যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) শুক্রবার বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচক প্রকাশ করেছে। এই সংস্থার সাবেক সভাপতিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইট ও কলিন পাওয়েলের মতো ব্যক্তিরা রয়েছেন। সংস্থাটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইনের শাসনের এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। এর আগে গত বছরের মার্চে প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশ ১২৮টি দেশের মধ্যে ১২২তম অবস্থানে ছিল।
সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনাকালে বাংলাদেশে আইনের শাসনের অবনতি হয়েছে। ২০২১ সালে আইনের শাসনের সূচকে ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৪তম। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনের শাসনের এ সূচক করা হয়। এর মধ্যে আছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতার প্রয়োগ, ফৌজদারি বিচার ও দেওয়ানি বিচার পাওয়া, জননিরাপত্তা ও সরকারি তথ্য প্রকাশের মাত্রা। এর কোনোটিতেই আমাদের অগ্রগতির কোনো লক্ষণ নেই, বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা আগের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আইনের শাসনে শীর্ষ অবস্থানে আছে নেপাল (৭০তম)। এরপরই শ্রীলঙ্কা (৭৬) ও ভারত (৭৯)। খারাপ অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পরে আছে পাকিস্তান (১৩০) ও আফগানিস্তান (১৩৪তম)।
এ তথ্য-উপাত্তে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা এই ভেবে স্বস্তিবোধ করতে পারেন যে বাংলাদেশ একাই অবনতির সারিতে নেই। আরও অনেকে আছে। কিন্তু এর বিষময় ফল ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষকেই। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ও পূজাম-পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনেও আছে আইনের শাসনের ঘাটতি। অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে একই অপরাধ বারবার ঘটতে থাকে। অব্যাহত রাজনৈতিক সংকট সত্ত্বেও আইনের শাসনে নেপাল দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থানে থাকার বিষয়টি দৃষ্টান্তমূলক। হিমালয়ের পাদদেশের এই ছোট দেশ থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় আছে।
আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আয়নায় নিজেদের মুখ দেখার চেয়ে অতীতে কে কত খারাপ করেছে, সেই কাসুন্দি ঘাঁটতে ব্যস্ত থাকেন। সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে দুই মেয়াদ শেষ করে তৃতীয় মেয়াদের মাঝামাঝি এসে পড়েছে। আইনের শাসনের তারা এক পা এগিয়ে যদি তিন পা পেছায় তবে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। এ পেছনের দিকে হাঁটা বন্ধ হবে কবে?