আধাঁর ঘর আলোকিত করে যখন ভূমিষ্ট হয় সন্তান, তখন বাবা-মা ও আত্মীয় -স্বজনের আনন্দ উল্লাসের শেষ থাকে না। কিন্তু সেই সন্তান যদি হয় প্রতিবন্ধী বা বিকৃত আকৃতির তাহলে চিন্তার শেষ থাকেনা বাবা-মার। তেমনি রংপুরে বুক জোড়া লাগানো দুই জমজ শিশু কন্যাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে এক দম্পতি।
পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের বিহারি (সোনালী মসজিদ সংলগ্ন) গ্রামের বাসিন্দা খলিল মিয়া ও হালিমা বেগম দম্পতির ঘরে বুক জোড়া লাগানো সন্তান জন্ম নিয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সন্তান দুটি সিজারের মাধ্যমে জন্ম হয়। সন্তান জন্মের খুশির বদলে খলিল মিয়ার ঘরে শুরু হয় আম্যাবর্ষার অন্ধকার। দিশেহারা হয়ে পড়েন ভ্যান চালক খলিল মিয়া। এক দিকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা, অন্য দিকে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা। অর্থের অভাবে সু-চিকিৎসা নিয়ে উভয় সংকটে খলিল মিয়া এখন ঘুরছেন অন্যের দ্বারে দ্বারে। ডাক্তাররা শিশু দুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফাট করলেও টাকার অভাবে বাড়িতেই রাখা হয়েছে তাদের। বর্তমানে শিশু দুটি ও তার মা কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাধু কুটিরঘাট এলাকায় নানা বাড়িতে অবস্থান করছে।
জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পেটের অংশ জোড়া লাগানো দুটি শিশু কন্যার জন্ম দেন ভ্যান চালক খলিল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম। জন্মের পর শিশু দুটির অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ঢাকা নিয়ে যাওয়া ও চিকিৎসার টাকা না থাকায়
বাড়িতে নিয়ে যান তারা।
কথা হয় খলিল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, বিয়ের তিন বছরের মাথায় প্রথম সন্তানের আগমনে খুঁশি হয়ে ছিলাম। কিন্তু বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর সেই হাঁসি মলিন হয়ে গেছে। স্ত্রীর সিজারসহ বাচ্চার চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা অন্যের কাছে ধার করেছি। এখন কি করবো জানিনা।
অশ্রুনয়নে তিনি বলেন, ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। তার উপর ধার করা টাকা পরিশোধ ও শিশু ও তার মাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া। চিকিৎসা তো দূরের কথা, গাড়ী ভাড়াই নেই। এমতবস্থায় সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেন তিনি।
নবজাতক দুইটির মা হালিমা বেগম বলেন, আল্লাহ আমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলছে। আমার সিজারের অংশ পেটের ভিতরে ইনফেকশন হয়েছে। হাটতে পারছিনা। ভ্যান চালিয়ে বাচ্চা দুটির দুধসহ ওষুধ কিনে খাওয়ার টাকা জোগার করতে পারছেনা আমার স্বামী। দিনমজুর বাবার বাসায় উঠেছি। তার উপর এই বাচ্চা দুটিকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীয় সুদৃষ্টি কামনা করছি।
খলিল মিয়ার এলাকাবাসী ও স্বজনরা জানান,
বাচ্চা দুটি জন্ম নেয়ার পর আমরা একে অপরে সহায়তা করে তাদের খাওয়া ও স্বল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। খলিল মিয়া ভাড়ায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। সে এখন চিন্তায় চিন্তায় অস্থির।
বাচ্চা ও মা উভয়ের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। আমরা চাই সরকারি ভাবে শিশু দুটিকে চিকিৎসা দেয়া হোক।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কিছু সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: বাবলু কুমার সাহা বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় 'কনজয়েন্ট টুইন' ভাবে জন্ম নেয়া নবজাতক শিশু দুটিকে রমেক সার্জারী বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানন্তর করা হয়েছে। খরচ বেশি হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজে রোগিটি পৌঁছাতে পারলে সেখানে সু-চিকিৎসা হবে। সেখানে যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে।