‘যদি তুমি তোমার পরিবেশকে পরিষ্কার করতে না পারো তাহলে অন্তত নোংরা করো না’---ফ্রেশ কোটসের এই উক্তি থেকে উপলব্ধি করা যাচ্ছে আমাদের পরিবেশ বর্তমানে ঠিক কতটা হুমকির মুখে। পরিবেশ আমাদের অনেক মূল্যবান কিছু উপহার দিলেও বিনিময়ে আমরা পরিবেশকে উপহার হিসেবে দিচ্ছি বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, সিসা, দূষিত নোংরা জল, অপরিশোধিত বর্জ্য। পরিবেশ দূষণ ঠিক কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে তা ঘর থেকে বেরোলেই আমরা অনুধাবন করতে পারি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের নয়াদিল্লীতে পরিবেশ দূষণের তীব্রতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বন্ধ করতে হয়েছিল। পরিবেশ নষ্ট করতে বায়ু দূষণ, পানি দূষণের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে জমা হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ ছিল ৬৩০ কোটি টন। অবাক হওয়ার তথ্য হচ্ছে, জমা হওয়া ওই বর্জ্যরে ৭৯ শতাংশ এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে। আর যদি প্লাস্টিক বর্জ্যরে এ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৫০ সালে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ ১ হাজার ২০০ টনে গিয়ে দাঁড়াবে। তা পৃথিবীতে বসবাসকারী জীবের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্লাস্টিকের অপব্যবহারের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের জলজপ্রাণী আজ হুমকির মুখে। কারণ আমরা রাস্তঘাট ও ড্রেন যে প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো ফেলি, তা বৃষ্টির পানিতে ভেসে নদীপথ হয়ে সোজা সমুদ্রে পতিত হয়। আর এই প্লাস্টিকগুলো সমুদ্রে বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান থাকে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো প্রতিমিনিটে সাগরে পতিত হওয়া প্লাস্টিক বোতল ও ব্যাগের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার ৮০০টি। প্রতিবছরে তা ১৩ মিলিয়ন টনে গিয়ে দাঁড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালে মাছের চেয়ে সমুদ্রে প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্যাদির পরিমাণ হবে বেশি।
আমাদের অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা অনেকটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো। বাজার থেকে মাছ, মাংস, ডিম কিনে আনার পর প্লাস্টিকের পাত্রভরে আমরা রেফ্রিজারেটরে রেখে দিই। কিন্তু এই পাত্র পোড়ালে তা থেকে নির্গত স্টাইরিন গ্যাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বা লোমকূপ দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং মাথাধরা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, এমনকি স্নায়ুতন্ত্র বিকল হওয়ার মতো জটিল রোগের সৃষ্টি করে। সমুদ্রে জমে থাকা প্লাস্টিকের ওপর যখন সূর্যের আলো পড়ে, তখন সেটি মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। আর এই মাইক্রোপ্লাস্টিক মাছের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
পরিবেশবিদ মার্গারেট মিড একবার বলেছিলেন, ‘আমরা যদি পরিবেশ ধ্বংস করি তবে আমাদের কোন সমাজ থাকবেনা।’ কাজেই আমাদের সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্যই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। আমরা হয়তো পুরোপুরি প্লাস্টিকের দুনিয়া থেকে বের হয়ে আসতে পারব না। কিন্তু এটি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে নিতে হবে কার্যকরি পদক্ষেপ।