খুলনার পাইকগাছায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতিতে। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায়, যেন হলুদের সমারোহ। গত বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও উপজেলার প্রায় প্রতিটি মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে সরিসার আবাদ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে কৃষক সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন। পাশাপাশি কৃষি অধিদপ্তরও। উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সর্বমোট ১৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া এলক্ষে বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে সরিষার বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে ফলে গত বছরের তুলনায় এবার আবাদও বেড়েছে। কৃষকরা জানায়, উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকায় চাষাবাদ অনেকটা প্রকৃতি ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আগাম মাটিতে জো আসলেও উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ততা নিচু মাটিতে জো আসতে খানিকটা দেরি হয়। ফলে সময় মত মাটিতে জো না আসায় উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ তুলনামূলক কিছুটা দেরিতে হয়েছে। উপজেলার ১০টি মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে বাকি ৬টির তুলনায় সরিষার আবাদ বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া উপজেলার চাঁদখালী, গড়ইখালী ও দেলুটিতে সামান্য কিছু জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। স্বল্প সময়, কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে এই ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। পরে সরিষার জমিতে কম খরচে বোরো আবাদ করেন চাষিরা। ফলে সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে ইরি-বোরো আবাদের খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন তারা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরিষা ক্ষেত পরিদর্শনে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সর্বমোট ১৯০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বারি জ ১৪-১৫-১৭-১৮ বিনা-৯ ও ৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছে। ইতোমধ্যে সরিষার ফুল ঝরে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ফলে কৃষকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। উপজেলার সলুয়া গ্রামের সহিদ ও গোপালপুর গ্রামের সরিষা চাষী আবদুস সামাদ বলেন, চলতি মৌসুমে তাদের ক্ষেতের আবাদকৃত সরিষা আশানুরূপ ভাল হয়েছে। আর ইতো মধ্যে ফুল ঝরে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তবে মৌসুমের শুরুতে সরিষার দাম ভাল পাওয়া গেলেও পরে তেমন আর দাম পাওয়া যায় না। সংরক্ষণ করে রাখতে পারলে দাম বেশ ভাল পাওয়া যেত। তবে তাদের ক্ষুদ্র কৃষকের পক্ষে ফসল ধরে রাখার সম্ভব হয় না বলেও আক্ষেপ করেন তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরিষা একটি আগাম ফসল। তবে চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটতে দেরি হওয়াতে সরিষা আবাদে কৃষকদের কিছুটা দেরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকরা যদি আগাম জাতের ধান চাষ করে তাহলে সময়মত ধান কাঁটার পর সরিষা চাষে পুরো সময় পাবে। তাই কৃষকদের আগাম জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে এবছর উপজেলায় সরিষার আবাদ গত বছরের তুলনায় আরও ভালো হয়েছে। যদিও কয়েকদিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজমান তবুও বড় ধরণের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার আশানুরূপ বাম্পার ফলন হবে।