প্রকৃতির সুস্বাস্থের জন্য বিরাট হুমকি হলো পলিথিন। বিশেষকরে এটি মাটির গুনাগুণকে প্রবলভাবে বিনষ্ট করে। বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে বাংলাদেশ প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। বাস্তবে বাংলাদেশে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। ২০২০ সালে সম্পাদিত বিশ্বব্যাংকের এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে শহর এলাকায় জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে গড়ে ছয় কেজি করে। ২০০৫ সালে বার্ষিক জনপ্রতি ব্যবহার ছিল তিন কেজি, ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯ কেজিতে। আর ঢাকা মহানগরীতে ব্যবহার হচ্ছে জনপ্রতি গড়ে ২৪ কেজি করে। এ হারে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়তে থাকলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। তাই সরকার প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো ও পুনর্ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় পরিকল্পনা নিয়েছে। এখন এই পরিকল্পনার যথার্থ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
এটি স্পষ্ট যে, ঢাকায় জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক বর্জ্যে ড্রেন আটকে যাওয়া। খাল-নদী-জলাশয়ের তলদেশও প্লাস্টিক জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গত এক বছরে খাল ও জলাশয় থেকে ৭৯ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করেছে, যার বড় অংশই প্লাস্টিক। ২০১২ সালে বুড়িগঙ্গার তলদেশে প্রায় ১০ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর পাওয়া গিয়েছিল। ঢাকার চারপাশের সব নদী-খালের অবস্থাই কমবেশি একই রকম। এভাবে পলিথিন জমা হওয়ায় ভূগর্ভে পানির প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এতে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ফসলি জমির উর্বরতাও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। শুধু কাগুজে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ধ্বংসের এই আয়োজন রোধ করা যাবে না। জানা যায়, শুধু ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে হাজারের বেশি কারখানা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করছে। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৬৪৬ টন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এর মাত্র ৩৭ শতাংশ রিসাইকল বা পুনর্ব্যবহার হয়। বাকি ৬৩ শতাংশ যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এই ধ্বংসাত্মক পরিণতির জন্য প্লাস্টিক ব্যাগের অবাধ উৎপাদন যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। সরকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সেই পরিকল্পনাই হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০ শতাংশ বন্ধ করা হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের বর্জ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশ হ্রাস করা হবে।
প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মতো, তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য শুধু পরিকল্পনা ঘোষণা করাই যথেষ্ট নয়। পরিকল্পনার শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে প্লাস্টিক উৎপাদন, বিক্রয়, পরিবহন, বিতরণসহ সব ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন বলবৎ করার উদ্যোগ নিতে হবে।