নাম তার টিটব বিশ্বাস। কিন্তু কাজে মিলেছে সে লোকজনের সাথে করেছে চরম বিশ্বাস ঘাতকতা। সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অনেকের সহায়-সম্পত্তি ও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কোর্টে একটি মামলা ও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা ওই প্রতারককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেছেন।
উপজেলার হাড়িয়ার ঘোপ গ্রামের মৃত অমরেন্দ্র ম-লের স্ত্রী অনিতা ম-ল কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, সরল বিশ্বাসে জমির সব কাগজপত্র তুলে দিয়েছি উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত নিতাই বিশ্বাসের ছেলে সাংবাদিক নামধারী টিটব বিশ্বাসের হাতে। সে নিজেকে বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেছে তোমাদের বেহাত হয়ে যাওয়া সব সম্পত্তি উদ্ধার করে দেব। কিন্তু শর্ত একটা সমস্ত সম্পত্তি তার নামে পাওয়ার অব এ্যাটার্ণি করে দিতে হবে। তার কথায় রাজি হয়ে আমার একমাত্র ছেলে অশোকের সব সম্পত্তি টিটব বিশ্বাসের নামে পাওয়ার অব এ্যাটার্ণি করে দেই। এখন সে রূপ বদলে ওই সম্পত্তি আমাদের ফেরত না দিয়ে বিক্রি করা শুরু করেছে। ওই সম্পত্তি উদ্ধার করতে না পারলে আমাদের এখন রাস্তায় নামা ছাড়া কোন উপায় নেই। ফসলি জমিসহ বসবাসের সাড়ে তিন বিঘা জায়গাও তার নামে ও তার স্ত্রীর নামে লিখে নিয়েছে। মরে গেলে মাটি দেওয়ার জায়গা টুকু রেখে যাইনি প্রতারক টিটব বিশ্বাস।
অনিতা ম-লের ছেলে অশোক ম-ল জানান, টিটব বিশ্বাস প্রথমে তার কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর নেয়। পরে বিভিন্ন ভুল বুঝিয়ে স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তার স্থাবর-অস্থাবর সব পাওয়ার অবএ্যাটার্ণি করে নিয়েছে। এ ছাড়া তার একটি মোটর সাইকেল ছিল সেটিও সে কৌশলে নিজের নামে কাগজপত্র করে নিয়েছে। জমির কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে তার মায়ের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব টাকা বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে সুদে-কর্যে এনে দেই।এখন আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোন উপায় নেই।
অশোকের স্ত্রী তিথী ম-ল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, টিটব বিশ্বাস একজন অসৎ প্রকৃতির লোক প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে তার আচরণ কথা বার্তায় টের পেয়েছি সে একজন প্রতারক। টিটব বিশ্বাস আমাদের বাড়িতে এসে প্রতারণার মাধ্যমে আমাদের সম্পত্তিই শুধু গ্রাস করে ক্ষ্যান্ত হয়নি। আমি যেন তার বিবাহিত স্ত্রী সে এমন সব আচরণ করত আমার সাথে। আমাকে নানা সময় কু-প্রস্তাবসহ সে আমাকে দু’লাখ টাকা নিয়ে ওই বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেছিল। কিন্তু আমি কখনো রাজি হয়নি।
টিটবের প্রতারণা শুধু এখানেই শেষ নয়, দূর্গাপুর গ্রামের মাখন রায় জানায়, তিনি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিন্তু যুদ্ধের পর কাগজপত্র হারিয়ে যায়। টিটব বিশ্বাসের সাথে তার ছেলের পরিচয় হয়। সেই সূত্র ধরে তাদের বাড়িতে এসে সে বলে মুক্তিযুদ্ধের হারিয়ে যাওয়া সব কাগজপত্র তাকে জোগাড় করে দিবে। এই বলে বিভিন্ন সময় প্রায় আড়াই লাখ টাকা সে হাতিয়ে নিয়েছে।
কুরাল তলা গ্রামের বিনয় বিশ্বাস জানান, ২০১২ সালে তার শিশুপুত্র বিশ্বজিৎ বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ হয়। অপহরণকারীদের দাবিকৃত টাকা দিয়েও ছেলেকে ফেরত পাননি। পরে থানায় আসা-যাওয়ার সময় টিটব বিশ্বাসের সাথে তার পরিচয় হলে সে জানায়, ওসিকে টাকা না দিলে ছেলে উদ্ধার হবে না। টাকা ছাড়া পুলিশ তোমার ছেলেকে উদ্ধার করে দেবে বলে ভেবেছ? টিটবের কথামতো ছেলের জন্য পাগলপ্রায় দিনমজুর বিনয় বিশ্বাস লোকের কাছ থেকে ধার এনে ১৫ হাজার টাকা পুলিশকে দেওয়ার জন্য তার হাতে তুলে দেয়। কিন্তু পরে জানতে পারেন পুলিশকে সে কোন টাকা না দিয়ে প্রতারণা করেছে।
এ বিষয়ে টিটব বিশ্বাস সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি অশোকের সম্পত্তি টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। এ ছাড়া তার কাছে জমির ক্রয়কৃত মূল্যের টাকা না থাকায় অশোক ম-লের সম্মতিক্রমে ৫ একর জমি পাওয়ার অব এ্যাটার্ণি করে নিয়েছেন।
চিতলমারী থানার ওসি এ এইস এম কামরুজ্জামান জানান, টিটব বিশ্বাসের ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।