সততার সাথে আরেকটু স্বচ্ছল জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখতেন গোলাম রসুল। কৃষকের সন্তান,তাই পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে কৃষিকেই বেঁচে নেন তিনি। প্রায় ৩ বছর আগে নিজের জমানো কিছু টাকা ও চাকুরীর সুবাদে জিবি ফান্ড থেকে লোন নেয়া সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ভাইদের সহযোগিতায় সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ শুরু করেন। গত বছর অল্প পরিমাণে ফল আসলেও এ বছর গাছ ভর্তি ফল আসে। আশায় বুক বাঁধেন তিনি। কমলা বিক্রি করে অনেক টাকা হবে, পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে। এবার থেকে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারবেন। বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ফল বিক্রি করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। মুহুর্তেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। বাজারে চাহিদা নেই। ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছেনা। যাও একজনকে পেলেন তিনি বাগান থেকে কমলা নিয়ে বাজারে গিয়ে অর্ধেকও বিক্রি করতে পারলেন না। কমলা বিক্রির এ অবস্থা দেখে হতাশ গোলাম রসুল। ক্ষতিগ্রস্থ গোলাম রসুল এখন পরিবারের কাছে অবহেলার পাত্র। চায়না কমলা চাষে শুধু গোলাম রসুল নন এমন স্বপ্ন দেখা হাজারো তরুন উদ্যোক্তার স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের মাসলিয়া গ্রামের গোলাম রসুল জানান, তিনি বাংলাদেশ পুলিশের এ এস আই পদে কর্মরত আছেন। প্রায় ৩ বছর পূর্বে তিনি বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে দেখে চায়না কমলার চাষ শুরু করেন।এমনকি ১’শ গাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় হওয়ার স্বপ্ন দেখান তিনি। কালবিলম্ব না করে তিনি সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ করেন গোলাম রসুল। এ বছর গাছে যখন ফল এল তখন বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। কমলার ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজা খুঁজির একপর্যায়ে একজনকে পেলেও তিনি বাগান থেকে কমলা নিয়ে বাজারে অর্ধেকটাও বিক্রি করতে পারলেন না। গোলাম রসুল দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানান, কমলা চাষ করতে গিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিতে পড়ে পরিবারের কাছে তিনি আজ অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক আসাদ শেখ জানান, তিনি ১১ কাঠা জমিতে চায়না কমলার চাষ করে ১ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ ছাড়া ২৬ কাঠা জমিতে মেন্ডরিন কমলা করে ২ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হন। দুই বাগানের বেশ কয়েকটি গাছ নিজেই কেটে ফেলেছেন এবং অবশিষ্ট গাছ শ্রমিক নিয়ে বাকি চায়না কমলা ও মেন্ডারিন কমলার গাছ কেটে ফেলবেন। চৌগাছা উপজেলার শিশুতলা গ্রামের আলমঙ্গীর হোসেন জানান, তিন বছর পূর্বে ইউটিউব দেখে ২ বিঘা জমিতে চায়না কমলার বাগান করেন। এবছর গাছে অনেক কমলা আসে। সেই কমলা ঢাকা বিক্রি করতে পাঠান। ব্যাপারিরা তাকে জানান, এ কমলা ঢাকায় বিক্রি হয় না। ব্যাপারিরা ঢাকায় আর চায়না কমলা না পাঠাতে তাকে অনুরোধ করেন। চায়না কমলা চাষ করে তার ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। তাই রাগ করে নভেম্বর মাসে সব গাছ কেটে ফেলেছেন। ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মফিজুর রহমান মাফি বলেন, তিনি ২০১৯ সালে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ করেন। এবছর গাছে অনেক ফল এসেছে। কিন্তু কোয়ালিটি ভালো না হওয়ায় তিনি একটি ফলও বাজারজাত করেননি। চায়না কমলা লাগিয়ে তার প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনিও খুব দ্রুতই গাছ গুলো কেটে ফেলবেন বলে জানান।