বাংলাদেশ কেন আমদানি নির্ভর দেশ হয়ে উঠছে ক্রমশ? কারণ একটাই আমাদের মধ্যে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-এমপি-আমলারা রাজনৈতিক-প্রশাসনিক-অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু লোভি- মোহগ্রস্থ দুর্নীতিবাজের কারণে নির্মম অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ছাত্র-যুব-জনতার-স্বাধীনতার বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন নাগরিক হিসেবে ভাবতেই ভুলে যাচ্ছি অধিকার আদায়ের কথা। একবারের জন্যেও খেয়াল করি না যে, জাতি হিসেবে বাংলাদেশী যেমন প্রায় ১৮ কোটি, তেমন বিশ^ময় কোটি কোটি মানুষের ভাবনায় আছে অধিকার আদায়ের কথা। কিন্তু আমরা সেই অধিকার আদায়ের রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছি।
একটু গভীরে ভাবলে দেখা যায়, সৌরজগৎ সৃষ্টি হয় ৪৫৬ কোটি ৭০ লাখ বছর আগে। এর অনেক অনেক পরে তৈরি হয়েছে আমাদের পৃথিবীর। পৃথিবী সৃষ্টির অনেক অনেক পরে মানুষ এসেছে। মানুষ এসেই কিন্তু আমার আপনার মত কোট-টাই পরে অফিস করা শুরু করে দেয় নি কিংবা ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করার মত সুযোগ তাঁদের ছিল না। ভেবে দেখুন তো পৃথিবীর প্রথম দিককার একজন মানুষের এবং আপনার মাঝে কি কি পার্থক্য? সেই পার্থক্য গুলো নিশ্চয়ই হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় নি, বরং আমরাই সেই পরিবর্তনকে নিয়ে এসেছি। “আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!” ঠিক তাই। আমরা জেগেছি, পরিবর্তন এসেছে। মোট কথা হল আজকের এই সভ্যতা, আজকের এই সভ্য মানুষের তকমা কোটি কোটি বছরের গবেষণার ফল যা এসেছে সদা পরিবর্তন পিপাসু মানুষের হাত ধরে। মানুষ এই পরিবর্তন চেয়েছে নিজেকে আরও একটু ভালো রাখার প্রত্যয়ে।এর ফল ভোগ করছি আমরা। এর ফল ভোগ করবে আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ। গবেষণার জাদুকরী ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয় সবখানে। Smart Marketer হিসেবে আপনি যদি সামনে এগিয়ে যেতে চান, ধারাবাহিক R&D (Research and Development) কেবলমাত্র জরুরীই নয় ফরজ। আমি যদি আপনার সামনে পৃথিবীর বড় বড় কিছু কোম্পানির নাম বলতে পারি যারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার R&D তে invest করে এবং এক পর্যায়ে সফল হয়, আমরা নিশ্চয়ই তর্ক করব না যে জ্উ একটা অপ্রয়োজনীয় বিষয়। ঋড়ৎনবং গধমধুরহব এর মতে অঢ়ঢ়ষব, এড়ড়মষব, ৩গ, এবহবৎধষ ঊষবপঃৎড়হরপং, ঞড়ুড়ঃধ, গরপৎড়ংড়ভঃ, চ্এ, ওইগ, ঝধসংঁহম, ওহঃবষ –এই কোম্পানি গুলি জ্উ তে প্রচুর রহাবংঃ করে। সেই ইনভেস্ট, সেই চেষ্টা কেবল লোভ মোহের কারণেই যেন না হয়; আমাদের গণমানুষের কথা ভেবেই যেন বিশ^ব্যাপী প্রত্যয়ের পথ চলে উন্নয়নের পথিকগণ। এই প্রত্যাশায় এগিয়ে চলতে চলতে বলতে চাই- বিশ্বব্যাংক মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। একটি হচ্ছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত হবে। যে সব দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলার বা তার নিচে, তাদের বলা হয় নিম্ন আয়ের দেশ। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এ তালিকাতেই ছিল। আর ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে শুরু করে যেসব দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার, তারা মধ্যম আয়ের দেশের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আবার আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে শুরু করে ৪ হাজার ১২৫ পর্যন্ত হলে তা হবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং আয় ৪ হাজার ১২৬ ডলার থেকে শুরু করে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার হলে দেশগুলোকে বলা হয় উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। এর চেয়ে বেশি মাথাপিছু জাতীয় আয় হলে সেই দেশগুলিকে বলা হয় উচ্চ আয়ের দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার। তবে বিশ্বব্যাংকের পদ্ধতি অনুযায়ী তা এখন ১ হাজার ৪৫ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণেই নতুন তালিকায় মধ্যম আয়ের দেশ হতে পেরেছে বাংলাদেশ। সরকারের ১০ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার কথা বলা আছে। তবে তার পাঁচ বছর আগেই কাগজে-কলমে মধ্যম আয়ের দেশ হয় বাংলাদেশ।
এমন পরিসংখ্যান আর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার রাস্তায় অনেকেই ভাবছেন- ‘দেশ এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে মানুষের জীবন মান।’ কিন্তু তা কতটা হয়েছে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যদি দৃষ্টি দেই, দেখা যাবে- বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি যে ঊর্ধ্বমুখী, মাথা পিছু আয় বাড়ছে এটা তার বড় প্রমাণ। বাংলাদেশের প্রতি বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতারা এখন আগের চেয়ে বেশি আস্থা পাবেন। আন্তর্জাতিক ঋণবাজার থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি তুলনামূলক সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে ঋণের ক্ষেত্রে নতুন শর্তের মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উন্নীত হলেও বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকাতেই থাকবে। তাই এলডিসির সুবিধাগুলোও বহাল থাকবে বাংলাদেশের জন্য। তবে এই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মানে এই নয় যে বাংলাদেশে আয় বৈষম্য কমেছে। মানব উন্নয়ন সূচকে আমরা পিছিয়ে আছি। দারিদ্র্য সীমা কমলেও আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। মধ্যম আয়ের দেশের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় সীমা ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার। আর আমাদের মাথাপিছু আয় আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে প্রকৃত অর্থে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে আরো ১১ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে। আমাদের এখন কাজ হচ্ছে এই মাথাপিছু আয়কে আরো এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি গড় হিসেবে নয় প্রকৃত অর্থেই সবার আয় বাড়ানোর দিকে নজর দেয়। আর এজন্য শিক্ষা, অবকাঠামো ও মানব সম্পদ উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। নজর দিতে হবে বণ্টন ব্যবস্থার দিকে। ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার অনেক দেশ এই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় আটকে আছে। এর প্রধান কারণ তারা শিক্ষা এবং মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। উৎপাদন বাড়াতে পারেনি, পারেনি রপ্তানি বাড়তে বাংলাদেশকে সেখান থেকে এখন শিক্ষা নিতে হবে। মধ্য আয়ের দেশের কাতারে যাওয়াই বাংলাদেশের বড় অর্জন নয়, বড় অর্জন হবে বাংলাদেশের নিন্মবিত্ত-মধ্য নিন্মবিত্ত শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক বর্তমান অনুযায়ী জীবন মান নির্মাণ করা।
একটু পেছনে ফিরে গিয়ে যদি কথা বলি- ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মানদন্ডে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়া ঋণগ্রস্তশ্রীলঙ্কাকে উদ্ধারে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশের জন্য এটি ছিলো নিঃসন্দেহে গর্বের ব্যাপার। একইসঙ্গে, ওই দেশটির বিপদ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। এসব বিষয়ে সরকার যদি এখনই সতর্ক না হয়, তবে কয়েক বছর পর বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, দুই দেশের অর্থনীতির দুর্বল দিক একই- স্বল্প কর, রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা এবং স্বল্প পরিমাণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ। তবে, বাংলাদেশের হাতে এখনো শ্রীলংকার মত বিপর্যয়ে না পড়ার মতো যথেষ্ট সময় আছে।
যদিও মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ। ফলে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার মতো বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নেওয়ার সুযোগ আছে দেশটির। ২৫ থেকে ৪০ বছরের দীর্ঘ মেয়াদের এসব ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত আরও সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি, এসব ঋণের সুদের হার দুই শতাংশেরও কম। দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিদেশি ঋণের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এমন একটি পরিস্থিতিতে, ১৯৯৭ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যায় দেশটির। ফলে অর্থের জন্য অন্য উৎসের খোঁজ করতে হয় তাদের। অতিত বলছে- ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কা প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল সভরেন বন্ড (আইএসবি) ছাড়ে, যার মূল্য ছিল ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ধীরে ধীরে দেশটি বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণের এই চ্যানেলটির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে শুরু করে। আইএসবিগুলোর ঋণ পরিশোধের মেয়াদ পাঁচ থেকে ১০ বছর। ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত কোনো গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যায়না এবং সুদের হার ছয় শতাংশের বেশি। এ ছাড়া, এখানে ঋণের আসল পরিশোধের বিষয় রয়েছে। কোনো আইএসবির মোট ধার করা পরিমাণ, বন্ডের মেয়াদপূর্তির সময়ে একবারে নিষ্পত্তি করতে হয়। সহজ শর্তের ঋণের মতো বছরের পর বছর ধরে পরিশোধের সময় থাকে না। তাই, যখন কোনো আইএসবির মেয়াদ পূর্ণ হয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে।
২০২০ সালের শেষের দিকে, সভরেন বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ শ্রীলঙ্কার মোট বকেয়া বৈদেশিক ঋণের ৫০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। বাণিজ্যিক ঋণের দিকে ঝুঁকে পড়া দেশটির সরকার যদি কাঠামোগত দুর্বলতাগুলোর সমাধান করতে পারতো, তাহলে পরিস্থিতি এমন হতো না। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ১২ দশমিক দুই শতাংশ। বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাতও প্রায় ১০শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওই অনুপাতের সঙ্গে যার খুব বেশি পার্থক্য নেই। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণ কয়েক মিলিয়নের মধ্যে আটকে আছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে তা বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি পর্যটন ও পোশাক রপ্তানির ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল, যা এটিকে বিদেশ নির্ভরশীল করে তুলেছে। শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের সৌভাগ্য হলো যে, গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি ও অদক্ষ প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কারণে বাংলাদেশের শক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে উঠেছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি বা দুটি উৎসের উপর নির্ভরতা আর অদক্ষ শ্রমিকের মাধ্যমে অর্জিত প্রবাসী আয়ে, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে কোনো সংকট দেখা দিলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে; যেটা বৈশ্বিক কোভিড পরিস্থিতিতে শ্রীলংকার ক্ষেত্রে ঘটেছে। চলতি বছরের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হবে। এপ্রিলে দেশটির প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। ফলে মরিয়া হয়ে অর্থের খোঁজ করছে তারা। গেদ্বাবাল ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো একতরফাভাবে শ্রীলঙ্কার সভরেন রেটিং কমিয়ে দেওয়ায় দেশটিকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তাই এ বছর আরও আইএসবি ছাড়ার কথা আর ভাবা সম্ভব নয় দেশটির পক্ষে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ গত বছর শ্রীলঙ্কার সভরেন রেটিং কমিয়ে ‘সি সি সি’ করে দেয়। একইভাবে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এজেন্সি মুডিও দেশটির সভরেন রেটিং কমিয়ে দেয়। বেসরকারি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান বর্তমানে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, সেগুলো রাতারাতি তৈরি হয়নি। তাই, দুই দেশে কীভাবে সংকট তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশের তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত ১৪ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়, যা আন্তর্জাতিক মানদন্ড ৪০ শতাংশের অনেক নিচে। তবে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এখানে বলে রাখি- একটি গাড়ি যখন উঁচু থেকে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন যত নিচে নামতে থাকে পতনের গতি তীব্র হতে থাকে এবং এ বিষয়ে আর কিছুই করার থাকে না। বাংলাদেশ অনেকটা তেমন পরিস্থিতির দিকেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ, যা আমাদের কারোই কাম্য নয়। আর তাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে চলেছে। তাই, ২০২৭ সালের মধ্যেই দেশটির বিশেষ সুবিধার ঋণ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারকে এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি করা গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে আসে। আমরা যদি দ্রুত আমাদের রপ্তানিতে বৈচিত্র না আনতে পারি, তবে সমস্যায় পড়ব। কেবল রেমিট্যান্সের কারণে আমাদের রিজার্ভ বেশি। কিন্তু, রেমিট্যান্সের বর্তমান অবস্থা সবসময় থাকবে না। লোকজন আবার আগের মতো অবাধ যাতায়াত শুরু করে দিলে এটি কমে যেতে পারে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তখন কমে যাবে বলে ধারণা করছি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে কথা, তা হলো- বেসরকারি খাতের যে অবস্থা, তাতে আমাদের ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা জিডিপির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। রাজস্ব দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু, আমাদের রাজস্বের ভিত্তি দুর্বল। জিডিপি অনুপাতে আমাদের রাজস্ব আয় বিশ্বের সবচেয়ে শোচনীয় ব্যবস্থাগুলোর একটি। অতি উৎপাদনশীল প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত কড়াকড়িভাবে বিবেচনা করা উচিত। প্রতিটা প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়া কোনোভাবেই সঠিক কাজ হচ্ছে না। ঠিক হচ্ছে না, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের রহস্যজনক ভূমিকা রাখা, ঠিক হচ্ছে না জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে নিরব ভূমিকা নেয়া, ঠিক হয়নি নিন্মবিত্ত-মধ্য নিন্মবিত্তদের কথা না ভেবে একের পর এক কষ্টবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। অতএব, বাংলাদেশকে বাঁচাতে, বাংলাদেশকে সাজাতে সরকার পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাবে, সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে করে কোনভাবেই বাংলাদেশের মানুষ সহায়হীন হয়ে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে আসা সাড়ে ৪ কোটি নতুন দরিদ্র নির্মাণ পক্রিয়া না হয়...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি