গত দেড় বছরেরও বেশী সময় ধরে কোভিডÑ১৯ অতিমারির ছোবলে সারা পৃথিবীতেই অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই পর্যটনেও ধ্বস নামে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ক্রমাগত লকডাউনের কারণে ভ্রমণ ও চলাফেরা সীমিত ছিল। পর্যটনের ক্ষেত্রগুলোও বন্ধ ছিল, সম্প্রতি কোভিডে আক্রান্তের হার নি¤œমুখী হওয়ায় গত আগস্ট ২০২১ থেকেই সীমিত আকারে ভ্রমণ করা শুরু করেছে মানুষ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ধাপে ধাপে ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে এবং ভিসা ও বিমান চলাচল শুরু হচ্ছে। হোটেলÑমোটেল, রিসোর্ট, পর্যটন কেন্দ্র নূতনভাবে সচল হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ পর্যটনের সুদিন আবার ফিরে এসেছে। খুব দূরে কোথও না গেলেও নিকটস্থ বিনোদন ও পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়া শুরু করেছে ভ্রমণ বিলাসীরা। অনেককে দেখা গেছে করোনার প্রকোপকালে অন্য কোথাও না গিয়ে আশেÑপাশের উন্মুক্ত স্থানে, নদীর ধারে বেড়াতে গিয়েছে। এমনকি কেউ কেউ দূরের রিসোটে যেতে না পেরে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের নামকরা হোটেলগুলোতে রাত্রিযাপন করে এসেছে। আমরা নিজেরাও এই সময় লকডাউন মুক্ত অবস্থায় নিজ গ্রামের বাড়ী দু’একদিনের জন্য বেড়িয়ে এসেছি। সেখানে অন্তত: পুকুর, বাগান, ধানক্ষেত অর্থাৎ খোলাÑমেলা জায়গা রয়েছে, রয়েছে এলাকার পরিচিতি মানুষের আনাগোনা। প্রাকৃতিকÑঅরগানিক খাদ্য উপভোগ করা গেছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে পারিবারিকভাবে মাওয়া রিসোর্টে অবস্থান করেছিলাম এবং নিকটস্থ মাওয়া ঘাটে নির্বাচিত ইলিশ মাছ দিয়ে হোটেলে মাছ ভাজা, মাছের মাথা ভাজা এবং লেজের অংশ দিয়ে ভর্তা খাওয়ার মজাটা উপভোগ করেছিলাম। অবশ্য সংগে বেগুন ভাজাও ছিল।
অক্টোবর ২০২১ এর ৮ ও ৯ তারিখে গিয়েছিলাম নিকলী, কিশোরগঞ্জ জেলার একটি অখ্যাত উপজেলা এবং এর অধীন এটি একটি ইউনিয়নও, যার চারিদিকে বিশাল হাওর। এজন্য এটি নিকলী হাওর নামেও পরিচিত। বর্ষাকালে সমুদ্রের মত মনে হয়। শুধু জলরাশি। নিতান্ত গরীব এই এলাকার লোক যাদের মূল পেশা ও কাজ ছিল মাছ ধরা। এটাই তাদের জীবিকার মাধ্যম ছিল। কিন্তু আজ সেটি একটি অনন্য পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। নিকলীর সৌভাগ্য, এখানে অর্থাৎ নিকলীÑমিঠামইন এলাকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের পৈতৃক বাড়ী যেটি এখনো রয়েছে। অবশ্য তিনি কিশোরগঞ্জ শহরেই বাস করতেন। সেখানে তাঁর বাসভবন রয়েছে। কিন্তু শত হলেও নিজের পৈত্রিক ও পূর্বপুরুষের ভিটা বলে কথা। তাকেতো ভুলে যাওয়া যায় না। তিনি নিকলীকে পরিচিত করে তুলেছেন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে। কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলী বাজার এবং তারও পরে অনেকদূর পর্যন্ত বেড়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন এবং নিপুনভাবে কার্পেটিং করা হয়েছে। একসময় এখানকার মানুষের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। আশুলিয়া বাঁধের প্রথম দিকের মত এখানে সকালÑবিকেল, বিশেষ করে বিকেলে মানুষের মেলা বসে। যুবকরা মনের সুখে এবং দ্রুতগতিতে মটর সাইকেল চালিয়ে উপভোগ করে আর রাস্তার দুপাশে বসে চা-ফুচকা খেতে খেতে সুর্যাস্ত অবলোকন করে। বর্ষার দিনে অর্থাৎ মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত যখন বেড়ী বাঁধ বা রাস্তার দুপাশে শুধু জলরাশিতে ¯িœগ্ধ ঢেউয়ের খেলা আর নানা জাতের মাছের ছিরি খেলা চলে তখন মন জুড়ায়ে যায়। নিকলী বাজার এখন হয়ে উঠেছে শহরতলীতে। এখনো শহর হয়নি, হয়তো দুবছর পর এটি পৌরসভার রূপ ধারণ করবে। পর্যটকদের জন্য দু’একটি আধুনিক মানের হোটেলও স্থাপিত হয়েছে। এর একটি “হাওর প্যারাডাইস,” যেখানে আমরা উঠেছি।
০৮ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার সকাল ৭ টায় আমি, আমার স্ত্রী এবং বড় ছেলে আসিফ (জামান আসিফ আহমদ) তারই ড্রাইভ করা গাড়ীতে করে আমরা নিকলীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। সংগে নিকলীর বাসিন্দা ইমরান আমাদের সংগী হয়েছে। সে মহাখালী ডিওএইচএসÑএ আমার সংগে কাজ করে। তাড়াতাড়ি পৌঁছার জন্য তারই পরামর্শে আমরা উত্তরাÑটংগীÑগাজীপুরÑরাজেন্দ্রপুর হয়ে চলতে থাকি। কিন্তু টংগীÑজয়দেবপুরেই ট্রাফিক জ্যামের কারনে ৩ ঘন্টা লেগে যায়। কাপাসিয়াÑপাকুন্দিয়াÑকিশোরগঞ্জ হয়ে নিকলী পৌঁছতে ৬ ঘন্টারও বেশী সময় লেগে যায়। খুব বিরক্তিকর সফর ছিল এটি। পথে সালনা ব্রিজ পার হয়ে একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করি। তখন ১০ টা বাজে। নিকলী বাজারে হাওর প্যারাডাইসের ৭১১ নম্বর কক্ষে আমরা দু’জন উঠি এবং আসিফ ৭০৭ নম্বরে উঠে। প্রতীক (আসিফের ডাকনাম) আগেই কক্ষ দুটি বুক করে রেখেছিল। আমরা পৌঁছি বেলা দেড়টায়। ফ্রেশ হয়ে হাওরপারে হোটেল সেতুতে হাওরের বাইম, আইড়, পাঁচ মিশালি ইত্যাদি মাছ দিয়ে লাঞ্চ সেরে ফেলি। ওখানে ৪/৫টি হোটেল আছে যার মধ্যে এটিই তুলনা মূলকভাবে ভাল, তবে কোনটাই তেমন মান সম্মত নয় যদিও ভাড়া বেশী। আবাসিক হোটেল গুলো সবেমাত্র তৈরী হয়েছে। কক্ষের স্পেস এবং সেটিং ভাল হলেও কিছু আধুনিক সুবিধা এখনো নেই যা অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের হোটেলগুলোতে আছে। কারন যারা ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত তাদের দৃষ্টিভংগী সীমিত। তাদের অভিজ্ঞতাও কম উন্নত মানের আবাসিক হোটেল ব্যবস্থাপনায়। এখনো হোটেলে খাবার ব্যবস্থা শুরু হয়নি। তাদের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট নেই। আমাদেরকে বাইরে থেকেই খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
লাঞ্চ সারতে বিকেল সাড়ে ৩টা বেজে যাওয়ায় আর দূরে কোথাও যাওয়া হয়নি। বেড়ী বাঁধের শেষ মাথায় ইঞ্জিন বোট এবং ইজি বাইকের ঘাট। সেখান পর্যন্ত গিয়ে একটু ভীড়Ñভাট্টা দেখে চলে আসি উল্টোদিকে বাঁধের উপর। সেখান থেকে সুর্যাস্ত দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু মেঘের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। চলে আসি হোটেলে বিশ্রাম, ডিনার করা এবং আগেই ঘুমোতে যাওয়ার জন্য। এরই মধ্যে আমার কাছে খারাপ লাগছিল। অস¦স্তি অনুভব করায় রক্ত চাপ পরীক্ষা করে নিলাম বহন করা ডিজিটাল মেশিনে। একটু বেশীই মনে হল। আরেকবার মেপে অস্বাভাবিক বেশী রিডিং আসল। সংগে সংগেই ছেলের সাথে নিকটস্থ ফার্মেসীতে গিয়ে প্রেশার চেক করি। তাতে মোটামুটি স্বাভাবিক এসেছে ১৪০/৯০। এরপর সুগার মেপে দেখি স্বাভাবিকÑ৬। আস্বস্ত হলাম এবং আর কোন ভয় রইল না। রাতে হালকা খাবার ও ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ভাল ঘুম হল। পরদিন আর কোন অসুবিধা হয়নি। রাতে একটি নূতন খাবার উপভোগ করলাম। বেড়ী বাঁধের এক জায়গায় সন্ধার পর থেকে সাদা আটার রুটি বানিয়ে সেটির ভেতরে সিধোঁল শুটকি ঝাল করে দিয়ে পুলি পিঠার মত মুড়িয়ে তৈরী করা হয় এটি। আসিফ দেখতে পেয়ে কয়েকটা নিয়ে এল হোটেলে। বেশ ভালই লেগেছিল। অন্য কোথাও এটি দেখিনি, হয়তো এটাই নিকলী স্পেশাল।
সকাল ৬ টায় বেরিয়ে শুরুতেই বেড়ী বাঁধের এক বাঁকে একটি গৃহস্থ বাড়ীর খোলা জায়গায় গাড়িটি রেখে আসিফ একটি ইঞ্জিন বোট ভাড়া করে ১৫০০ টাকায়। মিঠামইনের উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমি আর মেরীন (আমার স্ত্রী) বোটের সামনে দুটো চেয়ারে বসি। আসিফ ছইয়ের উপরে বিছানো মাদুরে বসে, সংগে ইমরানও। প্রায় পৌনে দুঘন্টায় আমরা মিঠামইনে পৌঁছি। আমাদের নৌকা যাত্রায় দুপাশে শুধু জলরাশি। কোন কোন সময় অপর পাড় বা ডানেÑবাঁয়ে জলরাশি ছাড়া কিছুই দেখা যেতনা। মাঝে ছোট ছোট দ্বীপের মত কিছু গাছÑপালা, কখনো কখনো দু’একটা পরিত্যক্ত ঘর দেখা যেত। আমরা যখন নিকলীতে তখন বর্ষা শেষ, পানি রাস্তার বেশ নীচে নেমে গেছে। কোন কোন জায়গায় ধান চাষ বা রবিশস্য চাষ শুরু হয়েছে। নিকলী ভ্রমনের জন্য আসল সময় জুন থেকে আগস্ট মাস। আসিফ আগস্ট মাসে একবার নিকলী এসেছিল। তার পূর্ব অভিজ্ঞতার কারনে আমাদের ভ্রমন সহজ ও উপভোগ্য হয়েছে। তবে হাওরের পরিপুর্ণ রূপ দেখা যায়নি। মিঠামইন নেমে বাজারের একটি হোটেলে নাস্তা করে নিলাম। বেশ চলনসই অবস্থা। চিকেন খিচুড়ি এবং তেল ছাড়া পরটা ভাজা খেয়ে তৃপ্তই হলাম। বেরিয়ে একটি ইজি বাইক ঠিক করে বেড়াতে গেলাম মিঠামইনÑঅস্টগ্রাম হাইওয়েতে, আরেক দিকে রয়েছে মিঠামইনÑইটনা রোড। এই হাইওয়েতে বেড়ানো মানে মসৃণ ও উন্নত কার্পেটিং করা রাস্তায় হাওয়ের বুক চিরে ইজি বাইকের গতিময় চলা। অনেকদূর থেকে ভরা হাওর দেখে মনে হতে পারে কোন একটি বড় বোটের চলা অথবা কোন বিশাল মাছ বা জন্তুর সাঁতার কাটা। একই ইজি বাইকে ফিরে এলাম মিঠামইন। যাবার সময় মিঠামইনে রাস্তার বাম পাশে সুউচ্চ মিনারের একটি মসজিদের পাশে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পৈত্রিক বাড়ী। ওখানে তাঁর ভাই থাকেন যিনি একটি কলেজের অধ্যক্ষ। পাশেই একটি সাইনবোর্ড লেখা দেখলাম “রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ফাউন্ডেশন”, যার নির্মাণ কাজ চলছে। বুঝলাম, এলাকার কল্যানের জন্য নিজ অর্জিত অর্থে আরো কিছু করবেন। হয়তো তাঁর ধন-সম্পত্তি এই ফাউন্ডেশনের অধীনে ট্রাস্ট করে দিবেন।
নিকলীর সাধারন মানুষের মুখে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রশংসা। এই এলাকার উন্নয়নে তিনি অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে বেড়ী বাঁধ ও রাস্তাÑঘাট নির্মানে তাঁর পদমর্যাদা ও অবস্থান সহায়ক হয়েছে। তিনি চেয়েছেনতো, বিভিন্ন প্রজেক্ট হয়েছে। হাওরের মৎসজীবি মানুষ আজ আধুনিক পেশায় জড়িত হয়েছে। শত শত বোট তৈরী হচ্ছে পর্যটকদের চাহিদা মেটানোর জন্য, হোটেলÑরেঁস্তোরা গড়ে উঠেছে, দোকানপাট, বাজার গড়ে উঠছে, স্কুলÑকলেজ স্থাপিত হয়েছে। নিকলীতে আধুনিকতা ও নূতন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু হয়েছে। নিকলী এখন একটি গ্রাম বা বাজার নয়, একটি উদীয়মান পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু এটির কোন প্রচার নেই। লোক মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে এর নাম, বিশেষ করে যারা সেখানে বেড়াতে যায় তাদের মাধ্যমে। নিকলী বিধাতার এক অপূর্ব দান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত। বাংলাদেশে আরো হাওর রয়েছে এবং নেত্রকোনাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহও হাওর এলাকা। বৃহত্তর সিলেটের কয়েকটি হাওর ইতোমধ্যে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকর্ষনীয়। কিন্তু তাও প্রাকৃতিকভাবেই গাড়ে উঠেছে। আমাদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সেদিকে এখনো দৃষ্টি দেয়নি। টাংগুয়ার হাওর, রাতারগুল, বিছানাকান্দির মত হাওরগুলিতে প্রচুর পর্যটকদের বিচরণ। কিন্তু নিকলী ও অন্যান্য হাওরগুলিতে বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধাগুলো নেই যাকিছু যৎসামান্য আছে কক্সবাজারÑবান্দরবনকে কেন্দ্র করে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে আমাদের সরকার অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে পর্যটনের বিভিন্ন প্রকল্পে। জানা যায় দেশীÑবিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হচ্ছে। এর প্রায় সবই কক্সবাজারÑটেকনাফÑইনানীÑসেন্টমার্টিন, সুন্দরবনকে ঘিরে। হাওরের উন্নয়ন ও একে পর্যটন শিল্পের অধীন আনার কোন পরিকল্পনা প্রণীত হয়নি। এরই মধ্যে মিঠামইনÑইটনা হাইওয়ের কাছে হাওয়ের মধ্যখানে বিলাসবহুল ও উচ্চ ভাড়ার ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নির্মান করা হয়েছে এবং মিঠামইন যাবার পথে হাওয়ের মাঝখানে একটি ক্যান্টনমেন্ট স্থাপিত হচ্ছে যার নির্মান কাজ চলছে। আমাদের আশা, সরকারী ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত উদ্যোগে নিকলীÑমিঠামইন হাওর একটি আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে এবং এর বিকাশের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
মিঠামইন থেকে একই বোটে আমরা ফিরি বেলা ১ টার দিকে। নেমেই গরমের কারণে ডাব খেয়ে নিই। প্রতিটি ডাব ৮০ টাকা অর্থাৎ ঢাকার দর যদিও নিকলীতে নারিকেল হয় এবং স্থানীয়ভাবে দাম অনেক কম। বাইরে থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে দোকানদারগণ এভাবেই হাঁকে এবং বিক্রীও হয়। ইমরানদের বাড়ী নিকলীর পাশেই গুনধর গ্রামে। সে আগে থেকেই বলেছিল তাদের বাড়ীতে দুপুরে খাওয়া জন্য। তার স্ত্রী ফারিয়াকে (যে আমার বাসায় গৃহকর্মী) গত রাতে সে ঢাকা থেকে আনিয়েছে আমাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার জন্য। তার বাড়ী হাওরের পাড়ে। তার মাÑবোনÑস্ত্রী মিলে আমাদের আন্তরিক আপ্যায়ন করেছে। রাজ হাঁসের মাংস, খোয়াড়ের মুরগী, হাওরের মাছ, শেষে ডেজার্ট ফিরনী এবং গাভীর দুধ। সাধারন মানুষ হলেও অতিথেয়তায় অসাধারন এরা। যাওয়ার সময় বাজার থেকে মিষ্টি নিয়েছিলাম এবং তাদের ছেলের হাতে ১০০০ টাকা বকশিস দিয়ে কিছুটা হলেও তৃপ্ত হলাম। সেখান থেকে আমরা ভৈরবÑনরসিংদী রুটে ঢাকা পৌঁছি রাত ৮-৩০ মিনিটে। সময় প্রায় ৬ ঘন্টা লাগলেও রাস্তা ভাল ছিল এবং কোন জ্যাম ছিল না। তবে যারা খুব ভোরে ঢাকা থেকে রওনা দিবেন তারা টংগীÑজয়দেবপুর হয়ে নিকলী যেতে ৩ ঘন্টার বেশী সময় লাগবে না, কেননা সকালের জান জটটা পাওয়া যাবে না। নিজস্ব গাড়ী ছাড়াও ট্রেনেÑবাসে কিশোরগঞ্জ হয়ে নিকলী যাওয়া যায়।
অধ্যক্ষ ও কলাম লেখক