সুন্দরবন সংলগ্ন পানগুছি নদীর তীরবর্তী বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সাড়ে ৩ লাখ মানুষ, দেড়লাখ গবাদি পশু ও আড়াই লাখ হাস-মুরগী জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হুমকীর মুখে পড়েছে। লবনাক্ততার কারণে ধান উৎপাদন বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে। উৎপাদন কমেছে সকল মৌসুমি সাক-সবজির।
বেড়িবাধ না থাকায় নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে দিনদিন পাল্টে যাচ্ছে উপজেলাটির আকৃতি। শতশত বিঘা ফসলি জমি চলে গেছে নদী গর্ভে। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ নদীর তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার বসতবাড়ি, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বহু জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বিলীন হয়েছে পানগুছির ভাঙ্গনে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী ভাঙ্গন ও লবন পানির প্রভাবে মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে।
ঘূর্ণীঝড়, জলোচ্ছাসে ভোগান্তির শিকার ৯০ হাজার গরুসহ দেড়লাখ গবাদি পশু ও আড়াই লাখ হাস-মুরগী। লবনাক্ততার কারণে প্রকৃতিক খাবার কমে গেছে এসব প্রাণীর। জলাবদ্ধতার কারণে গৃহপালিত পশুপাখি রোগ-বালাই ও অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। দেশীয় জাতের গরু, মহিষ, হাঁস ও মুরগীর সংখ্যা কমেছে আশংকাজনক হারে।
মাঠ ও খালবিল থেকে আত্মঘাতি ড্রিল ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, নিয়ন্ত্রণহীন ইটভাটা, করাতকল, খাল ভরাট ও দখল করে মাছের ঘের করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ভয়াবহ ক্ষতির মুখোমুখি এ উপজেলার সাধারণ ক্ষেটে খাওয়া মানুষ। এ উপজেলার বিভিন্ন খালের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৭টি স্লুইসগেট রয়েছে। তবে এর একটিও সচল নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিফাত আল মারুফ বলেন, এ উপজেলায় আবাদি জমি রয়েছে ৩৩ হাজার ১৫০ হেক্টর। তবে লবনাক্ততার কারণে বহরবুনিয়া, বারইখালী ও জিউধরা ইউনিয়নে ধান ফসল উৎপাদন কমে এসেছে। স্থায়ী ভেরিবাঁধ হলে কমপক্ষে ১ হাজার হেক্টর ফসলী জমিতে ধান আবাদ বৃদ্ধি পাবে। স্লুইসগেটগুলো সচল করে স্থায়ী জনবলের মাধ্যমে রক্ষাণাবেক্ষনের দাবি জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপদাপন্ন পরিবারগুলোর সাথে কাজ করছে এমন একটি বেসরকারি সংস্থা ‘ডরপ’ এর পানিই জীবন প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারি মো. শওকত চৌধূরী বলেন, প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে অঞ্চল ভিত্তিক বাজেট পরিকল্পনার প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় এ উপজেলায় দুর্যোগ সহনীয় ৮৩টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধির জন্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বাস্তুভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে খুঁজে বের করে তাদেরকে সরকারিভাবে পূনর্বাসন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একশ বছরের পুরাতন খালগুলো চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ভরাট ও বেদখল থাকা খালগুলো অবমুক্ত করারর কাজ শুরু হয়েছে। সুপেয় পানির উৎস্য, কের্ডীয় খাস পুকুরগুলো পুনঃখননের কাজ চলছে। এ বিষয়ে জেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও বিএডিসিসহ ৪টি দপ্তরই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।