আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশে অপরাধ ক্রমাগত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খুন, অপহরণ, ডাকাতি-ছিনতাই, ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা, চাঁদাবাজিÑএসব যেন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরো দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থায় নাগরিকদের উদ্বেগ চরমে উঠেছে। সম্প্রতি নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মুজিবুর রহমান (৫০) নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে হাত-পা বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার চর মিলপাড়ায় সবুজ হাসান (১৯) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোলাম রাব্বি (২৪) নামের এক অটোরিকশাচালককে গলা কেটে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে রিয়াদ খান নামের এক স্কুলছাত্রকে হত্যা করে কপোতাক্ষ নদে ফেলে রাখা হয়। নওগাঁর বদলগাছীতে মেহেদী হাসান (৩৫) নামের এক যুবককে কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মেহেদি (১৬) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত ও আরমান (১৬) নামের আরেক ছাত্র আহত হয়। কক্সবাজারের ঈদগাও উপজেলার কৈলাশঘোনা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে দুটি মেয়েশিশু ও মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, তাদের হত্যা করা হয়েছে। সব ঘটনাই ঘটেছে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাতের মধ্যে।
জানা যায়, কক্সবাজারের একটি হোটেলে স্বামী ও সন্তানকে অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। গাজীপুরে কিছু সন্ত্রাসী দিনের বেলা কয়েকজনকে আহত করে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এক সপ্তাহেও তাকে উদ্ধার করতে না পারায় বুধবার স্থানীয় লোকজন রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। যশোরের বেনাপোলে মঙ্গলবার রাতে নিজেদের ট্রাকে ঘুমিয়ে থাকা ১০ ভারতীয় ট্রাকচালক ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। কয়েক দিন আগে অনুরূপভাবে আরেক চালককে ছিনতাইয়ের সময় এমনভাবে ছুরিকাঘাত করা হয় যে তাঁর শরীরে ১৯টি সেলাই দিতে হয়েছিল। ওপরে খুন-সন্ত্রাসের যে বিবরণ দেওয়া হলো, তা দেশের উল্লিখিত সময়ের সম্পূর্ণ চিত্র নয়, একটি খ-িত চিত্র মাত্র। এবার ইউপি নির্বাচনের সময় আরো একটি ভয়ংকর দিক লক্ষ করা গেছে। তা হলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে যেভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে তা রোধ করা না গেলে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে যাবে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করছে।
এটি স্পষ্ট যে, অপরাধের শাস্তি না হলে অপরাধ বাড়ে। কাজেই সরকার প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবে এটাই প্রত্যাশা।