যাই যাই করেও করোনা ভাইরাস সহজে যেতে চাচ্ছে না। গোটা বিশ্ব থেকে সংক্রমণের মাত্রা একটু কমে আসতে না আসতেই এলো আরেক নতুন বিপদ। করোনাভাইরাসের নতুন এক ধরন ‘ওমিক্রন’। সারা বিশ্বই ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একে উদ্বেগের কারণ বা ‘ভেরিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এরইমধ্যে ওমিক্রন ৪০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত পাঁচজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা না গেলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বাংলাদেশও ওমিক্রন ছড়ানোর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু এখনো দেশে যথেষ্ট সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে স্থলবন্দরগুলোর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ খুবই দুর্বল। জানা যায়, বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বহু যাত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তাদের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিনসহ অন্য যেসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল বন্দরগুলোতে তা খুব কমই দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ভারত থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক আসছে। এসব ট্রাকের চালকরা মাস্ক না পরেই বন্দরে থাকা হোটেল, চায়ের স্টল বা দোকানপাটে যাওয়া-আসা করছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে মেলামেশা করছেন। এতে দেশে ভাইরাসের নতুন ধরনটি ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে এবং অপেক্ষাকৃত ভয়ংকররূপে আত্মপ্রকাশ করছে। এরইমধ্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশ কিছু টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। বহু মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। কিন্তু সেই সব টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
স্বস্তির বিষয় যে, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ খুবই কম।আর অস্বস্তির বিষয় হলো সেই সুবাদে প্রায় সব নিয়ম-কানুন উঠে গেছে। গণপরিবহন, হাট-বাজার, বিপণিবিতান, অফিস-আদালত, কলকারখানাÑকোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই। ওমিক্রনের কথা বাদ দিলেও এই প্রবণতা অত্যন্ত ভয়ংকর হতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ঢেউয়ের পরই করোনা সংক্রমণ শূন্যের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। আবার নতুন ঢেউ ভয়ংকররূপে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ঢেউ বা ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রমণ আগের চেয়েও ভয়ংকর হয়েছিল। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দুটিই বেশি ছিল। এখনো যদি আমরা যথেষ্ট সতর্কতামূলক পদক্ষেপ না নিই, তাহলে তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরো ভয়ংকররূপে আক্রমণ করতে পারে। কাজেই সরকার দ্রুত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটাই কাম্য।