শীত জনিত কারণে লক্ষ্মীপুরে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে শুধু এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১হাজারের বেশি রোগী। আর গড়ে প্রতিদিন ১৫০/২০০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ১৫টি। আক্রান্তের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন,রোগীর চাপ বাড়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। একই অবস্থায় জেলার কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরগুলোর চিত্র। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শীত বাড়ার সাথে সাথে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েই যায়। পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে।
জানাগেছে, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় ঘোষনা করা হয়েও হলেও এর কার্যক্রম চলছে ১০০ শয্যার। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১হাজারের বেশি রোগী। রোগীর অনুপাতে হাসপাতালে বেড না থাকায় চিকিৎসা নিতে হাসপাতালের মেঝেতে অবস্থান নিয়েছেন রোগীরা। আর ১০০ শয্যার চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। পাশাপাশি ফ্লোরে ভর্তি দেয় হচ্ছে রোগীদের। এ ছাড়া প্রতিবেডে এক শিশুকে চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও বেড না থাকায় দুই শিশুকে এক বেডে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের দাবী স্থ্ানীয় এলাকাবাসীর।
সোমবার সকালে সরেজমিনে ১০০ শয্যার লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোরে শিশু রোগীর চাপ চোখে পড়ার মত। বেশিরভাগ রোগীই ছিল ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। শুধুৃ এটি আজকের চিত্র নয়,প্রতিদিনের চিত্র একই। গত ১০দিন ধরে এইভাবে রোগীর চাপ বাড়ছে। এ সময় কথা হয়, শিশু ফাতিন হাসনাতের মা আমেনা বেগমের সাথে,তিনি জানান, প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্তান্তের সংখ্যা। হাসপাতালে পা ফেলার মতো অবস্থা নাই।
একই সময় কথা হয় আরো দুই শিশুর স্বজন ও কামাল উদ্দিন ও জয়নাল আবেদিনের সাথে। তারা জানান, ঠান্ডা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। দুইদিন ধরে শিশুর ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে হাসপাতালে ভর্তি করাতে এসেছি। কিন্তু কোন শয্যা না থাকায় ফিরিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রতি বেডে তিন থেকে চার শিশুকে ভর্তি দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অনেককেই মেঝেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এতে করে শিশুরা আরো বেশি অসুস্থ হচ্ছে। একই কথা বলেন হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎ’সা নিতে আসা শিশু সাইমুন হোসেনের মা কুলছুম বেগমসহ অনেকেই।
অভিযোগ করে জানান, সদর হাসাপাতালে ভর্তির পর তাদের খাবার স্যালাইন ও সামান্য কিছু ওষুধ দেয়া হয়। বাকী ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়। এ ছাড়া তেমন চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছেনা।
সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. ইছমাইল হাসান জানান, ঠান্ডার কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। এটি সামনে আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তারপরও চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সাধ্যমতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসময়ে শিশুদের গরম কাপড় পরিধানসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
জেলা বেসরকারী প্যাথলজি মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, যেখানে প্রতি বেডে এক শিশু চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রতি বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ৩শিশু। এ ছাড়া বেড সংকুলন না হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু। বেডের তুলনায় রোগী ভর্তি হচ্ছে ১০গুন বেশি।
কমফোর্ট ডায়াগনষ্টিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন ও সিমি ফার্মেসীর মালিক লিটন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভিড় করছেন। হাসপাতালে রোগীর চাপে কোন ঠাঁই নেই। তবে অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে অন্যত্র পাষ্ট্রইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন জানান, প্রতিদিনই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। হাসপাতালে পা রাখার জায়গা নেই। হাসপাতালে হাঁটা চলা যায়না। বারান্দায় ও শিশু ওয়ার্ডের ফেøারে শিশুদের রাখা হচ্ছে। প্রতি বেডে এক শিশুকে চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও বেড না থাকায় দুই/তিন শিশুকে এক বেডে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গাদাগাদি করে চিকিৎসা নেয়ার কারণে রোগীর সাথে আসা স্বজনরাও আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে করে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে তাদের খাবার স্যালাইন ও সামান্য কিছু ওষুধ দেয়া হয়। বাকী ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়। এ ছাড়া তেমন চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছেনা।
সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. ইছমাইল হাসান জানান, ঠান্ডার কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। এটি সামনে আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তারপরও চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সাধ্যমতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসময়ে শিশুদের গরম কাপড় পরিধানসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গফ্ফার বলেন, প্রতিদিন আউটডোর চিকিৎসা নিচ্ছে ৭/৮শ রোগী। এর মধ্যে বেশিরভাগই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু। গড়ে ৪০/৫০জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে শুধু এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১হাজারের বেশি রোগী। গড়ে প্রতিদিন ১৫০/২০০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। অথচ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ১৫টি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পর্যাপ্ত ঔষধের ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমত চিকিৎসা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন অসুবিধা নেই বলে জানান তিনি।