নৈতিকতার চর্চা ব্যতীত একটি সমাজ সুন্দর হতে পারে না। কিন্তু আমাদের সমাজ থেকে নৈতিকতা এখন নির্বাসিত। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সৈকত শহর কক্সবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ।
এ ঘটনায় পর্যটন শহরের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ধর্ষণের শিকার পর্যটকের অভিযোগ, তিনি ৯৯৯ নম্বরে কল করলে তাঁকে সরাসরি কক্সবাজার সদর মডেল থানার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। থানা থেকে তাঁকে সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, ‘৯৯৯ থেকে থানায় কেউ ফোন দেয়নি।’
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় বাসের চালক ও চালকের দুই সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত নভেম্বরে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক গার্মেন্টকর্মী। সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন? নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ২০১৭ সালে টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা আলোচিত হয়।
তাছাড়া কক্সবাজারে এটাই তো প্রথম পর্যটক ধর্ষণের ঘটনা নয়। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একজন অস্ট্রেলীয় নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে একটি রিসোর্টের দুজন কর্মচারী। আর ২০০৫ সালে বিদেশি এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মধ্যে কক্সবাজারের সুরক্ষিত একটি সৈকতে এ ধরনের ঘটনাগুলো নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না? অথচ এই পর্যটনকে আমাদের অর্থনীতিতে উদীয়মান খাত হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা তো এই সেক্টরে বিদেশিদের কাছেই না, সব পর্যটকের কাছেই খুবই খারাপ বার্তা দেবে। কক্সবাজার সৈকতের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করা দরকার।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত এসব খবরই প্রমাণ করে আমরা এক চরম অবক্ষয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। শহর থেকে গ্রামÑসর্বত্রই অবক্ষয় যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা হতাশাজনক। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সরকার সব ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর করবে এটাই প্রত্যাশা।