বকশীগঞ্জের ভারতীয় সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে জুম চাষের পাশাপাশি বানিজ্যিক ভাবে চলছে মধু চাষ। মৌ মাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত পুরো পাহাড়ী এলাকা। মধু সংগ্রহে ব্যাস্ত সময় পার করছেন মৌ চাষিরা। চারিদিকে গাছের ফাঁকে ফাঁেক শুধু সারিবদ্ধ মৌ-মাছির বক্স। দেখে মনে হয় এ যেনো মৌ-মাছির জগত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় অর্ধশতাধিক মৌ-চাষি এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।
জানা যায়,প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌ-চাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য বকশীগঞ্জে আসেন। বিস্তীর্ন প্রান্তরজুড়ে থাকে হলুদের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ আর দিগন্ত ছোঁয়া সরিষার ক্ষেত। গ্রামের পর গ্রাম হলুদ ফুলের টানে ছুটে মৌমাছির দল। সরিষার ক্ষেতের পাশে মাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করেন তারা। তবে চলতি বছরে সরিষায় এখনো ফুল ফুটেনি। ডিসেম্বরের শুরুতেই সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করবেন তারা। এখন গারো পাহাড়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অর্ধশতাধিক মৌখামারি কয়েক হাজার মৌবক্স নিয়ে অস্থায়ী বসতি গড়েছেন গারো পাহাড়ে।
সাতক্ষীরা থেকে খামারী রবিউল ইসলাম জানান,৪ শতাধিক মৌবক্স রয়েছে তার। যেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় দেড় হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করবেন তিনি। প্রতিবক্স থেকে কমপক্ষে ৫ কেজি মধু পাওয়া যাবে।
বগুড়া থেকে আসা মৌখামারি মহসীন আলী, এক সপ্তাহ আগে তিনি ও তার দল তিন শতাধিক মৌবক্স নিয়ে এখানে এসেছেন। পাহাড়ে মধু সংগ্রহ শেষে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করবেন তারা। সরিষা ফুল শেষ হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকবেন তারা। এখান থেকেই তারা দুইশ মণ মধু সংগ্রহ করবেন। তিনি আরও জানান, প্রতি সপ্তাহে একবার করে বক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন। প্রতিবার একটি বক্স থেকে প্রায় ৪/৫ কেজি মধু পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মধু এখান থেকেই ৬০০/৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অনেক সময় এর চেয়ে আরো বেশি দামে বিক্রি হয়। তবে সরিষা ফুলের মধুর দান কিছুটা কম হয়।
নরসিংদী থেকে আসা মৌচাষি রিয়াজুল জানান,মৌমাছিরা মধু এনে বক্সে জমা করে। সপ্তাহে একদিন মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি বক্স থেকে তিন-চার থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত কেজি মধু পাওয়া যায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এ মৌসুমে একটি বক্স থেকে ৭/৮ কেজি মধু সংগহ্র করা সম্ভব হবে।
মৌখামারি জানান, মাঠে সরিষা ফুল ফোটার শুরুতে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। আগাম চলে আসায় গারো পাহাড়ে মধু সংগ্রহ করছেন এখন। মৌচাষ সৌখিন ও লাভজনক হওয়ায় বাড়তি আয় ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে মধু চাষের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে।
বালিঝুড়ি রেঞ্জের ডুমুরতলা বিট কর্মকর্তা আবু হাসেম চৌধুরী বলেন, গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকারের ফুল জন্মে। আর সেখান থেকেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। তাই গারো পাহাড় মধু চাষের উপযুক্ত স্থান। এখানে কেউ মৌচাষ করে মধু উৎপাদন করতে চাইলে বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে তা করতে পারে। এর মাধ্যমে আরও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।