দিঘলিয়ার ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতিতে তিনটি বাঁধা। এ সকল বাঁধা অপসারণ করতে ব্যর্থ হলে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর এ সকল অন্তরায়ের পিছনে কোনো অশুভ শক্তি কাজ করছে কিনা এমন সব আশংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় জট খুলতে শুরু করেছে। গত ৬ মার্চ রোববার খুলনা জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে ভূমি মালিকদের ধারা ৪ এর (১) উপধারা মোতাবেক আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য যে, ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ২০২০ সালের ২৪ মে খুলনাবাসীর দীর্ঘ আকাক্সিক্ষত এবং প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ঐদিন সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন (সরকারী খাস জমির উপর) ঈদগাহের মধ্যে ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ)। গত সাড়ে ১৫ মাসে কাজের অগ্রগতি খুবই হতাশা ব্যঞ্জক। সেতুর কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ার কারণ হিসেবে শুরু থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়াকে দায়ী করে আসছেন।
ঐদিন সেতুর পূর্ব পার্শ্বে দিঘলিয়ার নগরঘাট ফেরিঘাট থেকে উপজেলা সদর সংলগ্ন কুকুর মারা পর্যন্ত প্রায় ৪ ‘শ মালিকানা জমির মালিকদের নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশ জারির নম্বর ১৪৫৫(২২) খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল. এ. (সাঃ) শাখা কেস নং -০৫/২০২১-২২ তাং ০৬/০৩/২২। নোটিশে উল্লেখ করা হয় নিম্ন তফশীল বর্ণিত সম্পত্তি খুলনা সড়ক বিভাগের অধীন (দিঘলিয়া) রেলিগেট -আড়ুয়া-গাজীরহাট- তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) ১ম কিঃ মিঃ-এ ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ও জনস্বার্থমূলক উদ্দেশ্যে প্রয়োজন। সেহেতু এক্ষণে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নং আইন) এর ৪ ধারার অধীনে এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য নোটিশ জারি করা হইল যে, বর্ণিত সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করা হইয়াছে। ওই সম্পত্তিতে স্বার্থবান যে কোন ব্যক্তি এই নোটিশ জারির পরবর্তী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত সম্পত্তির অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট আপত্তি (যদি থাকে) দায়ের করতে পারবেন। ১০/০৩/২০২২ তারিখ হতে তফশীল বর্ণিত সম্পত্তির যৌথ তদন্ত হবে। যৌথ তদন্তকালে ওই সম্পত্তির মালিক বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। জেলা প্রশাসক খুলনার পক্ষে গত ১ মার্চ নোটিশে স্বাক্ষর করেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা। গত রোববার বিকালে উপজেলা সদর চৌরাস্তার মোড়ে জমির মালিকদের নিকট নোটিশ হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডঃ. মসিউর রহমানের দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তা যথাক্রমে এমএ রিয়াজ কচি ও মোঃ হাফিজুর রহমান, দিঘলিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলী রেজা বাচা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রসেস সার্ভেয়ার মোঃ সরোয়ার শে। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২৬ নভেম্বর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬’শ ১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। গত সাড়ে ১৫ মাসে ৩ পিলারের ১০ টি করে ৩০ টি টেস্ট পাইলিং ছাড়া অন্য কোন কাজ হয়নি। কাজের অগ্রগতি ৩ দশমিক ১ শতাংশ।সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর উপ-সচিব ফাহমিদা হক খান ভৈরব সেতুর কাজের এ হতাশা ব্যঞ্জক অগ্রগতির কথা জানতে পেরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।