বাঙালির চিরকালের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে খেজুরের রস। শীত মানে পিঠা পুলির সময়। এই সময় বাজারে খেজুরের গুড়ের দেখা মেলে। স্বাদ ও গন্ধে যার তুলনা হয় না। আর এই গুড় তৈরি হয় খেজুরের রস থেকে। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে ইতিমধ্যেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গেছে। যারা রস সংগ্রহ করে তাদের গাছি বলে। পাবনার বেড়া উপজেলায় একসময় হরহামেশাই খেজুর গাছ ও গাছির দেখা পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যায় না। হঠাৎ দু’একজন রস বিক্রেতাকে রসের হাড়ি কাঁধে নিয়ে রস বিক্রি করতে দেখা যায়। সেই রসও খাঁটি নয় বলে ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে।
গাছিরা দিনের বেলায় খেজুর গাছে হাড়ি বাধে। সারারাত ফোঁটা ফোঁটা রস হাঁড়ির ভেতর জমা হয়। আর ভোর বেলায় সেই হাড়ি নামিয়ে রস সংগ্রহ করে। তারপর ঘুরে ঘুরে রস বিক্রি করে। বেড়া উপজেলার গ্রামগুলোতে আগে প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন আর আগের মত খেজুর গাছ দেখা যায় না। তাই গাছির সংখ্যাও কমে গেছে। হাতে গোণা কয়েকজন এই রস সংগ্রহে ব্যস্ত। মালিকের কাছ থেকে আগাম গাছ কিনে নেয়। তারপর পুরো শীত মৌসুমে রস বিক্রি করে। এ সময় এই রস বিক্রির টাকায় তাদের সংসার চলে। অন্য সময় বিভিন্ন শ্রমযুক্ত কাজে নিয়োজিত থাকে। প্রতি কেজি রস -৪০৩০ টাকায় বিক্রি হয়। আর এক গ্লাস রস পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়। গাছি মোবারক জানায়, প্রতিদিন সে ১০-১৫ কেজি রস সংগ্রহ করে। তবে রসের ক্রেতাদের অভিযোগ গাছিরা গাছ থেকে রস নামানোর পরেই রসের সাথে পানি এবং সেকারিন মেশান। এতে পরিমাণে বেশি হয়। তবে আসল রস মুখে দিলেই বোঝা যায়। কারণ এর গন্ধ এবং স্বাদ একেবারেই আলাদা হয়। সন্ধ্যা বেলাতেও রস নামায় গাছিরা। এই রস সাঁঝ রস নামে পরিচিত। এই খেজুরের রস থেকেই তৈরি হয় পিঠা,পায়েস। মিষ্টি রসের মিষ্টি পিঠা এই বাংলা ছাড়া আর কোথায় মিলবে। তবে খাঁটি রসের চাহিদা থাকলেও তা যেন দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে।