চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই চারঘাট উপজেলায় মাঠে নেমেছেন চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীর কেউ কেউ।
তফসিল অনুযায়ী, চারঘাটের ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হওয়ার কথা আগামী ৭ ডিসেম্বর। এর আগে প্রচার চালালে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন। কিন্তু এ বিধি মানছেন না অনেকেই।
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মাঠে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছেন সরদহ ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু ও ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান তপন।
আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর ২০ দিন আগেই এই দুই প্রার্থী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করেই নিয়মিত উঠান বৈঠক, পথসভা ও মোটরসাইকেল মহড়াসহ নানা ধরনের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, এক অপরের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক নানা বক্তব্য, দলীয় প্রতীক সংবলিত পোস্টার, প্রচারণার ছবি ও উঠান বৈঠকের লাইভ ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এরইমধ্যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে উঠান বৈঠকে এই দুই প্রার্থীর সমর্থক ও কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে গিয়েছিলেন। এ অবস্থায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণার আগেই ওই ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন; যা তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারও করছেন। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী মধু জঘন্য মনোবৃত্তি নিয়ে নির্বাচনে এসেছেন। তিনি আমার লোকজনের হাত-পা কেটে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর এত বড় সাহস, এত বড় স্পর্ধা কীভাবে হয়? সে তো হাতুড়ি খাওয়ার মানুষ। মধুর এসব ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠছে। জনগণ তার জবাব দেবে।’
আচরণবিধির লঙ্ঘন করে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান বলেন, ‘হ্যান্ড মাইক নিয়ে পথসভা ও প্রচারণা চালানো নৌকার প্রার্থী আগে শুরু করেছেন। বাধ্য হয়ে আমিও পথসভা করছি। নৌকার প্রার্থী সবখানে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, এজন্য আমার বক্তব্যে তার উত্তর দিয়েছি। বরং আমার উঠান বৈঠকের পাশে তাঁর লোকজন এসে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’
প্রতিনিয়ত আচরণবিধির লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাসানুজ্জামান মধু বলেন, ‘এলাকার মানুষের কাছে আমি পরিচিত। পরপর দুবারের চেয়ারম্যান। আমি মনোনয়ন পাওয়ায় সবাই খুশি। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু না করলেও কর্মী-সমর্থকেরা হয়তো প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জনসম্মুখে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সরদহ ইউনিয়নের সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা ইদানীং লক্ষ করছি, এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লক্ষণ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা দুঃখজনক। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থীদের অবশ্যই আইন মেনে চলা উচিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার করা আচরণবিধির লঙ্ঘন। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার বা ভোট চাইতে পারবেন না। এমন অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চারঘাটের ৬টি ইউনিয়নে ২৬ ডিসেম্বর ভোট। ৬ জন চেয়ারম্যান, ৫৪ জন সাধারণ সদস্য ও ১৮টি সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৫ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৬ ডিসেম্বর। ৭ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার।