুদ রয়েছে সোনা, রূপা, প্লাটিনাম, ইউরেনিয়াম, তামা লোহা, এ্যালুমিনিয়াম, ক্রোমাইট, লিথিয়াম, উচ্চমানের রত্নপাথর পান্না, রুবি, নীলকান্তমনি, ফিরোজা ইত্যাদি। স্থিতিশীল সরকার না থাকায় খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য বিদেশী কোম্পানী বা সংস্থাগুলো বিনিয়োগ করছে না। তবে অবৈধভাবে খনিজ উত্তোলন হচ্ছে যাতে তালেবানসহ বিভিন্ন জংগী গ্রুপ ও মিলিশিয়া সংগঠন অর্থের যোগান পাচ্ছে। অবৈধভাবে ও চোরাচালানের মাধ্যমে পরিশোধনের জন্য সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে যাচ্ছে এবং অবৈধভাবে রপ্তানীও হচ্ছে। মূলতঃ, আফিমের পর এই খনিজ উত্তোলনের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আফগানিস্তানের আয়ের দ্বিতীয় উৎস। কবে যে তালেবান সরকার স্থিতিশীল হবে, কবে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের ব্যবস্থা হবে তা ভবিষ্যতই জানে।
অন্তর্দ্বন্দ্ব, বহি:শক্তির চাপ, অর্থনীতি ও খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা সমস্যা, গোত্রীয় বিভাজন ইত্যাদি মোকাবেলা নিয়ে তালেবান সরকার হিমসিম খাচ্ছে। ২০ বছর আগের তালেবান থেকে আজকের তালেবান আরো উদারনৈতিক, আধুনিক এবং সহনশীল হবে এটি আশা করেছিল সবাই। কিন্তু তালেবান ঘোষণা করেছে তারা আধুনিক গণতন্ত্রের পথে যাবে না, নারীদের শিক্ষা বিরোধী এবং সীমিত অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকারে বিশ্বাসী। নারীরা রাজপথে আন্দোলন করছে এবং তাদের দমনও করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রীধারী উপাচার্যকে বরখাস্ত করে কম ডিগ্রীধারী ব্যক্তিকে নিযুক্ত করায় ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এভাবে বিরোধের দানা বাঁধছে। এদিকে ভূরাজনৈতিক খেলায় আফগানিস্তানকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। এ নিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সম্প্রতি গঠিত কোয়াড (যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান) এবং এ ইউকে ইউএস বা অকাশ (অষ্ট্রেলিয়া, ইউকে ও ইউএস) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আফগানিস্তানের পট পরিবর্তন এতে প্রভাব ফেলছে। ওদিকে আইএসকেপি ও নর্দান অ্যালায়েন্স এর বিরোধিতা তালেবানের জন্য দুশ্চিন্তার ব্যপার। এতো সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পরও পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, আমিরাত, সৌদি আরব কোন দেশই এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ভারতের সাথে চলছে ঠান্ডা লড়াই। এ অঞ্চলে ভারত-পাকিস্তান ফ্যাক্টর এমন অবস্থায় যে আফগানিস্তান ও এর জঙ্গি গ্রুপগুলোর তৎপরতা নিয়ে পাক-ভারত সংর্ঘষও লেগে যেতে পারে। কেননা কাশ্মীর ইস্যুতে তালেবান ও জঙ্গি গ্রুপগুলোকে পাকিস্তান মদদ দিবে বলে ভারত মন্তব্য করছে। বাংলাদেশও আফগানিস্তানের ব্যপারে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান তালেবান সরকারকে সরাসরি সহায়তা করবে বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি। তালেবান সরকার মরিয়া হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির চেষ্টা করছে। কিন্তু নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার, মানবাধিকার, অন্তভূর্ক্তিমূলক সরকার ও উদরনীতি অবলম্বন এসব ব্যপারে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। ওদিকে সহযোগি বাহিনী ও গোষ্ঠীর সাথে টানাপোড়েন এবং সর্বোপরি ম্রয়িমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তালেবানকে স্বস্তি দিচ্ছে না। হয়তো ভূরাজনৈতিক কারণেও চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও আরো কিছু রাষ্ট্র তালেবানকে টিকিয়ে রাখবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। কিন্তু পরাজিত শক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত তালেবানকে ক্রমাগত চাপে রাখবে এতে সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছেন যে জংগী দমনে প্রয়োজনে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালাবে। ওদিকে তালেবানও মৌলবাদ থেকে সরে আসার কোন লক্ষণ প্রকাশ করছে না। সব মিলিয়ে তালেবান সরকার এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এর অবসান হোক এবং আফগান জনগণ স্বস্তি ও শান্তিতে থাকুক এটাই সবার আশা। তালেবান কিভাবে এর মোকাবেলা করে সেটাই দেখার অপেক্ষায় সবাই।
লেখক ঃ অধ্যক্ষ ও কলামিস্ট