নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। কিন্তু মোটর সাইকেল চালক তরুণ সমাজই অধিকাংশ দুর্ঘটনার শিকার। দুর্ঘটনার ৩২ শতাংশ ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই পথচারী, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল আরোহী। বিশ্বব্যাংক, ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ডিএল অটো মেইল (এফআইএ) ব্র্যাকও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তারা বলছেন, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করলে ৩৯ শতাংশ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। এতে যেমন অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু ঝুঁকি কমবে, তেমনি দেশও আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
সড়কে আগের তুলনায় মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট ব্যবহার তুলনামুলকভাবে বেড়েছে। অবশ্য পুলিশের হেলমেট ব্যবহারের প্রতি ঘোষণার কারণে এখন মোটর সাইকেল চালক ও আরোহী উভয়েই হেলমেট ব্যবহার করছেন। সড়কে ব্যাপক হারে মোটর সাইকেল বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের প্রতি কেউ সচেতন হন নি। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে সবাই হেলমেট ব্যবহার করছেন ঠিকই। কিন্তু নিজেদের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারছেন না। ফলে ছোট গাড়ির বড় ঝুঁকিতে রয়েছে দ্বিচক্র এ যানটি।
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে সারা দেশে ১ হাজার ৬৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭৫৮ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ১২৩ জন। গত বছর একই সময়ে সারা দেশে ১ হাজার ১১টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২৬ জন নিহত হন। এ হিসেবে গত ১০ মাসে ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে এবং ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রাণহানি বেড়েছে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সারা দেশে এখন ৩৫ লাখ মোটর সাইকেল চলছে। এরমধ্যে শুধু রাজধানীতেই চলছে ১২ লাখের বেশি। দেশে চলাচলকারী অন্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল ৩০ গুন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ দেশের তরুণ সমাজ ঝুঁকি নিয়ে সেই দ্বিচক্রযানটি চালাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা যে তাদের মৃত্যু-ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা তারা বুঝতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক শো-ডাউনেও এসব তরুণকে মোটর সাইকেল সহ অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে যদি মানসম্মত হেলমেট যথার্থ হয়, তবে সরকার কেন এদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না। নিম্নমান হেলমেট আমদানি বন্ধ করে মানসম্মত হেলমেট আমদানির নীতিমালা করে মোটর সাইকেল আরোহীদের মৃত্যুঝুকি কমাতে তৎপর হওয়া এখন সময়ের দাবি। অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু বা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব জীবন কারো কাম্য হতে পারে না। আর মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। মানহীন হেলমেট অর্থের অপচয় ও মৃত্যুঝুকি রোধ করতে পারছে না। অন্যদিকে নিরাপদ সড়ক শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, পথচারী, গণ-পরিবহন যাত্রী, চালক ও সহকারীদের জন্যও জরুরি। এজন্যে শুধু আইন করলেই হবেনা, সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতাও আবশ্যক।